বাঁকুড়া: বিষ্ণুপুর পুরসভার টেন্ডার দুর্নীতি কাণ্ডে (Bishnupur Tender Case) গ্রেফতার আরও এক। এবার শ্যাম মুখোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠ প্রাক্তন তৃণমূল নেতাকে গ্রেফতার করল পুলিশ (Police)। কয়েক কোটি দুর্নীতি মামলায় তৃণমূলের প্রাক্তন টাউন সভাপতি তথা প্রাক্তন মন্ত্রীর ছায়াসঙ্গী উজ্জ্বল নন্দীর কাছে নানা তথ্য চেয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছিলেন তদন্তকারীরা। কিন্তু উজ্জ্বলের উত্তরে খুশি নয় পুলিশ। তাঁর বক্তব্যে একাধিক অসঙ্গতি রয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। তাই অবশেষে মন্ত্রী ঘনিষ্ঠ এই নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
সূত্রের খবর, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় যখন বাঁকুড়া জেলার তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি ছিলেন, সেই সময় টাউন সভাপতি করা হয়েছিল উজ্জ্বল নন্দীকে। ২০১১ থেকে ২০১৬ সাল, প্রায় পাঁচ বছর তিনি এই দায়িত্বে ছিলেন। শুধু তাই নয়, সে সময় তাঁকে বিষ্ণুপুর হাইস্কুলের সভাপতিও করা হয়েছিল। একদা প্রাক্তন মন্ত্রীর ছায়াসঙ্গী হিসাবে কাজ করেছেন উজ্জ্বল নন্দী। তাই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতি কাণ্ডে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে পুলিশ। এদিনই তাঁকে বিষ্ণুপুর আদালতে তোলা হবে বলে জানা গিয়েছে।
প্রসঙ্গত, টেন্ডার দুর্নীতি-কাণ্ডে কাণ্ডে গত ২২ অগস্ট গ্রেফতার হন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। একুশের ভোটে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে যাওয়া শ্যামার দু’দফা পুলিশি হেফাজত শেষে গত ২৯ অগস্ট ১১ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেয় বিষ্ণুপুর মহকুমা আদালত। এর মধ্যেই দুর্নীতি মামলায় যুক্ত থাকার অভিযোগে দিলীপ গরাই ও শ্যামাপ্রসাদ ঘনিষ্ঠ রামশঙ্কর মহান্তী ওরফে খোকনকে পুলিশ গ্রেফতার করে। আদালতের পূর্ব নির্ধারিত সূচী অনুযায়ী, মূল অভিযুক্ত শ্যামাপ্রসাদ সহ অন্য দুই সহযোগী দিলীপ গরাই ও রামশঙ্কর মহান্তী ওরফে খোকনকে পুলিশ আদালতে তোলে। এবার গ্রেফতার করা হল আরও একজনকে।
শ্যামাপ্রসাদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে মোট ৬টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করেছে পুলিশ। পাশাপাশি শ্যামাপ্রসাদের নামে একাধিক জমির হদিশও পেয়েছেন তদন্তকারীরা। একাধিক পেট্রোল পাম্পের মালিক হিসাবেও উঠে এসেছে প্রাক্তন মন্ত্রীর নাম। তদন্তকারীরা বলছেন, এই মামলার জট অত্যন্ত গভীরে। জেলা পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার জানান, ‘শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও তাঁর পরিবারের অ্যাকাউন্টের নথি খতিয়ে দেখে দেখা গিয়েছে, অনেক অসঙ্গতি রয়েছে। আর্থিক লেনদেনের হিসাব পাওয়া যায়নি।’
উল্লেখ্য, ৩৪ বছর ধরে বিষ্ণুপুর পুরসভায় চেয়ারম্যান ছিলেন প্রাক্তন তৃণমূল নেতা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। সে সময় একাধিক প্রকল্পের টেন্ডার হয়েছিল। অভিযোগ, সেই প্রকল্পগুলিতে কোনও কাজই হয়নি। মহকুমা শাসকের তরফে তদন্ত শুরু হয়। পরে রিপোর্ট জমা দেয় চিফ ভিজিল্যান্স অফিসার। তদন্তে দুর্নীতির একাধিক তথ্য উঠে আসছে। দীর্ঘদিন তৃণমূল বিধায়ক ছিলেন তিনি। পরে শুভেন্দু অধিকারীর হাত ধরে তিনি বিজেপিতে যোগ দেন।