বীরভূম: মাঝে একটা ঢালাই রাস্তা। রাস্তার এপাশে বগটুইয়ের সেই উপপ্রধান ভাদু শেখের বাড়ি। যাঁকে বোমা মেরে খুনের অভিযোগ উঠেছিল গতকাল রাতেই। আর রাস্তার ঠিক ওপাশেই ‘অভিশপ্ত’ সেই বাড়ি। যেখান থেকে মঙ্গলবার ৭ জনের দেহ উদ্ধার করেছেন দমকলকর্মীরা। ৭ টি দেহই সম্পূর্ণ ঝলসে গিয়েছে। এমন অবস্থা, তা দেখে শনাক্তের উপায় নেই কিছুই। মনে করা হচ্ছে ২ শিশুও থাকতে পারে। তবে সবথেকে উল্লেখ্য, মঙ্গলবার সকালে রাস্তার দুধারের চিত্রটা একেবারেই ভিন্ন। ভাদু শেখের বাড়ি থেকে ভেসে আসছে বুক ফাটা কান্নার আওয়াজ। আর উল্টোদিকে শশ্মানের নিঃস্তব্ধতা।
দু’কাঠা জায়গার ওপর ভাদু শেখের ছোট এক চিলতে বাড়িতে সকাল থেকেই তিল ধারণের জায়গা নেই। নেতারা আসছেন, প্রতিবেশীরা আসছেন, পরিবারকে সমবেদনা জানানো হচ্ছে। অথচ ঠিক বিপরীত ছবি রাস্তার উল্টোদিকেই। যে বাড়িটায় সাত-সাতটা প্রাণ স্রেফ ঝলসেই শেষ হয়ে গেল, সেখানে যেন শ্মশানের নিঃস্তব্ধতা। মুখ দিয়ে টু শব্দ তো দূরের কথা, কারোর চোখ থেকে এক ফোঁটা জলও বের হয়নি। দেখা মেলেনি কোনও আত্মীয়ের। ‘জুজু ভয়’গ্রাস করেছে প্রতিবেশীদের। টালবাহানা করে উত্তর এড়িয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। অবাক হওয়ার বিষয়, তাঁরা বলছেন, পাশের বাড়িতে ৭জনের মৃত্যুর খবর জানতেনই না। কিন্তু প্রশ্ন এমন ভয়ের বাতাবরণ কেন? উত্তর নেই।
মঙ্গলবার সকালে তৃণমূল মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ঘটনাস্থলে আসেন। উপপ্রধানের বাড়িতে যান। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। মন্ত্রীকে অভাব-অভিযোগও শুনিয়েছেন তাঁরা। সেই মন্ত্রী পোড়া বাড়িও ঘুরে দেখেন। কিন্তু তাঁদের হয়ে কথা বলবার জন্য কেউ ছিল না সেখানে। কেউ মুখও খুলছেন না, কেন আগুন, প্রশ্নটাও করছেন না কেউ। বগটুই এখন আতঙ্কপুর।
সোমবার রাতে রামপুরহাটে জাতীয় সড়কের পাশ থেকে উপপ্রধান ভাদু শেখকে বোমা মেরে খুনের অভিযোগ ওঠে। তারপরই সোমবার রাতভর এলাকায় চলে তাণ্ডব। রামপুরহাটের বগটুইয়ে ১০ জনের অগ্নিদগ্ধ দেহ উদ্ধার হয় সকালে। সোমবার রাতেই তিনটি দেহ উদ্ধার হয় বলে খবর। বাকি সাতটি উদ্ধার হয় মঙ্গলবার। তবে ডিজির কথা অনুযায়ী, সোমবার রাতে তিন জনকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। মৃত্যু হয়েছে ৭ জনের। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, পুড়িয়ে মারা হয়েছে প্রত্যেককেই। ওই এলাকার একাধিক বাড়ি পুড়ে খাক। ছোটো আঙারিয়ার পর রাজ্য রাজনীতিতে সাড়া ফেলে দিয়েছে রামপুরহাটের এই গ্রাম।
আরও পড়ুন: ‘দুর্ঘটনা নয়, আগুন লাগানো হয়েছিল’, রামপুরহাট ‘হত্যাকান্ডে’ জানিয়ে দিল সিট