
আলিপুরদুয়ার: পেরিয়েছে প্রায় ২৭৯ বছর। কাঁটাতারে ছিন্নভিন্ন হয়ে দ্বিখণ্ডিত হয়েছে বঙ্গ। সীমারেখা বরাবর এখন কেবলই প্রহরা। তবে সেই সীমানা পেরিয়েই ওপারের মাটি এসে পৌঁছয় এ পারে। নয়ত যে পুজোই হবে না! প্রতিমাই তৈরি হবে না! ভাবছেন, এমন হয় নাকি? বিলক্ষণ হয়। আলিপুরদুয়ারের চৌধুরীবাড়ির পুজোর ইতিহাস এমনই।
চৌধুরী পরিবারের তরফে জানা গিয়েছে, বাংলাদেশের ময়মনসিংহের কাঁঠালগ্রামে প্রথম পুজোর শুরু। অনুপ নারায়ণ মুখোপাধ্যায় ছিলেন কাঁঠালগ্রামের জমিদার। তত্কালীন অবিভক্ত বঙ্গের শাসক ব্রিটিশদের দ্বারা তিনি চৌধুরী উপাধিতে ভূষিত হন। সেই থেকে মুখোপাধ্যায় পরিবার পরিচিতি পায় চৌধুরী পরিবার হিসেবে। তারপর কেটে গিয়েছে দীর্ঘ সময়। ১৯৫০ সালে দেশভাগ আবহে এপারে চলে আসেন চৌধুরীরা। তখন থেকেই আলিপুরদুয়ারে বাস। মাঝে এক পুরুষ পুজো হয়নি চৌধুরী বাড়িতে। তারপর থেকে রিমোহন চৌধুরী ও গঙ্গাধর চৌধুরীর আমলে বংশ পরম্পরায় দুর্গাপুজো হয়ে আসছে।
তবে আলিপুরদুয়ারে চলে এলে কী হবে! চৌধুরী বাড়ির পুজোয় এখনও লাগে বাংলাদেশের মাটি। ওপারের মাটি ছাড়া পুজো তো দূর প্রতিমাই তৈরি হয় না। গোটা প্রতিমাই তৈরি হয় ওপারবাংলার মাটি দিয়ে। পুজোর নিয়ম সাবেকি। তবে এই পুজোয় বলির প্রচলন রয়েছে। আগে এখানে পাঁঠা ও মহিষ বলি হত। এখন কেবল প্রতীকী হিসেবে চালকুমড়ো বলি হয়। উল্লেখ্য, কলকাতা শোভাবাজার রাজবাড়িতেও পূর্বে বলি দেওয়ার প্রচলন ছিল। তবে এখন সেখানে আখ, চালকুমড়ো দিয়ে দুই রকমের প্রতীকী বলি দেওয়া হয়।
চৌধুরী পরিবারের বর্তমান কর্তার কথায়, “পুজো এখানে নিয়ম মেনেই সাবেকি ঘরানায় হয়। এখন তো সব আত্মীয়ই ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। কেউ ইংল্যান্ড কেউ বা নয়ডা। এই পুজোর সময়টাতেই সকলে একসঙ্গে হই। পুজোর চারদিনের ছুটি সবাই জমিয়ে রাখে।” স্মৃতিমেদুর চৌধুরী কর্তা আরও বলেন, “প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় ও তাঁর স্ত্রী এই বাড়ির পুজোতে আসতেন। তখন পাঁঠা বলি হত। সেই দেখে তিনি প্রশ্নও করেছিলেন। যদিও তারপর থেকে বলি দেওয়া কার্যত উঠে যায়। তবে রীতি তো বন্ধ করে দেওয়া যায় না। তাই এখন চালকুমড়ো আর আখ বলি দেওয়া হয়। আমাদের একান্নবর্তী পরিবারের সকলে মিলেই এই পুজো করি। এলাকার মানুষও যোগ দেয়।”
তবে করোনার জন্য এ বারের পুজোয় বেশ কিছু কাটছাঁট করা হয়েছে চৌধুরী বাড়িতে। বিশেষ বাইরের লোকের জমায়েত যাতে না হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে, আলিপুর আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস, রবিবার থেকে জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, দার্জিলিং, কালিম্পং-সহ গোটা উত্তরবঙ্গ জুড়ে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ ভারী বৃষ্টি হতে পারে। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, রবিবার থেকে আগামী ৬ অক্টোবর পর্যন্ত উত্তরবঙ্গে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। যার জেরে উত্তরের নদীগুলির জলস্তর বাড়ার পাশাপাশি পাহাড়ি এলাকায় ধস নামতে পারে বলে আশঙ্কা করছে প্রশাসন। ফলে পুজোতেও ব্যাঘাত দেখা দিতে পারে।
আরও পড়ুন: Suvendu Adhikari: ‘নিজের চেয়ার বাঁচাতে ৫০ লক্ষ মানুষকে ডুবিয়েছেন দিদিমণি’, বিস্ফোরক শুভেন্দু
আরও পড়ুন: Durga Puja 2021: মাত্র ৮ ইঞ্চি! ক্ষুদ্রতম দুর্গাপ্রতিমা বানিয়ে নজির গড়ল ন’বছরের দীপ