Earth’s Water Source: পৃথিবীতে জলের উৎস কী? বরফ ধুমকেতু ও মহাকাশের ধূলিকণার নতুন তত্ত্ব নিয়ে জোর চর্চা

New Research On Planet's Water Source: ব্রিটেনের এক দল বিজ্ঞানী সমুদ্রের জলের উৎস নিয়ে প্রচলিত বহির্জাগতিক উৎসের ধারণার সঙ্গেই সহমত পোষণ করলেন। ঠিক কী কবলছেন তাঁরা?

Earth's Water Source: পৃথিবীতে জলের উৎস কী? বরফ ধুমকেতু ও মহাকাশের ধূলিকণার নতুন তত্ত্ব নিয়ে জোর চর্চা
প্রতীকী ছবি
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Dec 12, 2021 | 2:36 PM

পৃথিবীর রং ঠিক কেমন? এই উত্তর হয়তো কারও জানা নেই। তবে পৃথিবীর একটা নীলচে আভা যে রয়েছে, সে কথাটা অস্বীকার করার উপায় নেই। আর পৃথিবীর সেই নীলচে আভা তৈরি হয়েছে জলের জন্যই। কারণ পৃথিবীপৃষ্ঠের তিন চতুর্থাংশ জুড়েই রয়েছে জল। কিন্তু জলের উৎস কী তা নিয়ে বৈজ্ঞানিক মহলে বিতর্ক রয়েছে অনন্তকাল ধরে। এই জলই তো সমুদ্রকে টিকিয়ে রাখে, যুগ যুগ ধরে মানবসভ্যতার লালনপালনও করে এসেছে। কিন্তু তার উৎস নিয়ে এত ধন্দ্ব কেন?

বিজ্ঞানী মহলে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধারণা দেওয়া হয়েছে জলের উৎস সম্পর্কে। কিছু গবেষক যুক্তি দিয়েছিলেন যে, ৪.৫ বিলিয়ন বছর আগে ধুলোর ঘূর্ণায়মান মেঘ এবং গ্যাস থেকে একত্রিত হওয়ার পর থেকে আমাদের পৃথিবীতে জল কোনও না কোনও আকারে উপস্থিত রয়েছে। সংক্ষেপে বলতে গেলে পৃথিবীকে সর্বদা জলাধার হিসেবেই আখ্যা দেওয়া হয়েছে।

যদিও অন্য বিজ্ঞানীরে এই ধারণা আবার মানতে রাজি নন। তাঁদের মতে, শুরুতে পৃথিবী শুকনো এবং জলহীন ছিল। আমাদের মহাসাগরগুলি অনেকটাই পরে দেখা গিয়েছিল – যখন বহির্জাগতিক উত্স থেকে আমাদের পৃথিবীতে বরফ এবং জল, বৃষ্টিরূপে এসেছিল। ৩৩২,৫০০,০০০ কিউবিক মাইল জল এই মুহূর্তের আমাদের পৃথিবীতে রয়েছে। তার পুরোটাই এই ভাবে বহির্জাগতিক উত্স থেকেই এসেছে বলে সেই বিজ্ঞানীরা মতো পোষণ করেছিলেন, যা নিয়ে আজও বিতর্ক রয়েছে।

এবার ব্রিটেনের এক দল বিজ্ঞানী সমুদ্রের জলের উৎস নিয়ে প্রচলিত এই বহির্জাগতিক উৎসের ধারণার সঙ্গেই সহমত পোষণ করলেন। তাঁরা পদার্থের দানা অধ্যয়ন করেছেন এবং সেখান থেকে ২৫১৩ ইতোকাওয়া নামক একটি গ্রহাণুর সন্ধান পেয়েছেন, যা পরবর্তীতে একটি জাপানি রোবটের দ্বারা পরীক্ষা করে পৃথিবীতে ফিরিয়ে নিয়ে আসা হয়েছিল। আর তার পরই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, সমুদ্রের সৃষ্টি বাইরের কোনও উৎস থেকেই।

গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক লুক ডালি এই বিষয়ে বলছেন, “আমরা যে ধুলো নিয়ে অধ্যয়ন করেছি তা ভাল ভাবেই প্রমাণ করে দেয়, আমাদের মহাসাগরগুলি সৌরজগতের অন্যান্য অংশ থেকে আসা জল থেকে সৃষ্টি হয়েছিল।” যুক্তি খাড়া করতে তিনি দাবি করেছেন, “আমাদের এই গবেষণা থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে, পৃথিবীতে থাকা কমপক্ষে অর্ধেক জল আন্তঃগ্রহের ধুলো থেকে ফিল্টার করা হয়েছে।”

