Earth’s Brightness: ক্রমশ কমছে পৃথিবীর ঔজ্জ্বল্য! কারণ কী?
গবেষকরা স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন পরিমাপ পর্যবেক্ষণ করেও বুঝতে পেরেছেন যে পৃথিবীর প্রতিফলনের পরিমাণ কমে গিয়েছে। পৃথিবীর এই প্রতিফলনকে বলে অ্যালবেডো।
ক্রমশ কমছে পৃথিবীর উজ্জ্বলতা। বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা ও গবেষণার মাধ্যমে এমনটাই জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁরা বলেছেন যে সমুদ্রের জল যত গরম বা উষ্ণ হচ্ছে ততই কমছে পৃথিবীর উজ্জ্বলতা। পাশাপাশি গবেষণার মাধ্যমে তাঁরা এও জানিয়েছেন যে, ২০ বছর আগে পৃথিবী যতটা উজ্জ্বল ছিল, এখন তার তুলনায় বেশ কিছুটা কমেছে উজ্জ্বলতা। পৃথিবীর উপর প্রতি বর্গমিটারে উজ্জ্বলতা কমেছে প্রায় হাফ বা অর্ধেক ওয়াট। জানা গিয়েছে, Geophysical Research Letters জার্নালে এই গবেষণা প্রকাশ পেয়েছে, বিগত দু’দশকের পরিমাপ পর্যবেক্ষণ করে পৃথিবীর প্রসঙ্গে এই তথ্য প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞানীরা।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে বিচ্ছুরিত এই আলো চন্দ্রপৃষ্ঠকে আলোকিত করে। গবেষকরা স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন পরিমাপ পর্যবেক্ষণ করেও বুঝতে পেরেছেন যে পৃথিবীর প্রতিফলনের পরিমাণ কমে গিয়েছে। পৃথিবীর এই প্রতিফলনকে বলে অ্যালবেডো। গত দু’দশকে অ্যালবেডোর পরিমাণ হ্রাস হয়েছে অর্থাৎ কমেছে। বিশেষ করে গত তিন বছরের মধ্যে পৃথিবীর উজ্জ্বলতা কমেছে। বিভিন্ন পরিসংখ্যান তেমনটাই জানান দিয়েছে। বলা হচ্ছে, পৃথিবীর অ্যালবেডোর পরিমাণ ০.৫ শতাংশ কমে গিয়েছে গত তিন বছরে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, সূর্য থেকে আগত আলোকরশ্মি, যা পৃথিবীকে উজ্জ্বল করে, তার ৩০ শতাংশ অ্যালবেডো হিসেবে প্রতিফলিত হয়।
নিউ জার্সির ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজির এক গবেষক ফিলিপ গুড জানিয়েছেন, বিগ তিন বছরে এভাবে পৃথিবীর অ্যালবেডোর পরিমাণ কমে যাওয়ার ঘটনা যথেষ্ট আশ্চর্যজনক। বিশেষ করে তার আগের ১৭ বছরের ক্ষেত্রে সেভাবে কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়নি। কার্যত ‘ফ্ল্যাট অ্যালবেডো’ ছিল এই ১৭ বছর। তেমনটাই জানিয়েছেন গবেষক ফিলিপ। তিনি আরও জানিয়েছেন যে ১৯৯৮ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহ করেছে Big Bear Solar Observatory, যা দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় অবস্থিত। যখন এই তথ্য ভাণ্ডারে সাম্প্রতিক তথ্য যুক্ত হয়েছে তখনই অ্যালবেডোর পরিমাণ কমে যাওয়ার ঘটনা লক্ষ্য করা গিয়েছে। বিজ্ঞানীরা এও লক্ষ্য করেছেন যে পৃথিবীতে সূর্যালোক পৌঁছতে বাধা দিচ্ছে, মূলত দু’টি জিনিস। একটি হল সূর্যের অতিরিক্ত ঔজ্জ্বল্য, অন্যটি পৃথিবীর প্রতিফলন।
সূর্যের উজ্জ্বলতায় পর্যায়ক্রমিক পরিবর্তনের সঙ্গে পৃথিবীর অ্যালবেডোর পরিবর্তন কোনওভাবেই যুক্ত নয়। বরং পৃথিবীর প্রতিফলনের পরিবর্তনের কারণেই অ্যালবেডোর পরিমাণও কমেছে। আর সেটা হয়েছে পৃথিবীর মধ্যে কিছু ঘটার ফলেই। বিজ্ঞানীদের অনুমান, আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণেই অ্যালবেডোর পরিমাণ কমে যাচ্ছে ক্রমশ। নাসার Clouds and the Earth’s Radiant Energy System (CERES) প্রোজেক্টের অন্তর্গত স্যাটেলাইট পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে দেখা গিয়েছে যে সাম্প্রতিক সময়ে অর্থাৎ গত কয়েক বছরের মধ্যে পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরের উপর থেকে উজ্জ্বল, প্রতিফলনযোগ্য নিচু মেঘের পরিমাণ ক্রমশ কমে যাচ্ছে। মূলত সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা ক্রমশ বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে এমনটা ঘটছে। আর এই উষ্ণতা বৃদ্ধির মূল কারণ গ্লোবাল ক্লাইমেট চেঞ্জ। এর মধ্যে বিশ্ব উষ্ণায়নেরও প্রভাব রয়েছে।