
কলকাতা: আর রাখঢাক নয়, একেবারে বিস্ফোরণ। খুল্লামখুল্লা তোপ দাগলেন ফেডারেশন প্রেসিডেন্ট কল্যাণ চৌবের বিরুদ্ধে। প্রশাসক হিসেবে প্রশ্ন তুলে দিলেন। গোলকিপার হিসেবেই বা কি করেছেন, তুলে দিলেন সে প্রসঙ্গও। ভারতীয় ফুটবলের অবনমনের জন্য কল্যাণকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। যিনি বিস্ফোরণের পর বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন, তাঁকে আসমুদ্র হিমাচল বাইচুং ভুটিয়া নামে চেনে। ভারতীয় ফুটবলের আইকন। স্বপ্ন দেখানোর মুখ। দেশীয় ফুটবলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাণ্ডারী। এশিয়ান দলগুলো যখন বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে দিয়েছে, তখন ভারত এশিয়ান কাপে যোগ্যতা অর্জন করবে কিনা, তা নিয়েই সংশয়। অবসর নেওয়ার পরেও সুনীল ছেত্রী ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এআইএফএফের অস্বচ্ছতা তুলে প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন পাহাড়ি বিছে।
বাইচুং যা বলেছেন, তাতে নতুন বিতর্ক শুরু যে হবে, সন্দেহ নেই। ভারতীয় ফুটবলের করুণ দশা দেখে জাতীয় দলের প্রাক্তন ক্যাপ্টেন বলেছেন, ‘১৯৯৯ সাল থেকে আমি দেশের অধিনায়কত্ব করেছি। ২০১১ পর্যন্ত খেলেছি জাতীয় দলে। আমি কিন্তু কল্যাণকে খুব বেশি খেলতে দেখিনি জাতীয় দলে। তৃতীয় বা চতুর্থ গোলকিপার হিসেবে থাকত। বয়সভিত্তিক পর্যায়ে খেলেছে কিনা কে জানে। সরকারের কাছেও মিথ্যা কথা বলেছে। ফেডারেশনের নির্বাচনের সময় আমি বলেছিলাম, কল্যাণ চৌবে কতটা অকার্যকর। খেলার চেয়ে রাজনীতিতে বেশি মন দিয়েছে। রাজনৈতিক দলের উপরেই বেশি নির্ভর করেছে। প্লেয়ারদের ভোটাধিকার থাকা উচিত। সুপ্রিম কোর্টে সেই মামলা চলছে। কল্যাণ চৌবে আবার তার বিরুদ্ধে। ফুটবল প্লেয়ারস অ্যাসোসিয়েশন হওয়ার সময় কল্যাণ চৌবে সবার আগে বিরোধিতা করেছিল। পলিটিশিয়ান, ব্যুরোক্রেট, ফুটবলার যেই হোক ফুটবলের উন্নতিতে নজর দেওয়া উচিত।’
বাইচুং বনাম কল্যাণ বিতর্ক যে ক্রমশ বাড়ছে, তাতে সন্দেহ নেই। কল্যাণ এর পাল্টা হিসেবে কী বলেন, সেটাই দেখার। বাইচুং অবশ্য সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে বলেছেন, ‘জাতীয় দলের ফুটবলাররা কিন্তু ক্রিকেটারদের মধ্যে চুক্তিবদ্ধ নয়। তারা ম্যাচ পিছু ২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা পায়। সেখানে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার হয় ফেডারেশনের। জুতো কেনা, গাড়ি কেনা, ১২৭ বার বিমান যাতায়াত করে ফেডারেশন সভাপতি। অলিভার কানকে নিয়ে এসে গোলকিপার অ্যাকাডেমি করার কথা বলে কল্যাণ চৌবে। এক্স কো-তে সে কথা বলে। এখনও তার দেখা নেই।’
একই সঙ্গে বাইচুংয়ের মন্তব্য, ‘ফিফা ব়্যাঙ্কিংয়ে ১৩৩ নম্বরে ভারত। অক্টোবরে এশিয়া কাপের যোগ্যতা পর্বের পরের ম্যাচ। যোগ্যতা অর্জনের সুযোগ আছে এখনও। ২৪ দলের মধ্যে আসা উচিত। কিন্তু এই পারফরম্যান্স! সভাপতি কল্যাণ চৌবে বলেছিলেন, এশিয়ায় প্রথম ১০-এ আসবে ভারত। একটা নির্দিষ্ট প্ল্যানিং প্রফুল প্যাটেলের সময় থেকে শুরু হয়েছিল। কিন্তু শেষ তিন বছরে ভারতীয় ফুটবল ক্রমশ পিছিয়েছে। আমাদের রেজাল্ট দরকার। আন্তর্জাতিক ফুটবলে কে রেজাল্ট দেবে? প্লেয়াররা। ভালো মানের ফুটবলার দরকার। ফুটবলার তৈরি না হলে, ফল আসবে না। গ্রাসরুট ডেভলপমেন্ট না করলে রেজাল্ট আসবে না।’
তৃণমূল স্তর থেকে ফুটবল তুলে আনতে হলে রাজ্য সংস্থাগুলোর বরাদ্দ বাড়াতে হবে, পরামর্শ বাইচুংয়ের। তাঁর কথায়, ‘স্টেট অ্যাসোসিয়েশনকে ৫০ লাখ টাকা করে দেওয়া দরকার। যখন আমি নির্বাচনে লড়েছিলাম, এই বার্তা ছিল। এখন ২৪ লাখ দেয়। তার মধ্যে ১২ লাখ শুধু অ্যাসোসিয়েশনের জন্য দেয়। ১০ লাখ টাকা দেয় টুর্নামেন্ট আয়োজনের জন্য। আর ২ লাখ টাকা দেয় গ্রাসরুট ডেভলপমেন্টের জন্য। গ্রাসরুট ডেভলপমেন্টের জন্য ফান্ড বাড়ানো দরকার। প্রচুর প্রতিভাবান ফুটবলার রাজ্যের বিভিন্ন অ্যাকাডেমিতে আসছে। কিন্তু তাদের ধরে রাখতে অ্যাকাডেমিগুলোর পর্যাপ্ত অর্থ নেই। অনূর্ধ্ব-১৭, অনূর্ধ্ব-২০ এশিয়া কাপ, বিশ্বকাপে নিজেদের যোগ্যতায় কোয়ালিফাই করা উচিত। যতক্ষণ না তা হবে, ভারতের সিনিয়র দল বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করবে কিভাবে?’
সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের প্রশাসন নিয়েও ক্ষোভে ফুটছেন বাইচুং। ‘এআইএফএফকে স্বচ্ছ হতে হবে। এজিএম, কার্যকরী কমিটির সভা সোশ্যাল মিডিয়ায় লাইভ হওয়া উচিত। সুপ্রিম কোর্টের মামলাও তো লাইভ হয়। কি আলোচনা হচ্ছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় লাইভ হোক। ক্ষতি কী! গত তিন বছরে দুর্নীতির একাধিক অভিযোগ উঠেছে ফেডারেশনের বিরুদ্ধে। ২০২৭ এশিয়া কাপ আয়োজন করার জন্য বিড করেছিল ফেডারেশন। আমরা যদি কোয়ালিফাই করতাম, তাহলে আয়োজন করতাম। কল্যাণ চৌবে সৌদিতে গিয়ে ওদের সঙ্গে কী ডিল করে এল! এখন ২০৩১ এশিয়া কাপে আয়োজনের কথা বলছে। সৌদির সঙ্গে কী চুক্তি হয়েছে, তদন্ত হওয়া উচিত।’