বাঁকুড়া: বিষ্ণুপুর টেন্ডার দুর্নীতিতে (Bishnupur Tender Case) ফের নয়া মোড়। রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী ও বিষ্ণুপুর পৌরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্য়ায়ের বিপুল পরিমাণ জমি ও মজুত সোনার খোঁজ তদন্তকারীরা পেয়েছিলেন আগেই। জানা গিয়েছিল, আনুমানিক ৩ কিলোগ্রাম সোনা উদ্ধার হয়েছে। এ বার, শ্য়াম-ঘনিষ্ঠ রাম শঙ্কর মহন্তকে জেরা করে আরও সোনার খোঁজ পেলেন তদন্তকারীরা। ইতিমধ্যেই রামশঙ্কর ওরফে খোকনকে চারদিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে বিষ্ণুপুর আদালত। রবিবার পুলিশের পক্ষ থেকে ধৃতকে আদালতে তোলা হয়।
সরকারি আইনজীবী ইন্দ্রনারায়ণ বিশ্বাস জানান, ধৃত রামশঙ্কর মহন্ত ওরফে খোকনকে সঙ্গে নিয়েই একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে হানা দেন তদন্তকারীরা। সেই ব্যাঙ্কের একটি লকার থেকে আগেই ৩ কিলোগ্রাম সোনা উদ্ধার করেছিলেন তদন্তকারীরা। পরে রামশঙ্করকে জেরা করে পাওয়া গেল আরও সোনার খোঁজ। ৩ কিলোগ্রাম সোনা ছাড়াও মিলল ৪১ রকমের গয়না, ৩টি সোনার বিস্কুট ও একাধিক সোনার বাঁট। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন ওই গয়না ও সোনার বিস্কুটের বর্তমান বাজারমূল্য ১ কোটি ৩৭ লক্ষ টাকা। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, রামশঙ্কর জেরায় স্বীকার করেছেন প্রাক্তন মন্ত্রীর বাড়ি থেকে ব্যাগে করে সমস্ত সোনার গয়না এনে ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে নিজের লকারে জমা করতেন।
শুধু সোনা নয়, তদন্তকারীরা ইতিমধ্যেই প্রায় ৫০ কোটি অর্থমূল্যের জমি-জায়গার খোঁজ পেয়েছেন। জানা গিয়েছে, শ্য়ামাপ্রসাদ মুখোপাধ্য়ায় বিপুল পরিমাণ টাকা জমি কেনার কাজে বিনিয়োগ করেছিলেন। বিষ্ণুপুর শহরে ও আশেপাশে বিভিন্ন জায়গায় তাঁর নামে-বেনামে প্রচুর জমির খোঁজ মিলেছে। এমনকী, নিজের ছেলেমেয়ের নামেও বেশ কিছু জমি কিনেছিলেন তিনি। তদন্তে নেমে সেগুলির অনেকগুলির দলিলও হাতে এসেছে তদন্তকারীদের। সেই সব দলিল মিলিয়ে জমি চিহ্নিতকরণের কাজ শুরু হয়েছে।
শহর ও শহর সংলগ্ন মরার গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় খড়িকাশুলিতে প্রায় ৪ বিঘার জমির ওপর নির্মীয়মান পেট্রোল-পাম্পে যান তদন্তকারী অফিসাররা। মরার গ্রাম পঞ্চায়েত ছাড়াও খড়িকাশুলিতে প্রায় ১২ বিঘা জমির খোঁজ মিলেছে। পেট্রোলপাম্প তৈরির কাজে নিযুক্ত ঠিকাদার জানিয়েছেন, প্রাক্তন মন্ত্রী শ্য়ামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের মেয়ে রূপা মুখোপাধ্য়ায়ের নামে কেনা হয়েছে ওই জমি। প্রায় ৯ মাস যাবত্ চলছে পাম্প তৈরির কাজ। এছাড়াও, শহরের তুর্কিডাঙায় রয়েছে ৬ কাঠা জমি। জমি কেনার ক্ষেত্রে ঠিক কত পরিমাণ টাকা ব্যয় করা হয়েছে, আর কারা এর সঙ্গে যুক্ত ছিল তাও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
ধৃত শ্যাম-ঘনিষ্ঠ রামশঙ্করের বাড়ি থেকে ১৯ লক্ষ টাকা-সহ চারটি জমির দলিল এবং স্থানীয় পোস্ট অফিসে শ্যামাপ্রসাদের নামে আটটি সেভিংস অ্যাকাউন্টের পাশবইও হাতে এসেছে তদন্তকারীদের। শ্যামাপ্রসাদের টাকা রামশঙ্করের মাধ্যমেই বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে টাকা জমা পড়ত। প্রাক্তন মন্ত্রীর জমি কেনাবেচা ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত সব কিছুই দেখতেন রামশঙ্কর অনুমান গোয়েন্দাদের। ইতিমধ্যেই প্রাক্তন মন্ত্রীর আরেক ঘনিষ্ঠ বিষ্ণপুর পুরসভার প্রাক্তন ওভারশেয়ার দিলীপ গড়াইকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। টেন্ডার দুর্নীতিতে তাঁর সক্রিয় যোগ রয়েছে বলে দাবি পুলিশের। আরও পড়ুন: বিশ্লেষণ: টিকা নিয়ে রক্তারক্তি, বঙ্গ জুড়ে অনিয়ম, গাফিলতি কোথায়?