IPL 2022: বাটলারের সেঞ্চুরি, চাহালের ফাইফারে নাইটবধ রাজস্থানের

লড়াই করেও জেতা হল না শ্রেয়সদের। হারের হ্যাটট্রিক কেকেআরের।

IPL 2022: বাটলারের সেঞ্চুরি, চাহালের ফাইফারে নাইটবধ রাজস্থানের
IPL 2022: বাটলারের সেঞ্চুরি, চাহালের ফাইফারে নাইটবধ রাজস্থানের
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Apr 19, 2022 | 12:15 AM

রাজস্থান রয়্যালস ২১৭-৫ (২০ ওভার)

কলকাতা নাইট রাইডার্স ২১০ (১৯.৪ ওভারে)

সঙ্ঘমিত্রা চক্রবর্তী

‘করব, লড়ব, জিতব রে’…. নাইটরা আজ করল, লড়ল তো বটে, কিন্তু জিততে পারল না। সঞ্জুদের বিরুদ্ধে আইপিএল-২০২২ (IPL 2022) এর ৩০তম ম্যাচে দুরন্ত লড়াই করলেন কেকেআর (Kolkata Knight Riders) অধিনায়ক শ্রেয়স, নাইট ওপেনার অ্যারন ফিঞ্চরা। তবে জস বাটলারের সেঞ্চুরির যোগ্য জবাবটা দিতে পারলেন না নাইট নেতা শ্রেয়স আইয়ার। রানের পাহাড় তাড়া করতে নেমে প্রথম থেকেই কেকেআর অধিনায়ক শ্রেয়স তাঁর দায়িত্বটা যথাযথ ভাবে পালন করে গেলেন। কিন্তু তাও হারের হ্যাটট্রিক হয়ে গেল কিং খানের দলের। চাহালের হ্যাটট্রিক ও আইপিএল-২০২২ এর প্রথম ফাইফার পুরো ছবিটাই বদলে দিল। এই জন্যই রাজস্থানে (Rajasthan Royals) রয়েছে বর্তমানে অরেঞ্জ ক্যাপ ও পার্পল ক্যাপের দুটোই। আইপিএলের মেগা শো-তে সবথেকে ঝলমলে নামটা নিঃসন্দেহে জস বাটলার। চলতি আইপিএলে দুটো সেঞ্চুরি করে ফেললেন তিনি। বাটলার যেন ব্যাট করতেই নামছেন প্রতিপক্ষ বোলারদের খুন করার জন্য। খুনে মেজাজে ব্যাট করে ম্যাচ জেতানোর কারিগরও হয়েছেন জসি।

টসে জিতে ব্র্যাবোর্নে শুরুতে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন নাইট অধিনায়ক শ্রেয়স আইয়ার। দুরন্ত শুরু করেন রাজস্থানের ওপেনিং জুটি। পাওয়ার প্লে-র মধ্যে কোনও উইকেট না হারিয়ে ৬০ রান তুলে নেয় জস বাটলার-দেবদত্ত পাড়িক্কাল জুটি। উমেশ যাদব-শিবম মাভিরা কার্যত কোনও চাপে ফেলতেই পারেননি বাটলারদের। রীতিমতো আক্রমণাত্মক মেজাজে ব্যাট চালিয়ে যেতে থাকেন বাটলার। অপর প্রান্তে থাকা দেবদত্ত ধীরেসুস্থে খেলছিলেন। বলা ভালো দর্শকরা যেমন গ্যালারি থেকে উপভোগ করছিলেন বাটলারের চার-ছক্কার মেগা শো, ক্রিজে থেকেই সেটা চাক্ষুষ করছিলেন দেবদত্ত। উইকেটের অপেক্ষা করতে থাকা বেগুনি শিবিরকে অবশেষে দশম ওভারে এসে সাফল্য দেন সুনীল নারিন। ১৮ বলে ২৪ রান করে সাজঘরে ফিরে যান পাড়িক্কাল। গত মরসুমে আরসিবির জার্সিতে যতটা ছন্দে দেখা যেত পাড়িক্কালকে, ততটা ছন্দে গোলাপি জার্সিতে দেখা যাচ্ছে না কেরালার এই প্লেয়ারকে।

