বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কোভিডের তৃতীয় ঢেউ নিয়ে এসেছে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট। কোথাও সংক্রমণ একটু কমছে, কোথাও বা মাত্রাতিরিক্ত হারে বেড়ে চলেছে। আর যেখানে যেখানে সংক্রমণ বাড়ছে, সেখানে জন প্রতি পিসিআর টেস্ট করাটা আরও সমস্যার হয়ে উঠছে। বিকল্প উপায়? কোভিড টেস্ট (Covid-19 Testing) নিয়ে নানাবিধ রিসার্চ চলছে। কয়েক দিন আগেই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নির্ভর কোভিড টেস্টের খবর জানা গিয়েছিল। সেই টেস্ট ৯৮ শতাংশ সঠিক পজিটিভিটি রিপোর্ট দিতে সক্ষম হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। আর এবার আমেরিকার ক্যালিফর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, সান্টা বারব্রা-র একদল বিজ্ঞানী স্মার্টফোন (Smartphone) দিয়ে কোভিড টেস্ট করে দেখলেন। স্মার্টফোনের ক্যামেরা ও ব্যক্টিকাউন্ট (Bacticount) নামক একটি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে এই কোভিড টেস্টিং প্রক্রিয়া খুব দ্রুততার সঙ্গে হতে পারে এবং সময়ব্যাপী, খরচসাপেক্ষ পিসিআর টেস্টের অন্যতম বিকল্প হিসেবেও উঠে আসতে পারে।
টেস্টিংয়ের জন্য কী কী দরকার হবে?
জামা নেটওয়ার্ক ওপেন জার্নালে এই গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, এই প্রক্রিয়ায় কোভিড টেস্ট আপনার মেডিক্যাল বিলের খরচ আর বাড়াবে না। রিসার্চ টিমের তরফ থেকে সমগ্র প্রক্রিয়াটিকে বলা হচ্ছে, স্মার্ট ল্যাম্প। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, মাত্র ২৫ মিনিটেই স্যালাইভা পরীক্ষার মাধ্যমে এই কোভিড টেস্ট সম্পন্ন হতে পারে। টেস্ট করতে দরকার হবে ল্যাবে ব্যবহৃত হয় এমন সাধারণ কিছু কিট, একটি কার্ডবোর্ড বক্স, একটি ছোট্ট হট প্লেট এবং এলইডি লাইড। গবেষকরা বলছেন, স্মার্টফোনের খরচ বাদ দিলে ১০০ মার্কিন ডলারেরও কম খরচ হবে পুরো সেটআপ তৈরি করে নিতে। আর একবার সেটআপ তৈরি হয়ে গেলে তা দিয়ে যত খুশি টেস্টিং করা সম্ভব।
কী ভাবে টেস্টিং হবে?
প্রথমেই স্মার্টফোনে ব্যক্টিকাউন্ট নামক একটি অ্যাপ ডাউনলোড করে নিতে হবে। ব্যক্তির স্যালাইভা বা লালায় প্যাথোজেন রয়েছে কি না, তার উপস্থিতি যাচাই করবে অ্যাপটি। কী ভাবে কাজ করবে? ব্যক্তিকে তাঁর লালা একটি টেস্ট কিটে রাখতে হবে, যেটি হট প্লেটের উপরে বসানো থাকবে। তারপরে সেটিকে এমনই একটি নির্দিষ্ট প্রতিক্রিয়াশীল দ্রবণে ফেলতে হবে যা তৈরি করা হয়েছে ওই থুতুতে থাকতে পারে এমন ভাইরাল আরএনএ প্রশস্ত করার জন্য। প্রক্রিয়াটির নাম লুপ-মিডিয়েটেড আইসোথার্মাল অ্যামপ্লিফিকেশন বা ল্যাম্প। প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হলেই সেটিকে একটি কার্ডবোর্ড বক্সে ঢেকে রাখতে হবে এবং তার উপরে একটি এলএইডি লাইট রেখে দিতে হবে।
