Football: চুঁচুড়ায় মানিকদার কোচিংয়ে ফুটবলে বুঁদ মেয়েরা হচ্ছেন ‘শক্তিরূপেণ সংস্থিতা’
বর্তমানে মেয়েদের খুঁজে খুঁজে ফুটবলার তৈরি করছেন তাপস দে। মানিকদার কোচিং থেকে প্রায় ১৭ জন ফুটবলার বাংলা দলে খেলেছেন।

ওরা কেউ রোনাল্ডোর ভক্ত, আবার কেউবা মেসির। ফুটবলই ওদের ধ্যান জ্ঞান। চুঁচুড়ার মেয়েরা ফুটবলার হচ্ছে মানিকদার কোচিং এ। পুলের পাশে দাঁড়িয়ে ক্ষিতদা বলছেন, ‘ফাইট কোনি ফাইট।’ চুঁচুড়ার মানিকদার কোচিংয়ে এই রকম অনেক কোনির লড়াই চলছে। মতি নন্দীর কোনি উপন্যাসের ক্ষিতিশ সিংহের মতই চুঁচুড়া মানিক ফুটবল কোচিং এর তাপস দে আর্থিক ভাবে সচ্ছল নয়, তেমন পরিবারের মেয়েদের খুঁজে নিয়ে এসে গত দুই দশক ধরে ফুটবলার তৈরি করছেন।
তাপস দে ইস্টার্ন রেলে চাকরি করতেন। একইসঙ্গে খেলতেন। একসময় দাপিয়ে ফুটবল খেলেছেন। পরবর্তীতে নিজেই কোচিং সেন্টার খোলেন। প্রথমে গ্রামগঞ্জের ছেলেদের ভালো ফুটবলার তৈরির স্বপ্ন দেখতেন। বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে কোচিং করাতেন। অনেক ফুটবলার তাঁর হাত ধরেই স্পেন, ইতালি, ইংল্যান্ডে গিয়েও খেলে এসেছেন।
বর্তমানে মেয়েদের খুঁজে খুঁজে ফুটবলার তৈরি করছেন তাপস দে। মানিকদার কোচিং থেকে প্রায় ১৭ জন ফুটবলার বাংলা দলে খেলেছেন। কলকাতায় আইএফএ পরিচালিত কন্যাশ্রী কাপেও তাঁরা খেলছেন। মেয়েদের ভালো জায়গায় পৌঁছে দিতে চান মানিকদা। তাঁর কয়েকজন বন্ধু এই কাজে পাশে দাঁড়ান। তাঁর কোচিং সেন্টার থেকে ফুটবল খেলে রেলে, পুলিশে অনেকেই চাকরিও পেয়েছেন।
তাপস দে জানান, ওই কোচিং সেন্টানে অনুশীলন করা প্রায় সব মেয়েই একেবারে দুস্থ পরিবার থেকে উঠে এসেছেন। মাঝএ মাঝে ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা থাকা মেয়েদের কোচিং করানোর মত মাঠ পেতেও সমস্যায় পড়তে হয়। ঠিকঠাক ড্রেসিং রুম পাওয়া যায় না। তার পরও সব প্রতিকূলতাকে কাটিয়ে ফুটবলকে লক্ষ্য রেখে সেই মেয়েরা এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।
আজ বিশ্ব নারী দিবসে চুঁচুড়া মাঠে একটি প্রীতি ফুটবল ম্যাচ খেলার আয়োজন করেছিল মানিক ফুটবল কোচিং সেন্টার। সেখানে উপস্থিত ছিলেন চুঁচুড়া সদর মহকুমা শাসক স্মিতা সান্যাল শুক্লা। তিনি বলেন, “মেয়েরা ফুটবল খেলায় আগ্রহী হচ্ছে এটা ভালো। আগামী দিনে এখান থেকেই হয়তো ভারতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করবে মেয়েরা।”
শত কষ্ট দূরে সরিয়ে রেখে মেয়েদের ফুটবল মাঠে নিয়ে আসেন মা বাবারা। মেয়েদের ইচ্ছেকে গুরুত্ব দেন। এ কথা বলতে গিয়ে চোখের কোনায় জল চিকচিক করে ওঠে শান্তিপুরের মিতা প্রামানিকের। তাঁর বাবা তাঁকে মাঠে নিয়ে আসেন। তাঁর বাবা রঞ্জু প্রামানিক বলেন, “আমার মেয়ে যদি এগিয়ে যেতে পারে, ওকে দেখে আরও অনেক মেয়ে উৎসাহ পাবে। ফুটবল খেলতে এগিয়ে আসবে। আমি এটাই চাই। মেয়েরা ফুটবল খেলবে এটা গ্রামের লোক ভালোভাবে দেখে না। এখনও অনেকে মনে করেন মেয়ে মানেই একটা বয়সের পর বিয়ে দিতে হবে। আমার মেয়ে পাঁচ বছর ধরে খেলছে। কলকাতাতেও খেলছে। আমি চাই আমার মেয়েকে দেখে আরও পাঁচটা মেয়ে শিখুক।”





