
কলকাতা: মোহনবাগান নির্বাচন আসন্ন। খুব শীঘ্রই হয়তো মনোনয়ন জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে। তবে এই নির্বাচনের হাওয়ায় অতিরিক্ত গুরুত্ব পেয়েছে ‘সেনবাড়ি’। মোহনবাগানের ঐতিহ্যবাহী এই সেনবাড়িকে ঘিরেই শাসক আর বিরোধী দুই শিবিরের তরজা পৌঁছয় চরমে। মোহনবাগান ক্লাবের আঁতুড়ঘর হিসেবে পরিচিত এই সেনবাড়িতেই ক্লাবের দফতর করার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছে দুই শিবির।
শ্যামপুকুরের ৪৪ নম্বর রমাকান্ত বোস স্ট্রিটের সেনবাড়ি ভেঙে ফেলা হচ্ছে। প্রায় ২ বিঘা জমির উপর এই রক্ষণাবেক্ষণ করতে গিয়ে বিপুল টাকা খরচ হচ্ছে। সেনবাড়ির বর্তমান সদস্যরা সেই খরচা চালাতে ব্যর্থ। তাই বাড়ি বিক্রি করে আবাসন তৈরির পথে হেঁটেছেন সেনবাড়ির পরিবারের সদস্যরা। নতুন আবাসনে মোহনবাগান ক্লাবের দফতর করা নিয়েই শাসক আর বিরোধী দুই শিবিরের তরজা শুরু হয়েছে।
সৃঞ্জয় বসু এবারের নির্বাচনে বিরোধী শিবিরের প্রধান মুখ। প্রাক্তন বাগান সচিব কয়েকদিন আগেই সেনবাড়িতে গিয়ে ওই হাল দেখার পর, ওখানে মোহনবাগানের একটি সংগ্রহশালা করার কথা বলেন। রবিবার বাগবাজারে নির্বাচনী প্রচার সভায় দেবাশিস দত্ত বলেন, সেনবাড়ির একতলায় ২০০ স্কোয়ার ফুট জায়গা কিনবে মোহনবাগান। প্রোমোটারদের সঙ্গে এব্যাপারে তাদের কথাবার্তাও হয়।
সেন বাড়িতে আবাসন গড়ে তোলার কাজ করছে স্বস্তিক প্রোজেক্টস। সেই গ্রুপের সিইও উদয় জালান দেবাশিস দত্তকে চিঠি লিখে জানান, ‘কয়েকমাস আগে সৃঞ্জয় বসু এখানে আসেন এবং মোহনবাগান ক্লাবের সংগ্রহশালা করার কথা বলেন। তিনি আগে এসে প্রস্তাব রাখায় এখানে নীচতলায় গাড়ি পার্কিং ছাড়া আর অন্য কোনও জায়গা দেওয়া সম্ভব নয়। সৃঞ্জয় বসু এর অগ্রাধিকার পাবেন। উপরতলার সমস্ত ফ্লোর রেসিডেন্সিয়াল কাজে ব্যবহার হবে।’ এই চিঠির পর সৃঞ্জয় শিবির অবশ্য দাবি করে, এই নির্বাচনের ময়দানে ১-০ এগিয়ে তারা। ঐতিহ্যশালী সেনবাড়িকে কেন্দ্র করেই মোহনবাগান নির্বাচনের পালে হাওয়া লাগে।
এ প্রসঙ্গে দেবাশিস দত্ত বললেন, ‘সেন বাড়ির সদস্য শ্যামল সেনের সঙ্গে আমাদের কথা হয়। স্বস্তিক গ্রুপের একজনকে বলি। ওরা জানায় মৌখিক কথায় বিশ্বাস করে না। আমরা চিঠি লিখি, ২০০ স্কোয়ার ফুট কিনব। আমাদের কাছে উত্তর আসে, সৃঞ্জয়ও বলেছে নেবে। সেও মৌখিক ভাবে বলেছে। সংগ্রহশালা করবে বলেছে। কিন্তু কত স্কোয়ার ফুট জায়গা নেবে তা বলেনি। বাড়িটা রেসিডেন্সিয়াল। কমার্সিয়াল করতে পারবে না। পুরসভার সঙ্গে কথা আমরা বলি। এক্ষেত্রে ওই ২০০ স্কোয়ার ফুট রেসিডেন্সিয়াল থেকে কমার্শিয়াল করতে হবে। সেন বাড়ির থেকে এনওসি নিতে হবে। স্বস্তিক গ্রুপের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আর সেন বাড়ির সঙ্গে কথা বলতে হবে। সৃঞ্জয়কে অনুরোধ করব, ও যদি সাফল্য চায়, তাহলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে করি। মোহনবাগানের স্মৃতি বাঁচিয়ে রাখতে এই প্রোজেক্টে নামি একত্রিত হয়ে। এর বিরোধিতা থাকবে না। মোহনবাগান যদি নামে, কোনও কিছু সমস্যা হবে না। এখনও প্ল্যান হয়নি। সেন বাড়ি একটা স্মৃতি। সেটা ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। আমি সচিব থাকি কি না থাকি, যে সচিব থাকুক আমি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করব এই সেনবাড়ির ইতিহাসকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য।’
যার প্রত্যুত্তরে সৃঞ্জয় বসু বললেন, ‘ওনার এখন গিয়ে মনে হচ্ছে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়ার কথা। এতদিন তো মনে হয়নি। আগে যখন এ বিষয়ে কথা বলতে গিয়েছিলাম, সেদিন শোনেননি। মোহনবাগান বিষয়ে আমিও মনে করি, সবার এক হয়ে নামা উচিত। কিন্তু এতদিন পরে হঠাৎ কেন ওনার মনে হচ্ছে এর প্রতিদান দেওয়া উচিত?’