কয়েক দিন আগেই গন্তব্যে পৌঁছেছে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ (James Webb Space Telescope)। এবার সেই টেলিস্কোপ থেকে তোলা প্রথম কোনও ছবি প্রকাশ করল নাসা (NASA)। শুক্রবার, ১১ ফেব্রুয়ারি সেই ছবিটি প্রকাশ্যে নিয়ে এসেছে নাসা। সেই সঙ্গেই আবার সামনে এসেছে জেমস-এর তোলা একটি সেলফিও, যা আসলে তার প্রাথমিক আয়নার। কী দেখা গেল সেই ছবিতে? জেমস ওয়েব থেকে তোলা প্রথম ছবিটিতে দেখা গিয়েছে, ২৫৮ আলোকবর্ষ দূরে একটি তারার আলো। দুশো কোটি পিক্সেলের ক্যামেরায় ধরা পড়েছে সেই ‘এইচডি-৮৪৪০৬’ ( HD 84406) নামের একটি নক্ষত্রের আলো। এটি আসলে উরসা মেজর নক্ষত্রপুঞ্জের একটি তারা।
Bonus image! When it’s time to focus, sometimes you need to take a good look at yourself.
This “selfie” taken by Webb of its primary mirror was not captured by an externally mounted engineering camera, but with a special lens within its NIRCam instrument. #UnfoldTheUniverse pic.twitter.com/XtzCdktrCA
— NASA Webb Telescope (@NASAWebb) February 11, 2022
এই নক্ষত্রের আলোর ছবি তুলতে সক্ষম হয়েছে বিস্ময়কর দূরবীক্ষণ যন্ত্রটিতে বসানো নিয়ার ইনফ্রারেড ক্যামেরা বা এনআইআর-ক্যাম। ক্যামেরাটি মোট ১৮টি আয়নার সেগমেন্টের সাহায্যে নক্ষত্রের আলো সনাক্ত করে। প্রথম বারের মতো কোনও নক্ষত্রের আলো একই সঙ্গে সব আয়নায় দেখা গিয়েছে, যা সেলফির মাধ্যমে ধারণ করেছে জেমস ওয়েবের বিশেষ ক্যামেরা। বাল্টিমোরের স্পেস টেলিস্কোপ সায়েন্স ইনস্টিটিউট-এর বিজ্ঞানী মার্শাল পেরিন বলছেন, “সত্যিই একটা বিস্ময়কর মুহূর্ত।”
আরিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মার্সিয়া রাইকে বলছেন, ছবি তোলা এবং টেলিস্কোপ সারিবদ্ধ করার প্রথম ধাপগুলি কতটা ভাল ভাবে এগিয়ে চলেছে, তা দেখে পুরো জেমস ওয়েব টিম আনন্দিত। আগামী কয়েক মাসে টেলিস্কোপটিকে সারিবদ্ধ এবং ফোকাস করার জন্য মানমন্দিরের ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করা হবে। জেমস ওয়েব দলের প্রাথমিক লক্ষ্য হল, এর ১৮টি আয়না সমন্বয় করে একটি তারকার একক ছবি তোলা। বিজ্ঞানী মার্শাল পেরিন আরও যোগ করে বলছেন, “অনুসন্ধানের প্রথম দিকে কেন্দ্রের খুব কাছের সমস্ত ১৮টি অংশ থেকে আলো পেয়েছি। এটি আয়না প্রান্তিককরণের জন্য একটি দুর্দান্ত সূচনা পয়েন্ট।”
মহাবিশ্ব সৃষ্টির শুরুর দিকের নক্ষত্রের সন্ধানে ১,০০০ কোটি ডলার ব্যয় করে জেমস ওয়েব প্রস্তুত করেছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা, কানাডিয়ান মহাকাশ সংস্থা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মহাকাশ সংস্থা ইএসএ। টেলিস্কোপটি গত ২৫ ডিসেম্বর মহাশূন্যের উদ্দেশে ছুটে যায়। সেটি কক্ষপথে পৌঁছানোর পর দুটি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন মহাকাশ বিজ্ঞানীরা। প্রথমটি ছিল, জেমস ওয়েবের ১৮টি আয়নার সেগমেন্ট সারিবদ্ধভাবে বসিয়ে প্রস্তুত করা এবং মহাজাগতিক আলো সংগ্রহ করা। দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জটি ছিল, কোনও নক্ষত্রের আলো একই সঙ্গে ১৮টি আয়নায় সনাক্ত করা। সেটিও শেষমেশ সম্ভবপর হয়েছে। ফলে একটি নক্ষত্রের আলো জেমস ওয়েবের চোখে ১৮টি ডটের মতো মনে হয়।
বিশালাকার এই টেলিস্কোপে রয়েছে একটি ষড়ভুজাকার আয়না, যার প্রতিটি বাহুই একটি কফি টেবলের আকারের। এগুলিই একত্রিত হয়ে ফোকাস তৈরি করে। জুনের শেষ থেকেই পুরোদস্তুর পর্যবেক্ষণের কাজটি শুরু হয়ে যাবে। হাবল টেলিস্কোপের উত্তরসূরি জেমস আসলে একটি ইনফ্রারেড অবজ়ারভেটরি। ইনফ্রারেড রশ্মির মাধ্যমে মহাজাগতিক বস্তুগুলিকে চিহ্নিত করবে এটি।
আরও পড়ুন: বৃহস্পতির উত্তর মেরুতে পিৎজার টুকরো! ঝড়ের নাম নাকি ‘পেপেরোনি’, দেখুন বিস্ময়কর ভিডিয়ো
আরও পড়ুন: মঙ্গলের বুকে নতুন রেকর্ড গড়ল নাসার পারসিভের্যান্স মার্স রোভার, কী সেই রেকর্ড