এবার স্মার্টফোনের ক্যামেরাটি বক্সের ঠিক উপরে ধরতে হবে। স্মার্টফোনের ক্যামেরা ধরতে পারবে যে এই স্যালাইভা স্যাম্পেল টেস্টে কোনও কালার রিঅ্যাকশন হচ্ছে কি না। কালার রিঅ্যাকশন যদি হয়, তাহলে বুঝতে হবে কোভিড-১৯ পজিটিভ। লালায় যদি প্যাথোজেন উপস্থিত থাকে, তখন দ্রবণে উপস্থিত প্রোবগুলি তার সঙ্গে আবদ্ধ হয় এবং একটি উজ্জ্বল লাল আলো-সহ প্রতিপ্রভ হয়। যত বেশি প্যাথোজেন উপস্থিত থাকবে, তত দ্রুত থুতুর মিশ্রণটি কালার রিঅ্যাকশন দেখাবে এবং সেই মোবাইল অ্যাপটিও তত দ্রুত রেজিস্টার করতে পারবে। একজন ব্যক্তির ভাইরাল লোড অনুমান করা যাবে, কত দ্রুত সেই উজ্জ্বল আলো জ্বলতে শুরু করেছে তার উপর ভিত্তি করে।
টেস্টিংয়ের সময় কোন স্মার্টফোন ব্যবহৃত হয়েছিল?
স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৯ সিরিজের ফোন ব্যবহার করে টেস্টিং করা হয়েছিল. আর তার একটি কারণও রয়েছে। বাটিকাউন্ট অ্যাপটি কেবল মাত্র এই গ্যালাক্সি এস৯ সিরিজের ফোনেই সাপোর্ট করে। সেই মডেলগুলির নির্দিষ্ট ক্যামেরা ফিচার্সের কারণেই এমনটা সম্ভব। যদিও বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন যে, আরও একাধিক স্মার্টফোনে এই অ্যাপ ব্যবহার করা যেতে পারে যেগুলি তাঁরা টেস্ট করে দেখেননি। মোট ৫০ জনের উপরে এই কোভিড পরীক্ষাটি করা হয়েছিল। প্রত্যেকটি টেস্টিংই নিখুঁত ফলাফল দিতে সক্ষম হয়েছে। তার থেকেও বড় কথা হল, এই টেস্টিংয়ের মাধ্যমে কোভিডের অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টও ডিটেক্ট করা যাবে। পাশাপাশি ফ্লু-সহ আরও বিভিন্ন প্যাথোজেনও ডিটেক্ট করতে পারবে এই টেস্টিং প্রক্রিয়া।
প্রযুক্তি-বিষয়ক সংবাদমাধ্যম গিজ়মোডো-র কাছে এই প্রজেক্টের প্রধান রিসার্চার ডক্টর মাইকেল ম্যান দাবি করেছেন, “যদিও পরীক্ষাটি প্রাথমিক ভাবে সীমিত রিসোর্সের জন্য ডিজাইন করা হয়েছিল – গ্রামীণ হাসপাতাল বা সঠিক পরীক্ষার পরিকাঠামো নেই এমন কোনও জায়গায়, এমনকি এটি সহজেই মানুষের বাড়িতে পরীক্ষার জন্য ব্যবহৃত হতে পারে। সত্যি কথা বলতে, এই টেস্টিং কিট দোকানে-দোকানে উপলব্ধ করার মধ্যে গিয়ে সারা দেশে লোকেদের কাছে বিনামূল্যে কোভিড পরীক্ষার জন্য বাইডেন প্রশাসনের পরিকল্পনার বাস্তব রূপ দিতে পারে সস্তার এবং কম সময়ের এই টেস্টিং প্রক্রিয়া।”
আরও পড়ুন: ইতিহাস! এই প্রথম মানুষের বিন্দুমাত্র সাহায্য ছাড়া ল্যাপারোস্কপিক সার্জারি করল রোবট
আরও পড়ুন: ব্যাঙের বাদ যাওয়া পায়ের ‘পুনর্জন্ম’ দিলেন বিজ্ঞানীরা, এবার মানুষের পালা!