
আইপিএল মানেই কি শুধু ক্রিকেট? কখনোই না। আইপিএল মানেই আবেগ, উত্তেজনা, হাই ভোল্টেজ ম্য়াচে কোটি কোটি ক্রিকেট প্রেমীর নিঃশ্বাস আটকে থাকা। শেষ বল পর্যন্ত গ্যালারির গর্জন। এই মরসুমেও এমন কিছু ম্যাচ দেখা গিয়েছে। তবে অতীতের কয়েকটি ম্যাচও ভোলা যাবে না। যেগুলির শেষের দিকে সত্যি সত্যিই দর্শকদের নিঃশ্বাস আটকে যাওয়ার জোগাড় হয়েছিল। আইপিএলের ইতিহাসের সবচেয়ে রুদ্ধশ্বাস বা বলা যায়, একেবারে হার্ট-অ্যাটাক লেভেলের পাঁচটা ম্যাচ নিয়ে আলোচনা।
আইপিএল ২০২৩-এর ফাইনাল। গুজরাট টাইটান্স বনাম চেন্নাই সুপার কিংস। প্রথমে ব্যাট করে টাইটান্স ২১৪ রানের লক্ষ্য দেয় চেন্নাইকে। বৃষ্টির কারণে ওভার কমে। টার্গেট বদল হয়। ১৫ ওভারে ১৭১ রান তাড়া করতে হত চেন্নাইকে। রান তাড়ায় ঋতুরাজ গায়কোয়াড়, ডেভন কনওয়েরা ভালো খেললেও ধোনির গোল্ডেন ডাক ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। শেষ ওভারে বোলিং করছিলেন মোহিত শর্মা। শেষ দু’বলে প্রয়োজন ছিল ৯ রান। সেই সময় জাডেজার একটি ছয় এবং একটি চার। ব্যাস পঞ্চমবার আইপিএল ঘরে তোলে চেন্নাই।
২০১৭ সালের ফাইনালও ভোলার নয়। হায়দরাবাদে ম্যাচ। মুখোমুখি মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ও রাইজিং পুনে সুপার জায়ান্টস। স্লো পিচ। ব্যাট করা কঠিন। লো-স্কোরিং ফাইনাল। রাইজিং পুনে সুপার জায়ান্টসের বিরুদ্ধে সর্বসাকুল্য়ে ১২৯ রান করে মুম্বই। বাউন্ডারি নয়, বরং খুচরো রানেই এগোচ্ছিল পুনে। উইকেট হাতে রেখে খেলাটিকে অত্যন্ত গভীরে নিয়ে শেষ করার পরিকল্পনা। শেষ ওভারে পুনের প্রয়োজন ছিল ১১ রান এবং হাতে ৭ উইকেট। শেষ ওভারে দারুণ বোলিং করে দুটি উইকেট তুলে নেন মিচেল জনসন। শেষ বলে ৪ রানের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু তা আর হয়ে ওঠেনি। মাত্র ১ রানে ম্য়াচ জিতে চ্যাম্পিয়ন মুম্বই।
এই তালিকা থেকে ২০২৩ আইপিএলের গুজরাট বনাম কেকেআর ম্যাচটিকে কোনও ভাবেই বাদ দেওয়া যায় না। প্রথমে ব্য়াট করে গুজরাট ২০৫ রানের লক্ষ্য দেয় কলকাতাকে। শুরুটা ভালো না হলেও মিডল অর্ডার পরিস্থিতি সামাল দেয়। কিন্তু, রশিদ খানের হ্যাটট্রিক টাইটান্সকে ম্য়াচে ফেরায়। শেষ ২১ বলে ৫০ রান প্রয়োজন। ক্রিজে স্পেশালিস্ট ব্যাটার বলতে রিঙ্কু সিং। ম্য়াচ এগোতে থাকে। শেষ ওভারে রিঙ্কুকে স্ট্রাইক দেন উমেশ যাদব। শেষ ৫ বলে দরকার ২৮ রান। সবাই ধরেই নিয়েছিল কেকেআরের জয়ের কোনও সম্ভাবনাই নেই। ম্যাজিক হল। যশ দয়ালের বোলিংয়ে ৫ বলে ৫টি ছক্কা মেরে নিজের হাতেই জয় লেখেন রিঙ্কু সিং।
যাওয়া যাক ২০১৮-র আইপিএলে। চেন্নাইয়ের ঘুরে দাঁড়ানোর ম্যাচ। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে ১৬৬ রান তাড়া করতে নেমেছিলেন ধোনিরা। একটা সময় ইয়েলো আর্মির ১১৮ রানে ৮ উইকেট ছিল। চেন্নাইয়ের সম্ভাবনা ক্ষীণ। কিন্তু, ডোয়েন ব্র্যাভোর ৩০ বলে ৬৮ রান। যখন আউট হন, শেষ ওভারে চেন্নাইয়ের প্রয়োজন আর ৭ রান। ক্রিজে কেদার যাদব ও ইমরান তাহির। চোটের কারণে ছুটতেও পারছিলেন না কেদার। সঠিক বলের জন্য অপেক্ষা করেন। পেয়েই ফাইন লেগের উপর দিয়ে মারলেন। ১ উইকেটে অসাধারণ জয় ছিনিয়ে নেয় চেন্নাই।
আরও একটা ফাইনালে নজর দেওয়া যাক। আইপিএলের অন্যতম সেরা ২০১৯-এর ফাইনাল। হায়দরাবাদে চেন্নাইকে ১৫০ রানের টার্গেট দেয় মুম্বই। রান তাড়ায় চেন্নাইয়ের দুর্দান্ত শুরু। এরপরেই উইকেটের পতন। বিনা উইকেটে ৭০ থেকে ৮২ রানে ৪ উইকেট! হাঁটুর চোট নিয়েই শেন ওয়াটসন অসাধারণ খেলেন। হাঁটু থেকে রক্ত ঝরে, মাঠ ছাড়েননি ওয়াটসন। ম্য়াচে টিকিয়ে রাখেন চেন্নাইকে। ১ বল বাকি থাকতে আউট শেন। শেষ বলে আর দু’রান করে জেতা হয়নি চেন্নাইয়ের। চেন্নাইয়ের মুখের গ্রাস কেড়ে নন ইয়র্কার কিং মালিঙ্গা।