গোল এল, জয়ের মুখ তবুও দেখল না এসসি ইস্টবেঙ্গল

হায়দরাবাদ এফ সির কাছে হেরে লিগ তালিকার সবার নীচেই থাকল এসসি ইস্টবেঙ্গল।

গোল এল, জয়ের মুখ তবুও দেখল না এসসি ইস্টবেঙ্গল
আইএসএলে ফের হার এসসি ইস্টবেঙ্গলের। ছবি-আইএসএল।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Dec 15, 2020 | 11:53 PM

গোয়াঃ মর্নিং শো’স দ্য ডে! এই কথাটা বোধ হয় খাটল না রবি ফাউলার ( Robbie Fowler) আর তাঁর এসসি ইস্টবেঙ্গলের (SC East Bengal) জন্য। প্রথমার্ধে দারুণ ফুটবল খেলে এগিয়ে যাওয়ার পর দ্বিতীয়ার্ধে এভাবে গোটা একটা দল দাঁড়িয়ে যেতে পারে! তা বোধ হয় মঙ্গলবারের এসসি ইস্টবেঙ্গল বনাম হায়দরাবাদ এফসি (Hyderabad Fc) ম্যাচ না দেখলে বিশ্বাস করা সত্যিই কঠিন। প্রথমার্ধে ১-০ গোলে এগিয়ে থাকার পর শেষপর্যন্ত ৩-২ গোলে হার লাল হলুদ ব্রিগেডের। প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে হাই প্রোফাইল ফাউলারের কোচিং নিয়েও।

প্রথমার্ধে দুরন্ত ইস্টবেঙ্গল, আইএসএল ইতিহাসে প্রথম গোল লাল হলুদের

ম্য়াচের প্রথমার্ধে এসসি ইস্টবেঙ্গলের পারফরম্যান্স দেখে মনে হচ্ছিল ‘উল্টে দেখুন পাল্টে গেছে ‘। মাঘোমা (Maghoma)-পিলকিংটনরা (Pilkington) দাপট দেখাতে শুরু করলেন ম্যাচের শুরু থেকে। সেটপিস ছাড়া হায়দরাবাদ এফসির আক্রমণের ঝাঁঝ কোথায়! আর বারবার বিপক্ষ বক্সে আক্রমণেরই ফায়দা তুলল এসসি ইস্টবেঙ্গল। পিলকিংটনের মাপা পাস স্টেইম্যানকে। সেখান থেকে পাস মাঘোমাকে। আইএসএলের(ISL) ইতিহাসে এসসি ইস্টবেঙ্গলের হয়ে প্রথম গোল করলেন মাঘোমা।

দেবজিৎ হলেন ‘সেভজিৎ’

এরপর দাপট বাড়তে থাকে ইস্টবেঙ্গল আক্রমণের। মাঘোমাদের আক্রমণের ঝাঁঝ যখন বাড়ছে, তখনই দলের জন্য বড় বিপদ ডেকে আনেন শেহনাজ সিং। নিজেদের বক্সে  মহম্মদ ইয়াসিরকে শেহনাজ সিং ফেলে দিতেই পেনাল্টি পায় হায়দরাবাদ এফসি। স্যান্টানার পেনাল্টি সেভ করে ইস্টবেঙ্গল গোলরক্ষক দেবজিৎ মজুমদার (Debjit Majumder) হয়ে উঠলেন ‘সেভজিৎ’। প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার আগে স্বস্তি ফিরে পায় ইস্টবেঙ্গল।

১ মিনিটে ২ গোল, কোনঠাসা ইস্টবেঙ্গল

দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই বদলে গেল দুই দলের ফুটবল দাপট। প্রথমার্ধের এসসি ইস্টবেঙ্গলের দাপটের ছায়াটুকুও দেখা মিলল না দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে। তিলক ময়দানে তখন শুধুই হলুদ ঝড়। ম্যাচের ৫৬ মিনিটেই ইস্টবেঙ্গল বক্সের ডানদিক থেকে ইয়াসিরের বিষাক্ত সেটপিস। মাথা ছুঁইয়ে গোল করে হায়দরাবাদ এফসিকে এগিয়ে দেন স্যান্টানা।

সমতায় ফেরানোর পর কোথায় পাল্টা আক্রমণে যাবে, তার আগেই কিনা দ্বিতীয় গোল ইস্টবেঙ্গলের জালে!  মাঘোমার পা থেকে বল কেড়ে ইয়াসিরের দুরন্ত পাস কোলাসোকে। সেখান থেকে মাপা পাস স্যান্টানাকে। দ্বিতীয় গোল করতে ভুল করেননি হায়দরাবাদের স্প্যানিশ স্ট্রাইকার। মাত্র ১ মিনিটের মধ্যে দুটি গোল স্যান্টানার। থরহরিকম্প ইস্টবেঙ্গল ডিফেন্সে। কিছু বোঝার আগেই ২-১ গোলে পিছিয়ে গেল এসসি ইস্টবেঙ্গল। পেনাল্টি নষ্টের খেসারত যেন সুদে আসলে উসুল করে দিলেন স্যান্টানা।

হোলি-র গোলে ব্যবধান বাড়ল, কমালেন মাঘোমা

২-১ গোলে পিছিয়ে দল। ফের তেড়েফুঁড়ে ম্যাচে ফেরার চেষ্টা শুরু এসসি ইস্টবেঙ্গলের। কিন্তু ডিফেন্সের যা হাল লাল হলুদের, তাতে আক্রমণে গিয়েও তো স্বস্তি পাচ্ছেন না পিলকিংটনরা। ফাউলারের দলের ডিফেন্সের অন্যতম ভরসা স্কট নেভিলকে দেখে তো রীতিমত আতঙ্কে ভুগছেন সমর্থকরা। আর সেই দুর্বল ডিফেন্সকে রীতিমত তুর্কি নাচন দেখালেন গোয়ার অনামী উইঙ্গার লিস্টন কোলাসো। ইস্টবেঙ্গলের ডিফেন্সকে কোমরের দুলুনিতে দোলালেন। স্কট নেভিলরা তখন শুধুই দর্শক।ততধিক জঘন্য নারায়ণ দাস। সেখান থেকে ডানদিকে মাপা পাস। গোল করে ব্যবধান বাড়াতে ভুল করেননি হোলিচরণ নার্জারি। কোনও প্রতিরোধের ক্ষমতাই ছিলনা দেবজিতের।

৩-১ গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর জয়ের গন্ধ পেতে শুরু করেছে নিজামের শহর। মরনকামড় দেওয়ার পালা শুরু এসসি ইস্টবেঙ্গলের। তবে এবার ডিফেন্স ও মাঝমাঠ গুছিয়ে। এদিন সাদামাঠা পারফরম্যান্স করা ২  ফরোয়ার্ড জেজে ও বিনিথকে তুলে সুরচন্দ্র ও অ্যারনকে নামিয়ে জমাট আক্রমণের স্ট্র্যাটেজিতে যান ফাউলার। ৮১ মিনিটে সেটপিস থেকে মাথা ছুঁইয়ে ফের ইস্টবেঙ্গলের হয়ে গোল মাঘোমার। ব্যবধান কমায় লাল হলুদ ব্রিগেড। তবুও হলনা শেষরক্ষা। ৩-২ গোলেই শেষপর্যন্ত ম্যাচ হার এসসি ইস্টবেঙ্গলের।

প্রশ্নের মুখে ফাউলার

৫ ম্যাচে ১টি ড্র, ৪টি হার।পয়েন্ট মাত্র ১। লিগ টেবিলে সবার নিচে এসসি ইস্টবেঙ্গল। হাইপ্রোফাইল কোচ। ততধিক হাইপ্রোফাইল ফুটবলের সমাহার। কিন্তু পারফরম্যান্স পাড়ার ক্লাবের থেকেও খারাপ। রবি ফাউলারের স্ট্র্যাটেজি কি, বুঝতেই পারছেন না ফুটবলবিশেষজ্ঞরা। অনেকেরই প্রশ্ন, এই পারফরম্যান্স করলে কোনও ভারতীয় কোচ এতদিন কলকাতা ফুটবলের অন্যতম প্রধানের কোচের চাকরিটা বাঁচিয়ে রাখতে পারতেন তো?