Robotic Surgery: ইতিহাস! এই প্রথম মানুষের বিন্দুমাত্র সাহায্য ছাড়া ল্যাপারোস্কপিক সার্জারি করল রোবট
Robot Performs Surgery Without Human Help: মানুষের হস্তক্ষেপ ছাড়াই চারটি শূকরের নরম কোষে ল্যাপারোস্কপিক সার্জারি করেছে রোবটটি। আর এই সার্জারি মেডিক্যাল রোবটিক্সের জগৎে একটি যুগান্তকারী ঘটনা বলেই মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল।
রোবটিক সার্জারি (Robotic Surgery) শুরু হয়ে গিয়েছিল আগেই। কিন্তু তাতে সামান্য হলেও মানুষের প্রয়োজন হচ্ছিল। এবার অপারেশন টেবলে মানুষের সাহায্যে ছাড়াই ল্যাপারোস্কপিক সার্জারি (Laparoscopic Surgery) করে দেখাল রোবট। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের একটি দল সেই রোবটটি তৈরি করেছেন। মানুষের হস্তক্ষেপ ছাড়াই চারটি শূকরের নরম কোষে ল্যাপারোস্কপিক সার্জারি করেছে রোবটটি। আর এই সার্জারি মেডিক্যাল রোবটিক্সের জগৎে একটি যুগান্তকারী ঘটনা বলেই মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল। রোবটটির নাম স্টার – স্মার্ট টিস্যু অটোনমাস রোবট (STAR: Smart Tissue Autonomous Robot)। নরম কোষ সেলাই করার জন্যই বিশেষ ভাবে ডিজাইন করা হয়েছে রোবটটি। গবেষকরা দাবি করেছেন যে, মানুষের থেকেও নিখুঁত ভাবে সার্জারি করেছে স্টার নামের এই রোবট।
সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানে সর্বপ্রথম এই রিপোর্টটি প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়েছে, দ্য স্মার্ট টিস্যু অটোনমাস রোবট বা স্টার চারটি শূকরের শরীরে সফল ভাবে ল্যাপারোস্কপিক সার্জারি করেছে। শূকরগুলির পরিপাক নালীতে অস্ত্রোপচার করে জোড়া লাগিয়েছে রোবটটি। এই মুহূর্তে সেলাই করতে পারে এমন অনেক রোবটই রয়েছে যেগুলি একটি শূকরের অন্ত্র সঠিকভাবে মেরামত করতে সক্ষম। যদিও তা অ্যাকসেস করার জন্য অ্যাক্সেস করার জন্য একটি বড় ছেদ করতে হয় এবং তার জন্যই মূলত মানুষের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন হয়। কিন্তু স্টার-এর ক্ষেত্রে তার প্রয়োজন হয়নি। সে নিজেই এই কাজটি করে দেখিয়েছে।
স্টার নামক রোবটে এমনই একটি চমৎকার ফিচার দেওয়া হয়েছে, যার দ্বারা এটি সূক্ষ্মতা-সহ নরম কোষ সেলাই করতে পারে। এই রোবটে রয়েছে সেলাই করার জন্য একটি বিশেষ সরঞ্জাম এবং একটি অত্যাধুনিক ইমেজিং সিস্টেম যা অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে আরও নির্ভুল ভিজ্যুয়ালাইজেশন দিতে সক্ষম।
নরম কোষের সার্জারি একটা রোবটের পক্ষে চ্যালেঞ্জিং, কারণ তা সবসময়ই যে কোনও রোবটকে অপ্রত্যাশিত বাধার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে একপ্রকার বাধ্য করে। ফলে নিখুঁত সার্জারি অধরাই রয়ে যায় রোবটের কাছে। কিন্তু স্টার নামক এই রোবটে এমনই কন্ট্রোল সিস্টেম ডেভেলপ করা হয়েছে যা রিয়্যাল টাইম ভিত্তিতে সার্জিক্যাল প্ল্যান অ্যাডজাস্ট করতে পারে, কোনও মানুষ প্রশিক্ষিত সার্জেন হলে যেমনটা হয়।
তাহলে রোবটটিকে গাইড কে করছে? রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে, স্ট্রাকচারাল লাইট-বেসড থ্রি-ডাইমেনশনাল এন্ডোস্কোপ এবং মেশিন লার্নিং বেসড অ্যালগরিদম রোবটটিকে সার্জারির সময় গাইড করেছে। গবেষকদের মতে, এর ফলে রোবটটি আরও স্মার্ট এবং নিরাপদ হয়ে উঠেছে।
রোবটটি অন্ত্রের অ্যানাস্টোমোসিসে শ্রেষ্ঠত্ব দেখিয়েছে, যা এমনই একটি পদ্ধতি যার জন্য উচ্চ স্তরের পুনরাবৃত্তিমূলক গতি এবং নির্ভুলতা প্রয়োজন। একটি অন্ত্রের দুই প্রান্তকে সংযুক্ত করা গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সার্জারির সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং পদক্ষেপগুলির মধ্যে একটি, যার জন্য অপরিমেয় নির্ভুলতা এবং ধারাবাহিকতাও প্রয়োজন। এমনকি সামান্য স্লিপ রোগীর জন্য বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
গবেষণাপত্রের মূল লেখক, যিনি এই রোবট প্রস্তুতকারী দলটিকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, সেই জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সহকারী অধ্যাপক অ্যাক্সেল ক্রিগার বলছেন, “সামান্য কাঁপুনিতেও ভুল সেলাই বা ফুটো হয়ে যেতে পারে এই নালি। রোবটের এমন অস্ত্রোপচার মানুষের চেয়ে উল্লেখযোগ্য ভালো। পরবর্তীতেও এমনতর অস্ত্রোপচারে চূড়ান্ত সফলতা এলে তা মানবদেহেও করা সম্ভব হবে।” আরও যোগ করে তিনি বলছেন, “বিশ্বে প্রথমবারের মতো এমন রোবটিক সিস্টেম এসেছে। মানুষের ন্যূনতম সাহায্যে এটি নরম টিস্যুতে অস্ত্রোপচারের পরিকল্পনা, অভিযোজন ও কার্যকর করতে পারে, যা অন্য কোনও রোবট পারে না।”
আরও পড়ুন: ব্যাঙের বাদ যাওয়া পায়ের ‘পুনর্জন্ম’ দিলেন বিজ্ঞানীরা, এবার মানুষের পালা!
আরও পড়ুন: ৭ বছর মহাকাশে ভেসে থাকার পর চাঁদে আছড়ে পড়তে চলেছে স্পেসএক্স রকেট
আরও পড়ুন: মহাকাশচারীদের জন্য টেকসই খাবারের আইডিয়ার খোঁজে NASA, পুরস্কারমূল্য ১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার