AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

Deocha Pachami Project: বৈধভাবে ক্রাশার চালানোর দাবি আদিবাসীদের, গ্রিন ট্রাইবুনালের নির্দেশে পাচামিতে বিশেষ পর্যবেক্ষক দল

Birbhum: আদিবাসীদের অভিযোগ,  দীর্ঘদিন ধরে বেআইনিভাবে এই পাথর খাদান ও ক্রাশার চালানো হয়।

Deocha Pachami Project: বৈধভাবে ক্রাশার চালানোর দাবি আদিবাসীদের, গ্রিন ট্রাইবুনালের নির্দেশে পাচামিতে বিশেষ পর্যবেক্ষক দল
দেউচা পাচামি , নিজস্ব চিত্র
| Edited By: | Updated on: Nov 30, 2021 | 6:04 PM
Share

বীরভূম: সিঙ্গুরে যেভাবে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল সেইভাবে পাচামিতে জমি অধিগ্রহণ করা হবে না এমনটা আগেই ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্য সরকারের ঘোষিত প্যাকেজ নিয়ে ইতিমধ্যেই সরকারি আধিকারিকদের সঙ্গে পাচামির আদিবাসীদের একপ্রস্ত বৈঠক হয়েছে। এ বার, ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইবুনালের নির্দেশে দেউচা পাচামির (Deocha Pachami) একাধিক খাদান ঘুরে দেখলেন রাজ্য সরকার নিয়োজিত চার সদস্যের বিশেষ প্রতিনিধি দল।

সূত্রের খবর, এদিন সরকারি আধিকারিকরা পাচামির খাদান এলাকার চারপাশ ঘুরে দেখেন। এলাকায় কতটা দূষণ হচ্ছে, কয়লা খাদান হলেই বা কতটা দূষণ হতে পারে তা খতিয়ে দেখতেই এদিন আধিকারিকরা খনি এলাকায় আসেন। যদিও তা নিয়ে প্রকাশ্যে তাঁরা বিশেষ কিছু বলতে চাননি।

এদিন সরকারি আধিকারিকদের সঙ্গে ছিলেন মহম্মদবাজার ব্লক ভূমিসংস্কার দফতরের আধিকারিক রণজয় মণ্ডল। আদিবাসীদের অভিযোগ,  দীর্ঘদিন ধরে বেআইনিভাবে এই পাথর খাদান ও ক্রাশার চালানো হয়। আদিবাসী গাঁওতার জেলা সম্পাদক রবীন সোরেনের মন্তব্য, “গ্রিন ট্রাইবুনালের তরফে সরকারি আধিকারিকরা খাদান এলাকায় আসেন। আমরা বারবার দাবি করেছি আইনিভাবে খাদান ক্রাশার চলুক, এরপর কয়লা শিল্প হলে যদি দূষণ বৃদ্ধি পায় তখনও আমাদের আন্দোলন জারি থাকবে।”

প্রসঙ্গত, প্যাকেজ ঘোষণার পর থেকেই দেউচা পাচামির পিছু ছাড়ছে না বিতর্ক। মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাসবাণীতে সংশয় কাটেনি আদিবাসীদের। গত রবিবার সরাসরি মাঝি হারামদের সঙ্গে বৈঠক করেন সরকারি আধিকারিকদের বিশেষ প্রতিনিধি দল। ওদিন, রাজ্য সরকারের অধীনস্ত ৯ জনের বিশেষ প্রতিনিধি একটি দল দেউচা পাচামি এলাকার হরিণশিঙা গ্রামে যান। গ্রামে গ্রামে ঘুরে প্রকল্প নিয়ে কথা বলার পাশাপাশি গ্রামের মানুষের সুবিধা-অসুবিধার দিকগুলিও শুনবেন তাঁরা। মত নেবেন গ্রামবাসীদের। পাশাপাশি, মাঝি হারামের সংগঠনের সঙ্গেও এদিন বৈঠক করেন সরকারি আধিকারিকরা। এরপর জেলাশাসক বিধান রায়ের সঙ্গেও বৈঠক করেন সরকারি আধিকারিকরা।