২৫১৪৩ ইতোকাওয়া থেকে ফেরানো ধুলোর দানা নিয়ে গবেষণা করতে ডালি এবং তাঁর সহকর্মীরা অ্যাটম দ্বারা পরীক্ষিত টোমোগ্রাফির আশ্রয় নিয়েছেন। এই অসাধারণ কৌশলটি বিজ্ঞানীদের এক এক করে পরমাণুর নমুনা গণনা করতে দেয়। আর এই পরীক্ষার সাহায্যেই বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন যে, গ্রহাণু থেকে ফিরিয়ে আনা ধুলোর দানাগুলিতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে জল রয়েছে। প্রসঙ্গত, ডালি এবং তাঁর সহকর্মীদের এই গবেষণা নেচার অ্যাস্ট্রোনমি (Nature Astronomy) নামক একটি জার্নালে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।

ডালি দাবি করেছেন, এই জল সম্ভবত সৌর বায়ু দ্বারা তৈরি হয়েছিল, যা আদতে সূর্য থেকে প্রবাহিত কণার একটি প্রবাহ মাত্র। এই কণাগুলি সৌরজগতের মধ্য দিয়ে ভেসে থাকা ধুলোর মেঘের অক্সিজেনের পরমাণুর সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করে জলের অণু তৈরি করেছিল যা বছরের পর বছর ধরে সৌরজগতের ইতিহাসে মেঘের মধ্যেই তৈরি হয়েছিল। পরবর্তীতে পৃথিবী সূর্যকে প্রদক্ষিণ করার সঙ্গে সঙ্গে এটি এই মেঘগুলির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয় এবং ধূলিকণাগুলি তাদের মধ্যে থাকা জলকে মুছে ফেলে। লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি একবার যেমনটা বলেছিলেন, “জলই হল পৃথিবীর সমস্ত প্রকৃতির চালিকাশক্তি”, এই বিজ্ঞানীরাও ভিঞ্চির সেই তত্ত্বকে পক্ষান্তরে সমর্থন করছেন।

গুরুত্বপূর্ণ ভাবে লক্ষ্য করার মতো বিষয়টি হল, সূর্যকে প্রদক্ষিণকারী অন্যান্য গ্রহ বা নক্ষত্র এই জল বহনকারী দানাগুলিকে ভাসিয়ে তুলত। পৃথিবীতে সিলিকেটের এই ছোট টুকরোগুলো অনেক আগেই বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু বায়ুবিহীন গ্রহাণু ২৫১৪৩ ইতোকাওয়ার পৃষ্ঠে অবিচ্ছিন্ন ভাবে পড়ে থাকে। সম্ভবত বিলিয়ন বছর ধরে এই ভাবেই পড়েছিল, যতক্ষণ না জাপানি রোবট হায়াবুসা একটি নমুনা তৈরি করে এবং পৃথিবীতে ফিরিয়ে নিয়ে আসে।

এই বিজ্ঞানীদের দলেই রয়েছেন প্রফেসর মার্টিন লি, যিনি গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রফেসর, তিনি জোর দিয়ে আরও বলছেন, সমুদ্রের সব জলই যে সূর্যের ধুলোর দামা থেকে এসেছে, সেটা ভাবা ভুল হবে। তাঁর কথায়, “পৃথিবীতে বিধ্বস্ত হওয়া ধুমকেতু এবং গ্রহাণুগুলির বরফ থেকেও সমুদ্রের জল তৈরি হয়েছে।” এই বক্তব্যের সমর্থনে মার্টিন লি দাবি করেছেন, ধুমকেতু এবং গ্রহাণুগুলির বরফে পৃথিবীর জলের তুলনায় তুলনামূলক ভাবে উচ্চ পরিমাণে হাইড্রোজেন আইসোটোপ ডিউটেরিয়াম থাকে যখন সৌর ধূলিকণাতে তুলনামূলক ভাবে কম মাত্রার ডিউটেরিয়াম থাকে। দুটি উত্স একে অপরকে ভারসাম্যপূর্ণ করার মধ্যে দিয়ে একটি আইসোটোপিক স্বাক্ষর প্রদান করে যা পৃথিবীর জলের সঙ্গে অনেকাংশেই মিলে যায়।

এই আবিষ্কারটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি পৃথিবীতে জলের উত্স সম্পর্কে যথেষ্ট প্রমাণও সরবরাহ করে। এই আবিষ্কার থেকে আরও একটা বিষয় পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে যে, সৌরজগতের অন্যান্য বিশ্বের জল সম্ভবত বরফের আকারে তাদের পৃষ্ঠে ভবিষ্যতের মহাকাশ অনুসন্ধান এবং ছায়াপথের অন্য কোথাও জীবনের সন্ধানের মূল প্রভাবের সঙ্গেও সম্পর্কযুক্ত হতে পারে।

আরও পড়ুন: Exoplanet: বৃহস্পতির তুলনায় ১০ গুণ বড়! নতুন গ্রহের সন্ধান পেলেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা

আরও পড়ুন: Solar Storm: সৌরঝড় নিয়ে নাসার সতর্কতা, মাঝারি প্রভাবের সম্ভাবনা নীলগ্রহের দক্ষিণ ভাগে

আরও পড়ুন: Running Man Nebula: নীহারিকার মনোমুগ্ধকর ছবি! নাসার হাব্বল স্পেস টেলিস্কোপে ধরা পড়ল ‘রানিং ম্যান নেবুলা’