ক্রিকেট ভদ্রলোকের খেলা। ছেলেবেলা থেকে এই কথা শুনতে অভ্যস্ত সকলেই। এর মধ্যেও এমন ঘটনা ঘটে, যা সাময়িক হলেও যাবতীয় ভাবনা চিন্তায় নাড়া দিয়ে যায়। ক্রিকেট মাঠে এমন অনেক ঘটনাই রয়েছে, যা আজও তাড়া করে বেড়ায় এর সঙ্গে যুক্ত খেলোয়াড়দের। কখনও সম্পর্ক জোড়াও লাগে। আবার কখনও মুখ দেখাদেখি বন্ধ। অনেক ক্ষেত্রেই পেশার তাগিদে এক ফ্রেমে থাকতে হয়। ক্যামেরার সামনে দেখাতে হয়, ‘সব ওকে আছে বস’। আদৌ কি মন থেকে মুছে ফেলা যায় সেই ঘটনা? ভারতবর্ষের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ক্রিকেট। টেলিভিশন ক্যামেরার সৌজন্যে কিছুই লুকনো থাকে না। দেশের সকলের মতো পরিবারের নজরেও তো পড়ে। সেই অপমান কি সত্যিই ভোলা যায়?
ভারতীয় ক্রিকেটের সেই ঘটনা মনে পড়ে! একটু ক্লু দেওয়া যাক। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচ। ২০০৮ সালে। টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী সংস্করণ। মুম্বই ইন্ডিয়ান্স বনাম কিংস ইলেভেন পঞ্জাব (বর্তমানে পঞ্জাব কিংস) ম্যাচ। প্রতিপক্ষ হিসেবে খেলছিলেন জাতীয় দলের দুই সতীর্থ। খেলার মাঠে অনেক সময়ই সতীর্থরা নানা মজায় মেতে ওঠেন। স্টাম্প মাইকের সৌজন্যে এখন আরও বেশি করে ধরা পড়ে সেই মজা।
মুম্বই ইন্ডিয়ান্সে ছিলেন হরভজন সিং। ভারতের কিংবদন্তি অফস্পিনার। অন্য দিকে, কিংস ইলেভেন পঞ্জাবে খেলছিলেন শান্তাকুমারন শ্রীসন্থ। ২০০৭ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের উদ্বোধনী সংস্করণেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ভারত। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লাস্ট ওভারে বোলিং করছিলেন যোগীন্দর শর্মা। শর্ট থার্ডম্যানে ক্যাচ নিয়ে ভারতের জয় নিশ্চিত করেছিলেন এই শ্রীসন্থ। একই টিমে ছিলেন হরভজনও। তবে আইপিএলের সেই ঘটনা তাদের সম্পর্কে ভাঙন ধরায়।
আইপিএলের সেই ম্যাচে শান্তাকুমারন শ্রীসন্থকে কষিয়ে চড় মেরেছিলেন হরভজন সিং। সিনিয়র ক্রিকেটারের থেকে এমন আচরণে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন শ্রীসন্থ। যদিও সেই ঘটনার ভিডিয়ো ফুটেজ এখন আর পাওয়া যায় না। ভারতীয় ক্রিকেটে এই ঘটনা পরিচিত স্ল্যাপ-গেট নামে। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড এই ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছিল সুধীর নানাবতিকে। তাঁর রিপোর্টের ভিত্তিতেই টুর্নামেন্টের বাকি ম্যাচে নির্বাসিত করা হয়েছিল হরভজন সিংকে।
দু-জনেই চেষ্টা করেছেন ভুলে যেতে। হরভজন সিং পরবর্তীতে বলেছেন, তিনি লজ্জিত যে তাঁর জন্য অপমানের মুখে পড়তে হয়েছিল শ্রীসন্থকে। প্রাক্তন পেসার শ্রীসন্থ ঘটনার পর ভাজ্জি সম্পর্কে টুইটারে নানা কথাই বলেছিলেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য, ভাজ্জি সম্পর্কে লিখেছিলেন, তিনি নাকি পিছন থেকে ছুঁড়ি মারার মতো মানুষ। শুধু তাই নয়, চড় মারার বিষয়টিও পূর্ব পরিকল্পিত এবং ‘কয়েকজন মিলে প্ল্য়ান করেছিলেন’।
শ্রীসন্থ অবশ্য পরবর্তীতে সেই ঘটনা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেছেন। এবং হরভজনের সঙ্গে কমেন্ট্রি করা থেকে নানা ভার্চুয়াল শো-তেও কথা বলেছেন। সত্যিই কি মন থেকে ভুলে গিয়েছেন সেই অপমান? না সবটাই লোক দেখানো! এই প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যায়।