বৈঠক শেষে ওই বিশেষ প্রতিনিধি দলের সদস্য তন্ময় ঘোষ বলেন, “আজ আমরা হরিণশিঙা গ্রামে ঘুরলাম। গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বললাম। মাঝি হারামের সঙ্গেও কথা হয়েছে। স্থানীয়দের তরফে আমরা মিশ্র প্রতিক্রিয়া পেয়েছি। অনেকেই বলেছেন, তাঁরা প্যাকেজ নিয়ে অখুশি। অনেকেই বলেছেন তাঁদের প্যাকেজ নিয়ে কিছু সমস্যা রয়েছে। সেইসকল সমস্যাগুলি মিটলে তবেই তাঁরা বাকি চিন্তাভাবনা করবেন।”

কিছুদিন আগেই, কয়লা-প্রকল্পের বিরুদ্ধে প্রায় আট থেকে দশটি গ্রামের ২৫০ জন গ্রামবাসী আদিবাসী নেতা মাঝি হারামের ডাকে জমায়েত করেন। তাঁদের অভিযোগ, সরকার কোনওরকম আলোচনা না করেই এই প্যাকেজের কথা ঘোষণা করেছে। এই প্রকল্প শুরু হলে দেউচার ‘ভূমিপুত্র’-দের বিপদের মুখে পড়তে হবে বলেই অভিযোগ। তাই, কয়লা প্রকল্পের বিরুদ্ধে আদিবাসী নেতা মাঝি হারামের সংগঠন একটি জমায়েতের ডাক দেয়। গত বৃহস্পতিবার, সেই নির্দেশ অনুসারেই, গ্রামবাসীরা ওই সভায় অংশ নেন।

দেউচার এক আদিবাসীর কথায়, “সরকার আমাদের সঙ্গে কোনওরকম আলোচনা করেনি। তার আগেই সরকার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে। আমরা জমি দিতে রাজি নয়। কয়লাপ্রকল্প আমরা চাই না। আমরা আমাদের জমি চাই। এখন বাড়িঘর চলে গেলে আমরা কোথায় যাব!”

আদিবাসী গাঁওতা নেতা রবীন সোরেন বলেন, “আদিবাসীরা ভয় ভীতির মধ্যে রয়েছে। প্রশাসন গ্রামে এসে সরাসরি কথা বলুন। তাহলে সমস্যা মিটতে পারে। কারণ গ্রামবাসীরা সংশয়ে রয়েছে। যে প্যাকেজ দেওয়া হয়েছে তা আমাদের বিশেষ কিছু পছন্দ হয়নি। যেমন উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, টিউবয়েলের জন্য ৫হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া অত্যন্ত কম। স্টেটল্যান্ডে বাড়ি রয়েছে যাঁদের, তাঁদের আশঙ্কা বেশি।”

কিছুদিন আগেই, দেউচা পাচামি নিয়ে সিউড়ির রবীন্দ্রসদনে স্থানীয় আদিবাসীদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রশাসনিক কর্তারা। সেই বৈঠকে বীরভূম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন জেলা শাসক বিধান রায়, বীরভূম জেলা পুলিশ সুপার নগেন্দ্র নাথ ত্রিপাঠী, সিউড়ি বিধানসভার বিধায়ক বিকাশ রায় চৌধুরী-সহ অন্যান্য প্রশাসনিক কর্তারা। বৈঠকে প্রকল্প সম্পর্কিত সকল তথ্য তুলে  ধরা হয় আদিবাসী নেতাদের সামনে।

এর কিছুদিন পরেই, সেই প্রকল্প ‘বোঝাতে’ বিশাল বাইক মিছিল করে তৃণমূল। দেউচা পাচামি কয়লা খনি প্রকল্পের প্রচারের লক্ষ্যে ওই এলাকার গ্রামে গ্রামে বাইক মিছিল করা হয়। বাইকারদের হাতে দেখা যায় তৃণমূল কংগ্রেসের পতাকা। এদিকে দলের ধ্বজা উড়িয়ে প্রকল্প বোঝা নামে জনমানসে ভীতি সঞ্চার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করে বিরোধীরা। এরপরেই কার্যত বেঁকে বসেন আদিবাসীদের একাংশ।