পাড়িক্কাল ফিরলে মাঠে আসেন রাজস্থানের অধিনায়ক। দ্বিতীয় উইকেটে ওঠে ৬৭ রান। ১৯ বলে গুরুত্বপূর্ণ ৩৮ রান করে যান সঞ্জু। ৩টি চার ও ২টি ছয় ছিল ক্যাপ্টেন সঞ্জুর ঝোড়ো ইনিংসে। ১৬ ওভারের দ্বিতীয় বলে রাসেল তুলে নেন সঞ্জুর গুরুত্বপূর্ণ উইকেট। তবে বাটলার প্রতিটা ম্যাচেই মাঠে নামছেন ঝুড়ি ঝুড়ি রান করছেন, আর ম্যাচ জিতিয়ে যাচ্ছেন। চলতি আইপিএলে প্রথম সেঞ্চুরিটা এসেছিল বাটলারের ব্যাট থেকেই। সেদিন প্রতিপক্ষ ছিল মুম্বই। আর আজ নাইটদের বিরুদ্ধে এই মরসুমে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি করলেন ইংল্যান্ডের তারকা প্লেয়ার। ১৭তম ওভারে এসে প্যাট কামিন্সের বল গ্যালারিতে পাঠিয়ে শতরান পূর্ণ করেন বাটলার। তবে সেঞ্চুরি করার পর বেশিক্ষণ আর ক্রিজে থাকা হয়নি বাটলারের। ৬১ বলে ১০৩ রান করে প্যাট কামিন্সের শিকার হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন বাটলার। ৫টি ছয় ও ৯টি ৪ দিয়ে বাটলার সাজিয়েছিলেন তাঁর চোখধাঁধানো শতরানের ইনিংস।

এরপর রিয়ান পরাগ (৫) ও করুণ নায়ার (৩) শুধু এলেন আর গেলেন। বাউন্ডারি লাইনের সামনে রিয়ান পরাগের দুরন্ত ক্যাচ নেন শিবম মাভি। কামিন্সের বুদ্ধিমত্তার পরিচয় পাওয়া গেল এই ক্যাচে। রিয়ান-করুণ কিছু না করতে পারলেও শেষবেলায় ক্যামিও ভূমিকা পালন করে গেলেন শিমরন হেটমায়ার। ১৩ বলে ২৬ রানে নট আউট থেকে মাঠ ছাড়েন তিনি। শেষ অবধি ৫ উইকেট হারিয়ে ২১৭ রানে গিয়ে থামে রাজস্থান।

সামনে রানের পাহাড় ছিল নাইটদের। পাহাড়প্রমাণ টার্গেট সামনে থাকলে যে কোনও দল প্রতিটা রানের জন্য ঝাঁপাবে। সেখানে কিনা প্রথম বলেই সুনীল নারিন রান আউট। যে রানটা তিনি নিতে পারবেন না নারিন জানালেনই না ফিঞ্চকে। তাঁকে দেখে যেমন মনে হল, তিনি চাইছিলেন ওপেনিংয়ে নেমেছেন তো ঠিকই। কিন্তু যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ড্রেসিংরুমে ফিরে যেতে। বল হাতে আজ নারিনের ২টো উইকেট আছে বলেই কিছুটা রক্ষে। না হলে নারিনের মনোভাবকে নিয়ে প্রশ্ন উঠলে অবাক হওয়ার কিছু নেই।

