পৃথিবীর বাইরের অস্তিত্বকে জানার ইচ্ছে আমাদের চিরন্তন। সেটাকে আরও ভাল ভাবে জানার চেষ্টা চলেছে প্রতিনিয়ত। এবার আরও গভীরে পৌঁছে ব্রহ্মাণ্ডকে চেনা আর জানার জন্য মহাকাশে হাব্ল-এর চেয়েও অনেক গুণ বেশি শক্তিশালী টেলিস্কোপ পাঠাচ্ছে নাসা। তার নাম— জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ (জেডব্লিউএসটি)। প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় আনুমানিক ৭৩,৭০০ কোটি টাকা) খরচ হয়েছে এই টেলিস্কোপ তৈরি করতে। জানা গিয়েছে, নাসার জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপে যে সুবিশাল আয়তনের আয়না রয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে ১৮টি ষড়ভুজাকৃতির বিভাগ বা হেক্সাগোনাল সেগমেন্ট। এর উপরে রয়েছে সোনার আলট্রা-থিন আস্তরণ।
৩১ বছর আগে ১৯৯০ সালের ২৪ এপ্রিল নাসা মহাকাশ পর্যবেক্ষণের জন্য পাঠিয়েছিল হাব্ল স্পেস টেলিস্কোপ। তার পর গত তিন দশকে মহাকাশবিজ্ঞান খুব দ্রুত গতিতে এগিয়ে গিয়েছে। এগিয়ে চলেছে। তাই ব্রহ্মাণ্ডের আরও গভীরে গিয়ে পর্যবেক্ষণ জরুরি হয়ে উঠেছে। তারই জন্য বানানো হয়েছে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ। নাসা জানিয়েছে, আগামী ২২ ডিসেম্বর নতুন শক্তিশালী টেলিস্কোপ মহাকাশে পাড়ি জমাবে ‘আরিয়েন ৫ ইসিএ’ রকেটে চেপে। অত্যন্ত শক্তিশালী সেই রকেট উৎক্ষেপণ করা হবে দক্ষিণ আমেরিকার ফরাসি গায়ানা থেকে।
মহাকাশের এই খুব শক্তিশালী টেলিস্কোপটি বানাতে নাসার সঙ্গে হাত মিলিয়েছে ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (এসা) এবং কানাডিয়ান স্পেস এজেন্সি (সিএসএ)। টেলিস্কোপটিকে যে রকেটে চাপিয়ে পাঠানো হবে মহাকাশে, সেই আরিয়েন ৫ ইসিএ রকেটটি বানিয়েছে ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি। এটি অত্যন্ত শক্তিশালী রকেট। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, আগামী অন্তত এক দশক ধরে এই জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপই হবে নাসা, এসা, সিএসএ, ইসরো, জাক্সা (জাপানের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা), রসকসমস (রুশ মহাকাশ গবেষণা সংস্থা)-এর মহাকাশ পর্যবেক্ষণ ও গবেষণার প্রধান অবলম্বন। নাসার ভাষায়, ‘প্রিমিয়ার অবজারভেটরি ইন স্পেস’। মহাকাশে প্রধান পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র।
নাসা জানিয়েছে, মহাকাশে যে জায়গায় এই অবলোহিত রশ্মির টেলিস্কোপটিকে বসানো হবে সেই জায়গাটি পৃথিবী থেকে ১০ লক্ষ মাইল বা ১৫ লক্ষ কিলোমিটার দূরে। উৎক্ষেপণের পর সেই পথ পাড়ি দিতে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের এক মাস সময় লাগবে। সবকিছু ঠিকঠাক চললে। সেখানে পৌঁছে তার আয়নাগুলি ও সানশিল্ড খুলতে ও অন্যান্য যন্ত্র চালু করতে লাগবে আরও অন্তত মাসছয়েক সময়।
বিজ্ঞান গবেষণার জন্য এই টেলিস্কোপে রয়েছে মূলত ছয়টি যন্ত্র। ‘নিয়ার-ইনফ্রারেড ক্যামেরা (নিরক্যাম)’, ‘নিয়ার-ইনফ্রারেড স্পেকট্রোগ্রাফ (নিরস্পেক)’, ‘মিড-ইনফ্রারেড ইনস্ট্রুমেন্ট (মিরি)’, ‘নিয়ার-ইনফ্রারেড ইমেজার (নিনফি)’, ‘স্লিটলেস স্পেকট্রোগ্রাফ (নিরিস)’ এবং ‘ফাইন গাইডেন্স সেন্সর (এফজিএস)’।