আবহাওয়া এবং জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে পৃথিবীতে বিভিন্ন রকমের পরিবর্তন দেখা দেয়। কখনও বা ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের আকার নেয়। এর মধ্যে খুব পরিচিত হল বন্যা। এ যাবৎ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ে আবহাওয়া এবং জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি নাসা জানিয়েছে যে, ২০৩০ সালে ‘রেকর্ড ফ্লাডিং’ অর্থাৎ বন্যা হতে পারে। মার্কিন স্পেস এজেন্সির দাবি, চাঁদের ঘূর্ণনের কারণে আবহাওয়ার এই পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাবে। আর রেকর্ড ফ্লাডিং বলতে সেই বন্যা পরিস্থিতিকে বোঝায়, যা কার্যত এতদিন দেখা যায়নি। অনুমান, এই বন্যার প্রভাবও যথেষ্ট বিধ্বংসী হতে পারে।
পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদের ‘অক্সিলেশন’- এর ফলে উত্তাল হতে পারে ধরিত্রীর জলভাগ। তার ফলে বিধ্বংসী বন্যা হতে পারে পৃথিবীর বুকে। নিজ কক্ষপথে চাঁদের ঘূর্ণনের ফলেই এই পরিবর্তন দেখা দিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। বৃদ্ধি পেতে পারে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা। অর্থাৎ পৃথিবীতে জলের পরিমাণ বেড়ে গিয়েছে প্রবল জলোচ্ছ্বাসের সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলে বন্যা হতে পারে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে। Nature Climate Change (June 21) এখানে প্রকাশিত হয়েছে নাসার এই গবেষণার প্রতিবেদন।
গবেষণার মাধ্যমে মার্কিন স্পেস এজেন্সি মূলত জানিয়েছে যে, চাঁদ যখন নিজের কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করে সেই সময়েই অত্যধিক টানের কারণে পৃথিবী পৃষ্ঠের জলস্তর বাড়তে পারে। আর তা থেকেই বন্যার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সাধারণ বন্যার তুলনায় এর প্রভাব অনেক জোড়ালো, বিধ্বংসী হয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এমনিতে উপকূল অঞ্চলে ২ ফুটের বেশি ঢেউয়ের উচ্চতা হলে তাকে ‘হার্মফুল ফ্লাডিং’ বলে। যদি এরকমই উঁচু হয়ে জল লোকালয়ে আছড়ে পড়ে, তবে তার প্রভাব যে মারাত্মক হবে সেটা আন্দাজ করাই যায়। প্রাণহানির সঙ্গে সঙ্গে প্রভূত ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে অন্যান্য সম্পদেরও।
নাসার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৯৩০- এর মধ্যভাগে এই ধরনের হার্মফুল ফ্লাড- এর পরিমাণ বেড়ে গিয়েছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপকূলীয় এলাকায় এক দশকে অন্তত তিন থেকে চারটি বড় বন্যা হয়েছিল। বছরের কোন নির্দিষ্ট সময়ে এই বন্যা হবে, তার প্রভাব কেমন হবে কিংবা এর সম্পর্কে কোনও কিছুই আগে থেকে বোঝা সম্ভব নয়। আর প্রবল জলোচ্ছ্বাস এবং বন্যার কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠে থেকে তুলনায় নিচু এলাকাগুলোর অবস্থা হয় সবচেয়ে সঙ্গিন। বন্যার প্রভাব সেখানেই সবচেয়ে বেশি হয় বলে জানিয়েছেন, নাসার অ্যাডমিনিস্ট্রেটর বিল নেলসন। তিনি আরও জানিয়েছেন, চাঁদের ‘গ্র্যাভিটেশনাল পুল’ বা মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণেই পৃথিবী পৃষ্ঠে সমুদ্রের জলস্তর বাড়তে থাকে। তার ফলে উপকূলীয় এলাকায় বন্যা হয়।
নাসার এই গবেষণার পুরোধা এবং হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফিল থম্পসন জানিয়েছেন, নিজের কক্ষপথে একবার প্রদক্ষিণ করতে চাঁদের সময় লাগে ১৮.৬ বছর। এই পুরো সময়ের অর্ধেক বছর জুড়ে হাই টাইড বা উচ্চ জোয়ার হয় স্বাভাবিকের তুলনায় কম। অন্যদিকে, লো টাইড বা নিম্ন জোয়ার হয় স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি পরিমাণে। কিন্তু বাকি বছর জুড়ে ঠিক এর উল্টো অবস্থা দেখা যায়। এই পর্যায়কে বলে চাঁদের tidal amplification phase। বিজ্ঞানীদের অনুমান ২০৩০ সালে চাঁদের এই পর্যায় দেখা যাবে। আর তার ফলেই বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, দুর্যোগের পরিমাণ বাড়তে পারে। ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে সাধারণ মানুষের জনজীবন।
আরও পড়ুন- নতুন জিও ইমেজিং স্যাটেলাইট GISAT-1 লঞ্চ করতে চলেছে ইসরো, ১২ অগস্ট উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা