বছর শেষ হওয়ার লগ্নেই দেশে কোভিডের (Covid 19) তৃতীয় ডেউ আছড়ে পড়েছিল। নিত্যদিন পজিটিভিটি রেট বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে উপসর্গ দেখা দিলে, বাইরে বেরিয়ে কোভিড টেস্ট করাটাও কম ঝুঁকিপূর্ণ নয়। আবার বাড়িতে টেস্ট করতেও সময় লেগে যাচ্ছে। এমনকি বাড়িতে টেস্ট করার জন্য যে কিটগুলি রয়েছে, সেগুলিও সেরকম কার্যকর নয় বলে দাবি করেছেন অনেকে। সেই সব কথা মাথায় রেখে স্কটিশ রিসার্চাররা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নির্ভর কোভিড ১৯ টেস্টিং পদ্ধতি (AI Based Covid 19 Test) ডেভেলপ করেছেন, যাতে কাজে লাগবে ব্যক্তির এক্স-রে (X-Ray) ছবি। গবেষকরা দাবি করেছেন, বর্তমানে চালু পিসিআর টেস্টের থেকেও নিখুঁত এবং দ্রুততার সঙ্গে কোভিডের রিপোর্ট দিতে পারবে এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তি।
কতক্ষণে কোভিড টেস্ট?
ইউনিভার্সিটি অফ দ্য ওয়েস্ট অফ স্কটল্যান্ড-এর গবেষকরা এই প্রযুক্তি নিয়ে এসেছেন। নিখুঁত ভাবে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই করোনাভাইরাস টেস্ট করতে সক্ষম হবে এই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নির্ভর প্রযুক্তি। গবেষকরা জানিয়েছেন, এই পদ্ধতিতে কোভিড টেস্ট হতে সময় লাগবে মাত্র ২ ঘণ্টা। সেই সঙ্গে ৯৮ শতাংশ অ্যাকিউরেসি পাওয়া যাবে। মনে করা হচ্ছে, এই প্রযুক্তি জরুরি ভিত্তিতে ব্যাপক ভাবে কাজে লাগতে পারে। পিসিআর টেস্ট যে সব দেশে উপলব্ধ নয়, সে সব দেশ এই টেস্টিংয়ের দ্বারা ব্যাপক ভাবে উপকৃত হতে পারে। এমনকি যে সব দেশে পিসিআর টেস্ট রয়েছে, তা সময়সাপেক্ষ হওয়ার কারণে এই প্রযুক্তিকেই পরবর্তীতে কাজে লাগানো হতে পারে।
কী ভাবে কাজ করবে?
এক্স-রে প্রযুক্তি ব্য়বহার করে, কোভিড আক্রান্ত রোগী, সুস্থ রোগী, ভাইরাল নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগী, খুব সামান্য উপসর্গ রয়েছে এমন রোগী বা উপসর্গহীন রোগীর প্রায় ৩০০০ চিত্রের একটি ডেটাবেসের সঙ্গে স্ক্যানের তুলনা করবে। তার পরে এটি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রযুক্তি ব্যবহার করবে যা ডিপ কনভলিউশনাল নিউরাল নেটওয়ার্ক নামে পরিচিত। আসলে এটি একটি অ্যালগরিদম যা সাধারণত ভিজ়্যুয়াল ইমেজ বিশ্লেষণের মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করতে ব্যবহৃত হয়। এই বিষয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে জার্নাল সেন্সরে। সেখানেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, একটি বিস্তৃত পরীক্ষার পর্যায়ে এই টেকনিক ৯৮ শতাংশের বেশি নির্ভুল বলে প্রমাণিত হয়েছে।
গবেষকরা কী বলছেন?
গবেষণাটির যিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন, সেই ইউনিভার্সিটি অফ দ্য ওয়েস্ট অফ স্কটল্যান্ড-এর প্রফেসর নাঈম রামজ়ান বলছেন, “কোভিড সনাক্ত করতে পারে এমন একটি দ্রুত এবং নির্ভরযোগ্য টুলের প্রয়োজনীয়তা দীর্ঘদিন ধরেই উদ্ভূত হয়েছিল। তার পরে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট আসার পর থেকে তো সেই প্রয়োজনীয়তা আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে।” আরও যোগ করে তিনি বললেন, “কোভিড ১৯ টেস্টিং সরঞ্জাম কিছু দেশে সীমিত সংখ্যক থাকার কারণে, তারা প্রচুর পরিমাণে করোনাভাইরাস পরীক্ষা করতে অক্ষম। তবে এই এটি দ্রুত ভাইরাস সনাক্ত করতে সহজলভ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে।”
গবেষকরা উল্লেখ করেছেন যে, সংক্রমণের প্রাথমিক পর্যায়ে কোভিডের লক্ষণগুলি এক্স-রেগুলিতে দৃশ্যমান হয় না। তাই প্রযুক্তিটি পিসিআর টেস্টকে পুরোপুরি প্রতিস্থাপন করতে পারে না। তবে ঠারেঠরে তাঁরা একটা কথা বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, কোভিডের সংক্রমণ কমাতে এই প্রযুক্তির বিকল্প নেই, বিশেষ করে যে সব দেশে পিসিআর টেস্টের সরঞ্জামের অপ্রতুলতা রয়েছে।
প্রফেসর রামজ়ান বললেন, “করোনাভাইরাসের গুরুতর ক্ষেত্রে নির্ণয় করার সময়, এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং জীবন রক্ষাকারী হিসেবেও প্রমাণিত হতে পারে। কারণ এটি যে শুধুই কোভিড টেস্ট করে তা নয়। আক্রান্ত রোগীর ঠিক কোন চিকিৎসার প্রয়োজন, তাও নির্ধারণ করতে সহায়তা করে।”
ক্লিনিকাল সেটিংয়ে পদ্ধতির উপযুক্ততা মূল্যায়ন করার জন্য, এই গবেষক টিম এখন এক্স-রে মেশিনের বিভিন্ন মডেল দ্বারা সংগৃহীত এক্স-রে চিত্রগুলির একটি বৃহত্তর ডেটাবেস অন্তর্ভুক্ত করে গবেষণাটি প্রসারিত করার পরিকল্পনা করেছে।
আরও পড়ুন: বেঁচে যাওয়া রান্নার তেলে দ্রুততার সঙ্গে ইলেকট্রিক গাড়ি চার্জ হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ায়, কী ভাবে?
আরও পড়ুন: জাপানে পুলিশের পরিবর্তে রাস্তায় রোবট! AI-এর মাধ্যমে ঘনঘন টহলদারি, ধরছে চোর-ডাকাতও
আরও পড়ুন: প্রথাগত সিম কার্ডের ধারণা বদলাতে আসছে আইসিম প্রযুক্তি, কী সুবিধা? স্মার্টফোনেরই বা কী পরিবর্তন করবে?