WPL 2023: বন্দুকের নলের সামনে থেকে বাইশ গজে কাশ্মীরকন্যা
Jasia Akhtar: মেয়েদের সিনিয়র ওয়ানডে ট্রফিতে ৯ ম্যাচে ৫০১ রান করেন জাসিয়া আখতার। টুর্নামেন্টের টপ স্কোরার হন। সিনিয়র টি-২০তে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক। সাত ম্যাচে তাঁর ঝুলিতে ২৭৩ রান। সর্বোচ্চ অপরাজিত ১২৫। ইন্টার জোনাল টি-টোয়েন্টিতেও দুরন্ত পারফরম্যান্স রয়েছে। ডান হাতি ব্যাটার মনে করেন একমাত্র পরিশ্রমই সাফল্যের হাতিয়ার। তাই যে কোনও বাধাই অতিক্রম করা সহজ শুধুমাত্র পরিশ্রম আর নিষ্ঠার মাধ্যমে।

জয়পুর: মেয়েদের আইপিএল ভারতীয় ক্রিকেটে এক নতুন দিগন্ত এনে দিয়েছে। শেষ ২০ বছরে ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট অনেক পাল্টে গিয়েছে। ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েদের ক্রিকেটেও এখন অতিরিক্ত জোর ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের। সমাজের বাধা পেরিয়ে বাইশ গজকে বেছে নিয়েছেন অনেক মেয়েরা। জম্মু-কাশ্মীরের জাসিয়া আখতারের কাহিনি তো যে কোনও চিত্রনাট্যকেও হার মানাবে। জঙ্গিদের রক্তচক্ষুকে পরোয়া না করেই ক্রিকেটকে বেছে নিয়েছিলেন। সেই জাসিয়া মেয়েদের আইপিএলে খেলবেন দিল্লি ক্যাপিটালসের জার্সিতে। এই উত্থানের পিছনে জড়িয়ে রয়েছে হাড়হিম করা এক কাহিনি। যা শুনলে চমকে যেতে হয়। ক্রিকেট খেলতে গিয়ে জঙ্গিদের হুমকির সামনে পড়তে হয় জাসিয়া আর তাঁর পরিবারকে। এমনকি বন্দুকের নলের সামনে দাঁড়াতে হয়। ভাগ্যের জোরে সে দিন বেঁচে গিয়েছিল জাসিয়ার পরিবার। সেই মেয়েই শোনালেন তাঁর ক্রিকেটজীবনের কঠিন কাহিনি। বিস্তারিত TV9Bangla-য়।
কাশ্মীরের শোপিয়ান জেলার ব্রারি পোড়া গ্রামে বাড়ি জাসিয়া আখতারের। এক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া রোমহর্ষক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘সালটা ২০০৬। তখন ক্রিকেট, কবাডি, শট পাট সব কিছুই আমি খেলতাম। একদিন দেখি, বাড়ির ভেতরে একদল জঙ্গি ঢুকে পড়েছে। তাদের মুখ কালো কাপড়ে ঢাকা। হাতে বন্দুক। ভয়ে তটস্থ হয়ে গিয়েছিলাম। মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে বাবাকে হুমকি দেওয়া হয়, আমি যেন ভারতের হয়ে না খেলি। ভাগ্যবশত সে দিন কোনও দুর্ঘটনা ঘটেনি। ৫ বছর আমি খেলা বন্ধ রেখেছিলাম। ২০১১ সালে ক্রিকেটার হিসেবে নতুন জীবন শুরু করি। অতীত মনে পড়লে আজ আবেগ ধরে রাখতে পারি না। অনেক কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে জীবন কেটেছে।’
২০ লাখ টাকায় জাসিয়াকে নিয়েছে দিল্লি ক্যাপিটালসের। মেয়েদের আইপিএলে একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে জম্মু-কাশ্মীর থেকে ডাক পেয়েছেন। পাঁচ ভাই-বোনের সংসারে জাসিয়াই সবচেয়ে বড়। বাবা গুল মহম্মদ চাষ করতেন। জাসিয়া বলেন, ‘আমার কাছে জুতো কেনার পয়সা ছিল না। তাই শুরুর দিকে হাওয়াই চটি পরেই ক্রিকেট খেলতাম। আমার বাবা ৪০০ টাকা দিয়ে জুতো কিনে দিত। তবে ক’দিন খেলার পরই দেখতাম যখন তখন সেই জুতো ছিঁড়ে যেত। আমার ধারণা ছিল না, ক্রিকেট খেলার জন্য কি ধরণের জুতো পরা উচিত। তবে ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলার পর পরিস্থিতি অনেকটা পাল্টে যায়। ২০১৯ সালে মেয়েদের টি-টোয়েন্টি চ্যালেঞ্জ খেলার পর আর্থিক অবস্থা কিছুটা ভালো হয়। পঞ্জাবের হয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর হাতে অনেকটা পয়সা পেতে শুরু করি। তার আগে ক্রিকেট খেলার জন্য ভালো জুতো কেনার টাকাও ছিল না।’ এখন নামী জুতো প্রস্তুতকারক সংস্থা জাসিয়ার আজীবন স্পনসর।
একবছর জম্মু-কাশ্মীরের হয়ে খেলার পর ২০১৩ সালে পঞ্জাবে চলে আসেন জাসিয়া আখতার। সাত বছর খেলেন সেখানে। শেষ দু’বছর ধরে রাজস্থানের হয়ে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলছেন ৩৪ বছরের এই ক্রিকেটার। জাসিয়া বলেন, ‘জম্মু-কাশ্মীরের ক্রিকেট পরিকাঠামো ভালো নয়। এছাড়া ওখানকার আবহাওয়া একটা বিশাল সমস্য়া। মাত্র তিন মাস খেলতে পারতাম। বাকি সময়টা ঠাণ্ডা আর বরফে ঢেকে থাকে। এছাড়া বৃষ্টি তো আছেই।’
মেয়েদের সিনিয়র ওয়ানডে ট্রফিতে ৯ ম্যাচে ৫০১ রান করেন জাসিয়া আখতার। টুর্নামেন্টের টপ স্কোরার হন। সিনিয়র টি-২০তে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক। সাত ম্যাচে তাঁর ঝুলিতে ২৭৩ রান। সর্বোচ্চ অপরাজিত ১২৫। ইন্টার জোনাল টি-টোয়েন্টিতেও দুরন্ত পারফরম্যান্স রয়েছে। ডান হাতি ব্যাটার মনে করেন একমাত্র পরিশ্রমই সাফল্যের হাতিয়ার। তাই যে কোনও বাধাই অতিক্রম করা সহজ শুধুমাত্র পরিশ্রম আর নিষ্ঠার মাধ্যমে।
