ইতিহাস সৃষ্টি করেছে মার্কিন স্পেস এজেন্সি নাসা। সূর্যের একদম বাইরের অংশকে বলা হয় করোনা। সেখানে প্রবেশ করেছে নাসার মহাকাশযান Parker। বহু আশা নিয়ে Parker Solar Probe শুরু করেছিল। এই অভিযানের লক্ষ্য ছিল সূর্যকে ছুঁয়ে আসা। আর বাস্তবে সেটাই হয়েছে। নাসার মহাকাশযান সূর্যের করোনাতে প্রবেশ করেছে। এই প্রথম এমন ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটেছে। এই প্রথম মনুষ্যসৃষ্ট কোনও স্পেসক্র্যাফট সূর্যের বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করেছে। গত এপ্রিল মাসেই এই ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী থেকেছিল নাসা। কিন্তু বিভিন্ন ডেটা পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও গবেষণার পর এবার নিশ্চিতভাবে ঘোষণা করা হয়েছে যে, প্রথম মানুষের তৈরি কোনও মহাকাশযান সূর্যের করোনা অঞ্চলে প্রবেশ করতে পেরেছে।
নাসার এই Parker Solar Probe, মহাকাশ অভিযান বা তদন্ত চলাকালীন সূর্যের করোনা অঞ্চলে প্রবেশ করার পর স্পেসক্র্যাফটটি অতিরিক্ত তাপ এবং বিকিরণ বা রেডিয়েশন অনুভব করেছে। কিন্তু সেই চরম পরিস্থিতিতেও টিকে গিয়েছে এই মহাকাশযান। আর তার ফলেই বিজ্ঞানীরা সঠিক ভাবে বুঝতে সক্ষম হচ্ছেন যে সৌরমণ্ডলের সবচেয়ে জনপ্রিয় নক্ষত্র সূর্য আসলে ঠিক কেমন। কীভাবে সূর্যের পৃষ্ঠদেশে বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপ সেটাও বোঝা সম্ভব হবে বলে আশাবাদী বৈজ্ঞানিকরা।
গত ২৮ এপ্রিল নাসার এই সৌর অভিযানের মূল স্পেসক্র্যাফট Parker পার হয়েছিল Alfvén ক্রিটিকাল বাউন্ডারি। এই Alfvén ক্রিটিকাল বাউন্ডারি আসলে সূর্যের করোনার আউটার এজ বা বাইরের অংশ। এখানে বিভিন্ন সৌর উপাদান সূর্যের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি এবং চৌম্বকীয় শক্তির মাধ্যমে ভেঙে যায় এবং মহাকাশের দিকে দ্রুত গতিতে ছুটে যায়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, নাসার মহাকাশযান মাত্র পাঁচ ঘণ্টায় এই Alfvén ক্রিটিকাল বাউন্ডারির উপরে এবং নীচে তিনবার পার হয়েছে।
প্রথম অভিযানে সাফল্যের পর এখন আরও আত্মবিশ্বাসী নাসার পার্কার সায়েন্স টিম। করোনার আরও গভীর অঞ্চলে অভিযান চালাতে চায় তারা। বিবিসি- র একটি রিপোর্ট অনুসারে, নাসার এই পার্কার মহাকাশযান ২০২৫ সালের মধ্যে ফটোস্ফিয়ারের (সূর্যের দৃশ্যমান পৃষ্ঠদেশ) ৭ মিলিয়ন কিলোমিটার মধ্যে পৌঁছতে পারবে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সূর্যের করোনা অঞ্চল নিয়ে গবেষণা করতে বরাবরই আগ্রহী জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। সূর্যের এই অংশ নিয়ে অসীম কৌতূহল রয়েছে বিজ্ঞানীদের মধ্যে। নাসার heliophysics science division- এর ডিরেক্তর নিকোলা ফক্স জানিয়েছেন, সূর্যকে ছুঁতে পারার এই ঘটনা মানজাতির জন্য বিশাল একটা সাফল্য। চাঁদে অবতরণের ফলে বিজ্ঞানীরা যেমন চন্দ্রপৃষ্ঠ সম্পর্কে অজানা সব তথ্য জানতে পেরেছিলেন, ঠিক তেমনই সূর্যকে ছুঁয়ে আসার পর পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে থাকা এবং সৌরমণ্ডলের সবচেয়ে জনপ্রিয় নক্ষত্র সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানা সম্ভব হবে।
আরও পড়ুন- Swirling Galaxy: হাব্বল টেলিস্কোপে ধরা পড়ল ঘূর্ণায়মান ছায়াপথের বিস্ময়কর ছবি, মুগ্ধ মহাকাশ প্রেমীরা