২১৮ রানের পাহাড়প্রমাণ টার্গেট তাড়া করতে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় নাইটরা। আজ ওপেনিংয়ে অ্যারন ফিঞ্চের সঙ্গে নেমেছিলেন সুনীল নারিন। গোল্ডেন ডাক হয়ে মাঠ ছাড়েন তিনি। আজ ব্র্যাবোর্নে রাসেল ঝড় তো ওঠেনি। কিন্তু যে ঝড় তুলেছিলেন জস বাটলার তার উত্তর দিতে থাকেন ফিঞ্চ-শ্রেয়সরা। ওপেনিং জুটি সুপার ফ্লপ হওয়ার পর ম্যাচের হাল ধরেন ফিঞ্চ-শ্রেয়স। দ্বিতীয় উইকেটে ওঠে ১০৮ রান। নবম ওভারে ছন্দে থাকা ফিঞ্চকে সাজঘরে পাঠান প্রসিধ কৃষ্ণা। ২৮ বলে ৫৮ রান করে যান তিনি। এরপর ফিঞ্চ ফিরলে রানার সঙ্গে জুটি বাঁধেন শ্রেয়স। রানা-শ্রেয়স মিলে ৪১ রান তোলেন। এরপর ১৩ ওভারে রানাকে প্যাভিলিয়নে ফেরান যুজবেন্দ্র চাহাল। তখন কেই বা জানত কী অপেক্ষা করছে চাহালের স্পেলে। আজ রাসেলকে মারার কোনও সুযোগই দেননি। একটাই উইকেট পেয়েছেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। আর সেই উইকেটটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল, তা পিঙ্ক আর্মির সকলেই জানেন।

১৭তম ওভারের প্রথম বলে ভেঙ্কটেশ আইয়ারের উইকেট তুলে নেন যুজবেন্দ্র চাহাল। এর পর একটা ডট বল। পরেরটা ওয়াইড। তার পর তিন বলে তিন উইকেট নিয়ে চলতি আইপিএলের প্রথম হ্যাটট্রিক করলেন যুজবেন্দ্র চাহাল। ভেঙ্কিকে ফেরানোর পর দুরন্ত ছন্দে থাকা নাইট নেতা শ্রেয়সকে সাজঘরের রাস্তা দেখান যুজি। ৫১ বলে ৮৫ রানের অধিনায়কোচিত ইনিংস খেলে গেলেন শ্রেয়স। যাতে ছিল ৭টি চার ও ৪টি ছয়। শ্রেয়সকে প্যাভিলিয়নে ফেরানোর পর শিবম মাভি ও প্যাট কামিন্সকে শূন্যে ফেরান। তবে এখানেই শেষ হয়নি কেকেআরের লড়াই। শেষবেলায় লড়েন উমেশ যাদব। শেষ ওভারে নাইটদের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ১১ রান। শেষ ওভারে দুটি উইকেট তুলে নিয়ে পিঙ্ক জার্সিতে অভিষেক রাঙিয়ে রাখলেন ওবেদ ম্যাকয়। ৯ বলে ২১ রান করে যান উমেশ। ২ বল বাকি থাকতেই অলআউট হয়ে যায় কেকেআর। ৭ উইকেটে জয়ী রাজস্থান।

এই রাজস্থান চলতি আইপিএলে যে ফর্মে এগিয়ে চলেছে, তাতে রাজস্থান যদি প্লে অফ এবং ফাইনালে না ওঠে তা হলে অবাক হতেই হবে। কারণ চলতি আইপিএলে সবথেকে ব্যালেন্সড টিম দেখাচ্ছে যে সঞ্জুর পিঙ্ক আর্মিকেই।

সংক্ষিপ্ত স্কোর: রাজস্থান ২১৭-৫ (জস বাটলার ১০৩, সঞ্জু স্যামসন ৩৮, শিমরন হেটমায়র ২৬*, সুনীল নারিন ২-২১, আন্দ্রে রাসেল ১-২৯)। কলকাতা ২১০ (শ্রেয়স আইয়ার ৮৫, অ্যারন ফিঞ্চ ৫৮, যুজবেন্দ্র চাহাল ৫-৪০, রবিচন্দ্রন অশ্বিন ১-৩৮)