বাঁকুড়া: চালু হয়েছিল মাত্র ১৪ দিন। তারপরেই থমকে গেল মুখ্যমন্ত্রীর সাধের ‘দুয়ারে রেশন’ (Duare Ration) প্রকল্প। ‘পরিকাঠামো নেই’ বলেই অভিযোগ করেছেন রেশন ডিলারদের একাংশ। ডিসেম্বরেই তাই দুয়ারে রেশন পৌঁছনো সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দিল বাঁকুড়া জেলা এমআর ডিলার অ্যাসোসিয়েশন। আর এরফলে সমস্যায় পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
মঙ্গলবার বাঁকুড়া স্টেশন রোডে একটি সাংবাদিক সম্মেলন করেন রেশন ডিলাররা। সেখানে তাঁরা স্পষ্টই জানান, ইচ্ছে থাকলেও সঠিক পরিকাঠামোর অভাবে দুয়ারে দুয়ারে রেশন পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে আগের নিয়মে দোকান থেকে সামগ্রী সংগ্রহ করতে পারবেন গ্রাহকরা।
এদিকে রেশন না পেয়ে রীতিমতো সমস্যায় তালডাংরা ব্লকের বারো মেসিয়া, লেলচ্যাগোড়া সহ একাধিক এলাকার মানুষ। তাঁরা বাড়ির থেকে দূরে গিয়ে রেশন সংগ্রহ করবেন নাকি রেশনের জন্য অপেক্ষা করবেন। এক গ্রাহকের কথায়, “দুয়ারে রেশনের কথা কেবল শুনেছি। এখানে তো রেশন এসে পৌঁছয়নি। আমাকে তো গিয়েই দোকান থেকে রেশন নিতে হচ্ছে।” অন্য এক গ্রাহক বলছেন, “অনেক জায়গায় শুনছি দুয়ারে রেশন চলছে। কিন্তু আমাদের এখানে এখনও শুরুই হয়নি। আদৌ দেবে কি না জানি না।”
এদিকে, রেশন ডিলারদের ঠিক কী অভিযোগ? বাঁকুড়া ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক গুরুপদ ঢক বলেন, “দুয়ারে রেশনের পক্ষেই আমরা। কিন্তু আমাদের কোনও পরিকাঠামো নেই। পরিকাঠামো তৈরির জন্য এখনও কোনও সরকারি সাহায্য পাইনি আমরা। ডিসেম্বর মাসে দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে রেশন দেওয়া সম্ভব নয়। খাদ্য দফতরের থেকে আমরা এক মাস সময় চাইছি। মাসখানেক সময় পেলেই আবার জানুয়ারি থেকে তা চালু করতে পারব বলে মনে করছি।”
এদিকে অ্যাসোসিয়েশনের এই দাবি মানতে নারাজ বাঁকুড়া জেলা খাদ্য সরবরাহ দফতর। এক আধিকারিকের কথায়, “দুয়ারে রেশন প্রকল্পটি সরকারি প্রকল্প। এই প্রকল্প যাতে চলে, তার জন্য সাধ্য মতো চেষ্টা করব আমি। ডিলারদের অনুরোধ করব, সরকারি নীতি অমান্য করবেন না। যা সমস্যা রয়েছে, তা সমাধান করা হবে। প্রত্যেক ডিলারকেই দুয়ারে রেশন চালু রাখতে হবে। তা না হলে খাদ্য দফতর কড়া ব্যবস্থা নেবে।”
শুধু দুয়ারে রেশন পৌঁছে দেওয়াই নয়, রেশন সামগ্রী বণ্টন নিয়েও জটিলতা তৈরি হয়েছে বলে দাবি রেশন ডিলারদের। তাঁরা জানিয়েছেন, এখনও বহু গ্রাহক নিজের রেশন কার্ডের সঙ্গে আধার নম্বর যুক্ত না করায় তাঁদেরকে বরাদ্দ রেশন সামগ্রী দেওয়া যাচ্ছে না। তাঁদের আরও দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণাই সার। যেখানে ১৫০০ গ্রাহক একটি এলাকায়, সেখানে সরকারিভাবে মাত্র ১২ হাজার টাকার কমিশন পাওয়া যায় তবে খুব সমস্যায় পড়বেন ছোট রেশন ডিলাররা।
আর দুয়ারে রেশন-এ রেশন বন্টন নিয়ে এই সমস্যাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। বিজেপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর বিভ্রান্তিকর ঘোষণার জন্যই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। সমস্যায় পড়ছেন রেশন ডিলাররা। কোনও পরিকল্পনা ছাড়া এভাবে রেশন বন্টন করলে আদপে সমস্যাই বাড়বে বলে দাবি করছে পদ্ম শিবির। পাল্টা তৃণমূলের দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর এই স্বপ্নের প্রকল্প পূরণ করতেই হবে। সমস্যা যা হচ্ছে তা সমাধান করা সম্ভব।
তবে, কেবল বাঁকুড়াতেই নয়, জেলায়-জেলায় অব্যাহত রেশন (Ration) নিয়ে বিতর্ক। মুখ্যমন্ত্রী স্বপ্নের প্রোজেক্ট ‘দুয়ারে রেশন’ কোথাও গিয়ে যেন বাধা প্রাপ্ত হচ্ছে। আরামবাগের রেশন ডিলারদের অভিযোগ, রেশন দ্রব্য বণ্টনে সরকার ডিলারদের সঙ্গে চরম জালিয়াতি করছে। পাশাপাশি ডিলাররা পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেয় যতদিন না পর্যন্ত যাবতীয় পরিকাঠামো ঠিক হয় তত দিন পর্যন্তই তারা রেশনের মালপত্র আর দেবেন না। রেশন দোকান পুরোপুরি বন্ধ রেখে দেবেন।
একই সঙ্গে ওই রেশন ডিলারদের বক্তব্য, এই পরিকাঠামোতে দুয়ারে রেশন দেওয়া সম্ভব নয়। তাঁদের দাবি,সরকারি নির্দেশে যে ভাবে রেশনের দ্রব্য দেওয়া হচ্ছে তাতে জনগণকে কোনও ভাবেই রেশন দেওয়াই যাবে না। কারণ সরকারি খাতায় ও মেশিনে দেখানো হচ্ছে একশো শতাংশ দ্রব্য দেওয়া হচ্ছে, অথচ তাঁরা পাচ্ছেন চুরানব্বই শতাংশ। শুধু আরামবাগ নয়, কোচবিহার থেকে শুরু করে একাধিক জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন রেশন ডিলাররা। যদিও, সরকারের তরফে এখনও কোনও বিশেষ পদক্ষেপ করা হয়নি।