
বাঁকুড়া: চাকরি জীবনে ১৬ বছর কাটিয়ে দিয়েছেন বায়ুসেনায়। পরবর্তীতে ২২ বছর চাকরি করেছেন গ্রামীণ ব্যঙ্কে। এখন বয়স ৭৪। কিন্তু বাসস্থান সংক্রান্ত সমস্যার জন্য এনুমারেশান ফর্মে ২০০২ সালের তথ্য যথাযথ দিতে না পারায় শিবনাথ পালকে শুনানির জন্য ডেকে পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন। শিবনাথবাবুর বাড়ি বাঁকুড়া শহরের কাটজুড়িডাঙ্গা এলাকায়। বয়সের ভারে কার্যত চলচ্ছক্তিহীন শিবনাথ পালের কাছে এখন মাথাব্যথার অন্যতম কারণ শুনানির জায়গা অর্থাৎ তাঁদের বিডিও অফিসের পরিকাঠামো।
বিডিও অফিস চত্বরে মেরেকেটে দু’তিনটি গাছের তলা সান বাঁধানো। বিভিন্ন ধরনের পরিষেবা নিতে আসা মানুষের কাছে সেগুলিই একমাত্র অপেক্ষা করার জায়গা। ছুটির দিন বাদ দিলে সেই সান বাঁধানো গাছের তলা গিজগিজ করে অপেক্ষারত মানুষের ভিড়ে। বিডিও অফিস চত্বরে রয়েছে পানীয় জলের একটি ট্যাঙ্ক। সেই ট্যাঙ্ক থেকে গোটা সাতেক কল বেরিয়ে এলেও তার বেশির ভাগ বিকল বলে অভিযোগ। বাকি কল থেকে খুবই সামান্য জল পাওয়া যায়। বিডিও অফিস চত্বরে একাধিক নলকূপও কার্যত বিকল। অগত্যা এই ট্যাঙ্কই পানীয় জলের একমাত্র উৎস। শৌচালয়ের অবস্থাও তথৈবচ। নব নির্মীত একটি শৌচালয় থাকলেও তা প্রায়শই থাকে তালাবন্ধ। পুরানো শৌচালয়গুলি আবর্জনার স্তুপে পরিণত হওয়ায় তা ব্যবহারের অযোগ্য। বিডিও অফিসে পরিকাঠামোর যখন এমন হাল তখন সেখানেই কমিশনের নির্দেশে শনিবার থেকে শুরু হচ্ছে এসআইআরের শুনানি। শ’য়ে শ’য়ে মানুষ দূর দূরান্ত থেকে শুনানির জন্য ছুটে আসবেন এই বিডিও অফিসে। কিন্তু কী হবে বয়ষ্কদের?
৭৪ বছরের বাসিন্দা শিবনাথ পালের পরিবারের সদস্যরা জানাচ্ছেন এসআইআর প্রক্রিয়া শুরু হতেই পরিবারের সকলের সঙ্গে এনুমারেশান ফর্ম পূরণ করেছিলেন প্রাক্তন ওই বায়ুসেনা কর্মী। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় ফর্মে থাকা ২০০২ এর তথ্য নিয়ে। প্রাক্তন ওই বায়ুসেনা কর্মীর দাবি ২০০২ সালের ঠিক আগে আগে তিনি বাঁকুড়া শহরের রবীন্দ্র সরণী এলাকার বাড়ি ছেড়ে কাটজুড়িডাঙ্গা এলাকায় বাড়ি তৈরি করে উঠে যান। বাসস্থান স্থানান্তরিত হওয়ার কারণে সে সময় কোনওভাবে ভোটার তালিকায় তাঁর নাম বিভ্রাট হয়ে যায়। তার জেরেই এখন এসআইআর-এর খসড়া তালিকায় নাম থাকার পরেও তাঁকে শুনানির জন্য আগামী ৭ জানুয়ারি বাঁকুড়া ২ নম্বর ব্লকের বিডিও অফিসে ডেকে পাঠিয়েছে কমিশন। মঙ্গলবার বিএলও-র মাধ্যমে কমিশনের সেই চিঠি হাতে পান শিবনাথ পাল। তারপর থেকেই কার্যত তাঁর ঘুম উড়েছে। বয়সের ভারে শরীরে বাসা বেঁধেছে বিভিন্ন অসুখ। ঘন ঘন শৌচালয়ে যেতে হয়। নির্দিষ্ট সময় অন্তর খেতে হয় ওষুধ। পায়ের হাঁটু, কোমর ও ঘাড়ের হাড়ে সমস্যায় গোটা শরীর জর্জরিত। অন্যের সাহায্য ছাড়া বিশেষ হাঁটাচলা করতে পারেন না। এই অবস্থায় ওই বিডিও অফিসে কীভাবে যাবেন তা ভাবাচ্ছে তাঁকে। বিডিও অফিসের যা অবস্থা তাতে সাধারণ মানুষের হয়রানির যে সীমা থাকবে না বলেই মনে করছে মানছে রাজনৈতিক দলগুলিও। উদ্বেগ প্রকাশ করতে দেখা গিয়েছে বাঁকুড়ার বিজেপি বিধায়ক নিলাদ্রী শেখর দানাকেও।