ভেনাস বা শুক্র গ্রহকে বলা হয় পৃথিবীর যমজ গ্রহ। সেখানেই এক রহস্যজনক রাসায়নিক পদার্থের সন্ধান পেয়েছেন বৈজ্ঞানিকরা। মূলত শুক্র গ্রহের আকাশে এই রহস্যজনক রাসায়নিকের হদিশ পাওয়া গিয়েছে। আর তার ফলেই এই গ্রহকে নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা। বিজ্ঞানীরাও এই রহস্যজনক রাসায়নিকের সন্ধান পাওয়ার পর অনুমান করেছেন, শুক্র গ্রহের ভারী বায়ুমণ্ডলে মাইক্রোবিয়াল লাইফ বা সূক্ষ্ম প্রাণের অস্তিত্ব থাকতে পারে। তবে সম্প্রতি নতুন একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে সম্ভবত শুক্র গ্রহে আগ্নেয়গিরি রয়েছে। আর সেখানে অগ্ন্যুৎপাত হওয়ার ফলেই এই রহস্যজনক রাসায়নিক তৈরি হয়েছে এবং তার সন্ধান পাওয়া গিয়েছে শুক্র গ্রহে।
২০২০ সালে শুক্র গ্রহের বায়ুমণ্ডলে কী কী উপকরণ রয়েছে, তা নিয়ে সন্ধান চালিয়েছিলেন। অভিযানের পর দেখা যায় শুক্র গ্রহের মেঘে রয়েছে ফসফিন (Phosphine)। পৃথিবীতেও এই অস্বাস্থ্যকর গ্যাসীয় উপাদান রয়েছে। আর এই গ্যাসের সঙ্গে প্রাণের অস্তিত্বের প্রত্যক্ষ যোগও রয়েছে। ফসফিনের মধ্যে থাকে ফসফরাস এবং হাইড্রোজেনের তিনটি পরমাণু। এইসব হাইড্রোজেন পরমাণু আবার খুব সহজেই ভেঙে যায় এবং বায়ুমণ্ডলের সঙ্গে মিশে যায়। তবে মূলত যে বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের পরিমাণ বেশি, সেখানেই এই হাইড্রোজেন পরমাণু সহজে ভেঙে যায়।
বিজ্ঞানীদের একাংশের দাবি, শুক্র গ্রহের এই ফসফিন আসলে abiotic উৎস থেকে এসেছে। আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলেই এই ফসফিনের উৎপত্তি হয়েছে। উল্লেখ্য, এর আগেও বৈজ্ঞানিকরা বলেছিলেন যে, শুক্র গ্রহ বিভিন্ন ভলক্যানিক অ্যাকটিভিটি বা আগ্নেয়গিরি সংক্রান্ত ক্রিয়াকলাপের কারণে যথেষ্ট উত্তপ্ত বা হট জোন।
ভলক্যানিক অ্যাকটিভিটির ফলে কীভাবে বায়ুমণ্ডলে আসতে পারে ফসফিন?
গবেষক এবং বিজ্ঞানীদের দল বলছেন, সাধারণত আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্ন্যুৎপাত হলে ভূগর্ভস্থ অনেক উপাদানই আগ্নেয়গিরি থেকে লাভা উদগীরণ কিংবা বিস্ফোরণের ফলে সৃষ্ট ধোঁয়ার মাধ্যমে বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়ে। পৃথিবীপৃষ্ঠে আগ্নেয়গিরির বিভিন্ন কার্যকলাপের ফলে এমনটাই হয়ে থাকে। এই একই প্রক্রিয়া হতে পারে শুক্র বা ভেনাস গ্রহেও। অগ্ন্যুৎপাতের ফলে সারফেস এলাকায় থাকার ফসফরাস জাতীয় উপাদান গভীর অংশ থেকে সরাসরি বাতাসে উন্মুক্ত হয়ে যেতে পারে। এর সঙ্গে বায়ুমণ্ডলে থাকা ভলক্যানিক ডাস্ট বা ধুলো-ধোঁয়া মিশে যেতে পারে। এক্ষেত্রে সালফিউরিক অ্যাসিড জাতীয় কোনও উপকরণের সঙ্গে বিক্রিয়ার ফলে তৈরি হতে পারে ফসফিন।
তবে ফসফিনের সন্ধান ভেনাসের অ্যাটমোসফিয়ারে পাওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন ধরনের জল্পনা শুরু হয়েছে। কেউ বলছেন, হয়তো এই গ্রহ বসবাসযোগ্য। অতীতে এখানে প্রাণের অস্তিত্ব ছিল। কেউ বা বলছেন, এই ফসফিন একেবারেই অ্যাবায়োটিক রিসোর্স। অগ্ন্যুৎপাতের ফলেই এই ফসফিন সৃষ্টি হয়েছে। তাই প্রাণের অস্তিত্বের সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই। বরং অত্যন্ত উষ্ণ এই গ্রহ মানুষের বসবাসযোগ্য নয়।
আরও পড়ুন- Hubble Space Telescope: প্রায় একমাস পর অবশেষে ধীরে ধীরে ঠিক হচ্ছে নাসার এই টেলিস্কোপ