বীরভূম: অবশেষে কথা রাখলেন বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি তথা আউশগ্রামের পর্যবেক্ষক অনুব্রত মণ্ডল (Anubrata Mondal)। যুব তৃণমূল নেতা চঞ্চল বক্সী খুনে (Chanchal Bakshi Murder Case) গ্রেফতার তৃণমূল নেতাদের দল থেকে বহিষ্কার করলেন খোদ অনুব্রত। রবিবার, তৃণমূলের বিজয়া সম্মিলনী অনুষ্ঠানে এই ঘোষণা করেন অনুব্রত।
তৃণমূল সূত্রে খবর, মোট ৭ জন নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। প্রত্যেকেই এলাকায় সক্রিয় তৃণমূল নেতা বলে পরিচিত। জানা গিয়েছে, আসানুল মণ্ডল, কাদের মণ্ডল, হাসিবুল মোল্লা, বিশ্বরূপ মণ্ডল, হিমাংশু মণ্ডল, মনির হোসেন মোল্লা, ও আয়ুব খান এই সাতজনকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। খোদ অনুব্রত দলের তরফে এই সিদ্ধান্ত নেন বলে জানা গিয়েছে।
গত ৭ সেপ্টেম্বর চঞ্চলের সঙ্গে মোটর বাইকে করে বাড়ি ফেরার সময় শ্যামল বক্সীদের লক্ষ্য করে গুলি চালায় চার-পাঁচজন আততায়ী। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় শ্যামলবাবুর ছেলে চঞ্চলের। দেবশালা গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান শ্যামল বক্সীর ছেলে চঞ্চলকে খুন করে দুষ্কৃতীরা। এই ঘটনার পরপরই ঘটনার দায় বিজেপির ওপর চাপিয়েছিল তৃণমূল। দলের টিকিটে নির্বাচিত আউশগ্রামের বিধায়ক অভেদানন্দ থাণ্ডার দাবি করেছিলেন বিজেপির কর্মীরাই এই খুনের সঙ্গে জড়িত। তাদের দলের আশ্রয়ে বেড়ে ওঠা দুষ্কৃতীরাই এই অপকর্ম ঘটিয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
যদিও, বিধায়কের এই তত্ত্ব কার্যত খারিজ করে দেন মৃতের বাবা শ্যামল বক্সী। অনুব্রতের হুঁশিয়ারি দেওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই দেবশালা অঞ্চল যুব তৃণমূল সভাপতি তথা পঞ্চায়েতের সদস্য আসানুর মণ্ডল, আর এক পঞ্চায়েত সদস্য মনির হোসেন মোল্লা এবং তৃণমূলের দেবশালা অঞ্চল সভাপতির ছেলে বিশ্বরূপ মণ্ডলকে চঞ্চল বক্সীকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেফতার করে পুলিশ। এই তিনজন ছাড়াও আসানুরের ছায়াসঙ্গী আয়ুব খানকে জেরা করে ভাতাকুণ্ডা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
নিহত যুব তৃণমূল নেতার (TMC Leader) বাবা তথা দেবশালা পঞ্চায়েত প্রধান শ্যামল বক্সীর দাবি করেছিলেন, বিজেপি বা বিরোধীরা কেউ তাঁর ছেলেকে খুন করেনি। বরং দলের লোকেরাই চঞ্চলকে খুন করে। গত বৃহস্পতিবার নিহতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যান বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। সেখানে কার্যত পুলিশের উদ্দেশে হুমকি দিয়ে অনুব্রত বলেন, “১৫ দিনের মধ্যে অপরাধীকে গ্রেফতার করা না হলে ভয়ঙ্কর খেলা খেলে দিয়ে যাব।” উল্লেখ্য, অনুব্রত কেবল বীরভূমের জেলা সভাপতি নন, তিনি আউশগ্রামের বিধানসভার পর্যবেক্ষকের দায়িত্বেও রয়েছেন।
তদন্তকারীরা জানিয়েছিলেন, যুব তৃণমূল নেতাকে খুন করার জন্য ধৃত ইমরান ও শের আলিকে মোটা টাকা দেওয়া হয়। সরবরাহ করা হয় অস্ত্রও। পরিকল্পনামাফিকই খুন করা হয় চঞ্চলকে। খুনের দিন খুব কাছ থেকেই চঞ্চলকে গুলি করে ওই দুই শ্যুটার। তদন্তকারীরা আগেই অনুমান করেছিলেন যুব তৃণমূল নেতাকে সিরিয়াল কিলার দিয়েই খুন করা হয়েছে। সেই অনুমানই ক্রমে পোক্ত হয়েছে তাঁদের। গত সেপ্টেম্বরে মহম্মদ ইমতিয়াজ ও মহম্মদ পাপ্পু নামে দুই দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
তদন্তকারীরা আরও জানিয়েছেন, তৃণমূল (TMC) যুব নেতা চঞ্চলকে (Chanchal Bakshi) খুন করতে ওই দুই দুষ্কৃতীকেই কাজে লাগানো হয়েছিল। ৬লক্ষ টাকার বদলে চঞ্চলকে খুন করার ‘মাস্টারপ্ল্যান’ তৈরি করে ওই দুই দুষ্কৃতী। প্ল্যানমাফিকই খুন করা হয় চঞ্চলকে। খুনের জন্য প্রয়োজনীয় অস্ত্র সরবরাহ করেছিল ধৃত ইমতিয়াজ ও পাপ্পু। খুনের সময় চারজন সুপারিকিলার আউশগ্রামেই ছিল বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। চঞ্চলকে খুনের নেপথ্য়ে তৃণমূলেরই কারোর হাত রয়েছে বলে অনুমান করেছিল পুলিশ। পাপ্পু ও ইমতিয়াজকে গ্রেফতারের পর জেরায় তারা স্বীকার করে পঞ্চায়েত সদস্য আসানুর মণ্ডলের থেকে ৬ লক্ষ টাকা নিয়েছিল।
আরও পড়ুন: Viral Audio Clip: ১ লক্ষ টাকা দিলেই মিলবে প্রার্থী টিকিট, ভাইরাল বিজেপি যুবনেতার কল রেকর্ড!