মঙ্গলগ্রহ দীর্ঘদিন ধরেই জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের কাছে রহস্যের ভাণ্ডার। আর সেই গ্রহেরই এক অদ্ভুত ছবি সম্প্রতি প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সি। লালগ্রহের ওই ছবি দেখলে একঝলকে মনে হবে যেন ওভেনে রেড ভেলভেট কেক তৈরি হয়েছে। তবে আসলে কিন্তু এই ছবি মোটেও তা নয়। বরং মঙ্গলগ্রহের পৃষ্ঠদেশে এমন দৃশ্য দেখা গিয়েছে। আর তা ধরা পড়েছে ট্রেস গ্যাস অরবিটার বা টিজিও- তে। এই ছবি দেখে অবাক ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সির বৈজ্ঞানিকরাও। তাঁরাও বলছেন, একঝলক দেখলে মনে হবে যেন রেড ভেলভেট কেকের উপর মিহি চিনির গুঁড়ো ছড়ানো রয়েছে।
যে বস্তুকে চিনি বলে বিজ্ঞানীরা মজা করেছেন তা আসলে কোথা থেকে এসেছে, সেটা জেনে নেওয়া যাক। ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সি জানাচ্ছে এই সাদা গুঁড়ো বস্তু আসলে মঙ্গলগ্রহে থাকা ওয়াটার-আইস থেকে এসেছে। আর যে গাঢ় লালচে আভা দেখা গিয়েছে সেটা হল রুক্ষ মাটি (রাস্টি মার্সিয়ান সয়েল)। ছবিতে যে গঠন দেখা গিয়েছে তা অন্তত ৪ কিলোমিটার চওড়া। এই ক্র্যাটার বা গহ্বর আসলে মঙ্গলগ্রহের Vastitas Borealis অঞ্চলে অবস্থিত। লালগ্রহের উত্তর মেরুর কাছে Vastitas Borealis নামের এই সমতল এলাকা লক্ষ্য করা যায়। টিজিও, ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সি এবং রাশিয়ান স্পেস এজেন্সি Roscosmos একসঙ্গে একটি অভিযান করেছিল গত জুলাই মাসে। আর তখনই এই ছবি ধরা পড়েছিল টিজিও- তে।
ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সির শেয়ার করা ছবিতে দেখা গিয়েছে, ওই গহ্বর আংশিক ভাবে বরফ-জলে আবৃত। এই গহ্বরের উত্তরমুখী ঢালে প্রাধান্য দেওয়া হয়। আর ওই অংশে সারা বছর গড়ে সূর্যালোক কম পড়ে। এমনটাই জানিয়েছে ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সি বা ইএসএ। এই গহ্বরের চারপাশে রয়েছে একটি তুলনায় গাঢ় অঞ্চল যা ক্র্যাটারের একটা ঝলসে যাওয়া রূপ প্রকাশ করে, অনুমান সেই অংশে ব্যাসাল্টের মতো আগ্নেয়গিরির উপাদান রয়েছে। আর এই ঝলসানো চেহারা দেখেই বোধহয় বিজ্ঞানীদের প্রাথমিক ভাবে এই ছবি দেখে কেকের কথা মনে পড়েছিল।
ইউরোপ এবং রাশিয়ার স্পেস এজেন্সি এক্সোমার্স প্রোগ্রামের অন্তর্ভুক্ত হিসেবে ওই অরবিটার পাঠিয়েছিল মঙ্গলগ্রহে। এখান থেকেই একটি রোভার সরাসরি পাঠানো হবে লালগ্রহে। এই কার্যক্রম হবে চলতি বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে। যে TGO- তে এই অদ্ভুত দেখতে ছবি ধরা পড়েছে, সেই TGO ব্যবহার করা হবে মঙ্গলগ্রহের পৃষ্ঠদেশের বায়ুমণ্ডলীয় গ্যাস পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য এবং লালগ্রহের মধ্যে কোথাও জলের উৎস রয়েছে কিনা তা খুঁজে বের করার জন্য। একে বলা হয় ‘হিডেন ওয়াটার’, যা মঙ্গলগ্রহের পৃষ্ঠদেশের একটি ক্যানিয়নের তলায় সঞ্চিত থাকতে পারে।
২০১৮ সালে এই অরবিটার মঙ্গলগ্রহকে আবিষ্কার করা শুরু করেছিল। এর দু’বছর পর সফলভাবে লালগ্রহে পৌঁছয় অরবিটার। ২০২৩ সালে মঙ্গলগ্রহে যখন দ্বিতীয়বার এক্সোমার্স অভিযান হবে, তখন ডেটা রিলে সার্ভিস প্রদান করবে ওই স্পেসক্র্যাফট।
আরও পড়ুন- Quadrantids Meteor Showers: বছরের প্রথম উল্কাবৃষ্টি, কোথায়-কখন দেখা যাবে?