দেউচা পাচামি প্রকল্প চালু হলে, মূলত খনি এলাকায় কয়লা উত্তোলনের কাজ শুরু হবে। এরফলে আদিবাসীদের যে জমি ও বাড়ি তা সরকারের অধীনে চলে যাবে। পরিবর্তে যে পুনর্বাসনের প্যাকেজ দেওয়া হবে, তা যথাযথ ও যথেষ্ট নয় বলেই মনে করছেন তাঁরা। পাশাপাশি, তড়িঘড়ি ওই এলাকা পরিবরর্তিত হতে পারে আসানসোল-রানিগঞ্জের মতো এক বিরাট শিল্পতালুকে। ফলে, গোটা ভৌগোলিক ও সামাজিক পরিবেশটাই বদলে যেতে পারে। সেদিক থেকে আদিবাসীরা কোথায় যাবেন এই সংশয়টাই তাঁদের কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে।

উল্লেখ্য, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কয়লা খনির সন্ধান পাওয়ার সুবাদে বীরভূমের দেউচা পাচামি কোল ব্লক এলাকার নাম এখন অনেকেরই জানা। বীরভূমের দেউচা পাচামি কয়লা খনির কাজ শুরুর বিষয়ে সবুজ সংকেত দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। প্রায় ১২ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে অবস্থিত দেউচা পাচামি কোল ব্লক এলাকা। প্রাথমিক সমীক্ষা অনুযায়ী প্রায় ৩০১০টি পরিবার এই খনি অঞ্চলে বসবাস করেন যার মধ্যে ১০১৩টি আদিবাসী পরিবার।

ঘোষিত সরকারি প্যাকেজে বলা হয়েছে, প্রায় ১৭ জন খাদান মালিক বাড়ির দাম ও ক্ষতিপূরণ পাবেন। ত্রাণ ও পুনর্বাসন প্যাকেজের অধীনে বাড়ি দেওয়া হবে সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দাদের। ওই এলাকায় থাকা বাসিন্দা, যাঁদের বাড়ি সহ জমি রয়েছে, তাঁরা পাবেন ১০ থেকে ১৩ লক্ষ টাকা। এছাড়া অন্যান্য সুবিধা দিতে আরও পাঁচ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে। এছাড়া বাড়ি বা জমি হারানো অথবা বর্গদাররা পরিবার পিছু জুনিয়র পুলিশ কনস্টেবল পদমর্যাদার চাকরি পাবেন। সব মিলিয়ে এই ত্রাণ পুনর্বাসন প্যাকেজের মোট আর্থিক মূল্য ১০ হাজার কোটি টাকা।

বীরভূমের মোহাম্মদ বাজার এলাকায় দেউচা পাচামি বৃহৎ কয়লা প্রকল্পের আগেই ঘোষণা করেছিল রাজ্য সরকার। এবার এই প্রকল্পের দরুণ প্যাকেজের ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, সিঙ্গুরের মতো জমি অধিগ্রহণ নয়। আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করা হবে। থাকছে আর্থিক ক্ষতিপূরণ, চাকরি ও পুনর্বাসনের মতো সুবিধা।

এ বিষয়ে বীরভূম জেলাশাসক বিধান রায় বলেন, “আমরা আগেও চাষিদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। প্রাথমিকভাবে, ভেস্ট ল্যান্ডের উপরেই কাজ শুরু করা হবে। তার পরে, পরবর্তীতে বিষয়টি আলোচনা সাপেক্ষ।” তিনি আরও বলেন, “এই এলাকায় তিন ধরনের ল্যান্ড (জমি) রয়েছে। ফরেস্ট লান্ড, ভেস্ট ল্যান্ড ও প্রাইভেট ল্যান্ড। আমরা সকল প্রকার মানুষের সাথে কথা বলে কাজ শুরু করব।” একইসঙ্গে রাজ্য সরকার পরবর্তীতে যেমন নির্দেশিকা দেবেন সেই মোতাবেক কাজ করা হবে বলে জানান তিনি।

আরও পড়ুন: Mamata Banerjee: ‘সরকারের উন্নয়নমূলক কাজের খবর পজিটিভলি করুন…বিজ্ঞাপন নিশ্চই পাবেন’