ইলামবাজার : গরু পাচার মামলায় কিছুদিন আগেই সিবিআই জেরার মুখোমুখি হতে হয়েছিল অনুব্রত মণ্ডলের দেহরক্ষী সায়গল হোসেনকে। আর এবার বড়সড় দুর্ঘটনার কবলে পড়ল সেই দেহরক্ষীর গাড়ি। মঙ্গলবার রাতে বীরভূমের ইলামবাজার এলাকায় সেই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গিয়েছে। গাড়িতে ছিল দেহরক্ষীর পরিবার। দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে সায়গলের মেয়ে সহ মোট দুজনের। যে গাড়িটি দুর্ঘটনার মুখে পড়েছে, সেটি সায়গলের নিজের গাড়ি হওয়া সত্ত্বেও তাতে তিনি নিজে ছিলেন না।
মঙ্গলবার রাতে পরিবার নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন অনুব্রত মণ্ডলের দেহরক্ষী সায়গল। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সামনে থাকা একটি ডাম্পারের সঙ্গে সরাসরি ধাক্কা লাগে ওই গাড়ির। ঘটনাস্থলেই দুজনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে একজন সায়গলের আড়াই বছরের মেয়ে। অপরজন তাঁর বন্ধু বলে জানা গিয়েছে। ইলামবাজারের জঙ্গল এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে। পুলিশের দাবি, গাড়িটি একটি দাঁড়িয়ে থাকা ডাম্পারে গিয়ে ধাক্কা মারে সজোরে।
জানা গিয়েছে, ইদের বাজার করতে দুর্গাপুরে গিয়েছিলেন সায়গল ও তাঁর পরিবার। সেখান থেকেই বাড়ি ফিরছিলেন তাঁরা। দুটি গাড়িতে ছিলেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। সামনে ছিল সায়গল হোসেনের নিজের গাড়ি, তাতে বসেছিলেন তাঁর এক বন্ধু ও তাঁর ছোট মেয়ে। আর পিছনের গাড়িতে ছিলেন সায়গল, তাঁর স্ত্রী ও তাঁর বড় মেয়ে। সামনের গাড়িটিই ধাক্কা মারে ডাম্পারে। কার্যত দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছে গোটা গাড়ি। সকালেও ঘটনাস্থলে গেলে দেখা যাচ্ছে গাড়ির যন্ত্রাংশ পড়ে রয়েছে। আহত গাড়ির চালককে বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, কিছুদিন আগেই সিবিআই আধিকারিকরা জিজ্ঞাসাবাদ করেন সায়গলকে। গরু পাচার মামলায় তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সিবিআই সূত্রের খবর, অনুব্রত মণ্ডল কোথায় যেতেন, কার সঙ্গে দেখা করতেন, তা নিয়েই প্রশ্ন করা হয়েছিল তাঁকে। টাকা লেনদেনের বিষয়েও প্রশ্ন করা হয় বলে জানা যায়। এই গরু পাচার মামলায় সরাসরি বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের নাম জড়িত থাকলেও এখনও পর্যন্ত সিবিআই দফতরে হাজিরা দেননি তিনি। আপাতত হাসপাতালের চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী বিশ্রামে রয়েছেন তিনি।
তবে তাঁর দেহরক্ষীর গাড়ির এই দুর্ঘটনা নিয়ে জল্পনা বাড়ছে বিভিন্ন মহলে। শুধু একজন দেহরক্ষীই নন, সায়গল অনুব্রত-র অনেক কাজকর্মের সাক্ষী বলেই মনে করা হয়। সেই কারণেই তাঁকে তলব করেছিলেন সিবিআই-এর গোয়েন্দারা। এ ছাড়া, বর্তমানে গরু পাচার মামলায় চাপে রয়েছেন অনুব্রত। অনুব্রতকে মেরে ফেলা হতে পারে, এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিরোধীরা। আর তার মধ্যে দেহরক্ষীর গাড়ির দুর্ঘটনা ইঙ্গিতবহ বলে মনে করছেন বিরোধীদের একাংশ।
এই ঘটনাকে সন্দেহের চোখে দেখছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তিনি বলেন, ‘এই ঘটনা অত্যন্ত সন্দেহজনক। আমাদের কাছে খবর এসেছে, বগটুই থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রেই দেহরক্ষীর ফোন থেকেই কথা বলতেন অনুব্রত। সেই ফোন থেকেই বিভিন্ন নির্দেশ দিতেন। তাই এই ঘটনা স্বাভাবিক বলে আমার মনে হয় না। তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।’ অন্যদিকে, তৃণমূল নেতা জয়প্রকাশ মজুমদারের দাবি, সায়গলকে অনুব্রত-র ডানহাত বলা হলেও, সেটা সত্যি নয়। তাঁর কথায়, এ সব নিয়ে তর্ক করে লাভ নেই। এই সন্দেহ নিরসন করতে দিলীপ ঘোষকে ডেকে জেরা করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
আরও পড়ুন : Heat Wave: প্রয়োজনে জল সরবরাহের সময় বাড়ানো হোক, তীব্র তাপপ্রবাহে জেলাগুলিকে নির্দেশ রাজ্যের