Jemimah Rodrigues: ধর্মের কাছে কোণঠাসা ‘ক্রিকেট ধর্ম’, জিমখানা ক্লাবের ধর্মীয় বিতর্ক অতীত করে দিলেন জেমাইমা!

বছর ঘুরতে সময়ও বদলেছে জেমির। খার জিমখানা ক্লাব বিতর্কের পর প্রায় এক বছর কেটে গিয়েছে। জেমাইমা যখন বিশ্বকাপের মঞ্চে অনবদ্য পারফর্ম করে দলকে ফাইনালে তুলে দিয়েছেন, সেই সময় তাঁর অনেক সমালোচকই স্টান্স বদলেছেন। তাঁদের গলায় এখন প্রশংসার সুর।

Jemimah Rodrigues: ধর্মের কাছে কোণঠাসা ক্রিকেট ধর্ম, জিমখানা ক্লাবের ধর্মীয় বিতর্ক অতীত করে দিলেন জেমাইমা!
ধর্মের কাছে কোণঠাসা 'ক্রিকেট ধর্ম', জিমখানা ক্লাবের ধর্মীয় বিতর্ক অতীত করে দিলেন জেমাইমা!Image Credit source: PTI

Oct 31, 2025 | 6:28 PM

জাতপাতের বেড়াজালে ক্রিকেটকে বাঁধা যায়? এটা শুনে অনেকেই বলতে পারেন, এ আবার কী কথা। খেলা তো খেলাই, ভরপুর বিনোদন, তাতে আবার জাতের আধার এল কোথা থেকে? এই জাত, ধর্ম নিয়েই একটা সময় মুণ্ডুপাত করা হয়েছিল ভারতের মহিলা টিমের ক্রিকেটার জেমাইমা রড্রিগেসকে (Jemimah Rodrigues)। আর এখন তাঁকেই মাথায় তুলে নিচ্ছেন সেই সমালোচকরা। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ১৩৪ বলে নট আউট ১২৭ রানের অবিশ্বাস্য ইনিংস খেলেন মহারাষ্ট্রের মেয়ে। কার্যত একাই ওডিআই বিশ্বকাপের (ICC ODI World Cup) ফাইনালে তুলেছেন ভারতকে। সেই জেমিকে নিয়ে কেন বিতর্ক হয়েছিল?

দ্য ওয়্যারের তুলে ধরেছে একটি পুরনো ঘটনা। গত বছর ভারতের মহিলা ক্রিকেটার জেমাইমা রড্রিগেসকে ঘিরে তৈরি হয়েছিল এক বিতর্ক। মুম্বইয়ের অন্যতম পুরনো এবং মর্যাদাপূর্ণ ক্লাব জিমখানা (Khar Gymkhana)। তারা জেমিকে ক্রিকেট জগতে তাঁর সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে সাম্মানিক সদস্যপদ প্রদান করেছিল। পরে তারা জেমির আজীবন সদস্যপদ বাতিল করে দেয়। প্রশ্ন হল কেন জিমখানা জেমির সদস্যপদ বাতিল করেছিল?

সেই সময় ক্লাবের কয়েকজন সদস্য অভিযোগ তোলেন, জেমাইমার বাবা ইভান রড্রিগেস তাঁর মেয়ের সদস্যপদ ব্যবহার করে ক্লাবের হলঘরকে ‘ধর্মীয় কার্যকলাপ’ এবং ‘ধর্মান্তরকরণ’ সংক্রান্ত সভার জন্য ব্যবহার করছেন। আসলে জিমখানার নিয়মে ক্লাবের অভ্যন্তরে ধর্ম প্রচার বা এই ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা নিষিদ্ধ। অভিযোগ ওঠে যে, ইভান রড্রিগেস ‘ব্রাদার ম্যানুয়েল মিনিস্ট্রিজ’-এর ব্যানারে প্রায় ৩৫টির মতো ধর্মীয় সভার আয়োজন করেছিলেন।

সদস্যদের আপত্তির পর এবং ক্লাবের বার্ষিক সাধারণ সভাতে আলোচনার ভিত্তিতে সর্বসম্মতিক্রমে জেমাইমা রড্রিগেসের আজীবন সদস্যপদ বাতিল করে দেয়। ক্লাব কর্তৃপক্ষের দাবি, নিয়ম ভঙ্গের কারণেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেই সময় জেমির বাবা ইভান রড্রিগেস কিন্তু যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন। তিনি জানান, তাঁরা ক্লাবের সমস্ত নিয়ম মেনে এবং কর্তৃপক্ষকে জানিয়েই সভার জন্য হল ভাড়া নিয়েছিলেন। তা ছাড়া যে সভাগুলি আয়োজন করা হয়, তা ‘ধর্মান্তরকরণ সভা’ ছিল না।

ক্লাবের তৎকালীন সভাপতি বিবেক দেবনানি সেই সময়ের অভিযোগ করেছিলেন, ক্লাবের আসন্ন নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে জেমাইমা এবং তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে এই বিতর্ক তৈরি করা হয়েছে। এই ঘটনার পর বেশ কয়েকজন সোশ্যাল মিডিয়ায় জেমাইমা রড্রিগেস এবং তাঁর পরিবারের ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে তীব্র বিদ্বেষমূলক ও আক্রমণাত্মক প্রচার শুরু করেন। ২০২২ সালে ওডিআই বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়েছিলেন জেমাইমা রড্রিগজ। এরপর গত বছর ক্লাবের এই বিতর্কে যখন জেমাইমা জড়িয়ে পড়েন, তখন ক্রিকেট মহলে অনেকেই বলাবলি করতে থাকেন, সময়টা তাঁর ভাল কাটছে না।

বছর ঘুরতে সময়ও বদলেছে জেমির। খার জিমখানা ক্লাব বিতর্কের পর প্রায় এক বছর কেটে গিয়েছে। জেমাইমা যখন বিশ্বকাপের মঞ্চে অনবদ্য পারফর্ম করে দলকে ফাইনালে তুলে দিয়েছেন, সেই সময় তাঁর অনেক সমালোচকই স্টান্স বদলেছেন। তাঁদের গলায় এখন প্রশংসার সুর। দ্য ওয়্যারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, যাঁরা আগে বিদ্বেষ ছড়িয়েছিল, তাঁদের অনেকেই এখন জেমাইমার সাফল্যে আনন্দ প্রকাশ করছে। এটাই প্রমাণ করে, একজন খেলোয়াড়ের ব্যক্তিগত ধর্মীয় বিশ্বাস বা পারিবারিক বিতর্ক সত্ত্বেও তাঁর প্রতিভাই দেশের আসল সম্পদ।