বীরভূম: হল না শেষ রক্ষা। যমে-মানুষে টানাটানির পর রামপুরহাট হাসপাতালে মৃত্যু হল বগটুইয়ের নারকীয় কাণ্ডের শিকার নাজেমা বিবির। শরীরের ৬৫ শতাংশ ঝলসে যাওয়ায় অবস্থার অবনতি হয়। ভেন্টিলেশনে দিলেও শেষ রক্ষা হয়নি। এই নিয়ে সরকারি মতে ৯ আর বেসরকারি মতে ১১ জনের মৃত্য়ু হল এই ঘটনায়। চিকিৎসকরা জানান, শরীরের ৬৫ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল নাজেমার। নাজেমা বিবির রক্তচাপ অস্বাভাবিক ছিল। একই সঙ্গে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণ ‘ফ্লুইড’ বেরিয়েছিল। সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে সারা শরীরে। সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে রক্তেও। মূত্রনালিতেও সংক্রমণ ছড়ায়। শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে যায়। শরীরের কমে যায় অক্সিজেনের মাত্রাও। রবিবারই তড়িঘড়ি তাঁকে ভেন্টিলেশন সাপোর্ট দিতে হয়েছিল। এরপরই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে গোটা বিষয়টি পরিবারকে জানানো হয়। এরপরই মিহি লাল ও অনান্য পরিবারের সদস্যরা দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছন।
সোমবার বেলার দিকে মৃত্যু হয় তাঁর। তবে এই বিষয়টা নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন থাকছে। রামপুরহাট হাসপাতালে বার্ন ইউনিট নেই। বগটুই এসে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছিলেন, তাঁকে এসএসকেএম হাসপাতালে স্থানান্তরিত করতে। কিন্তু তারপরও তা হয়নি। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, কেন নাজিমা বিবিকে স্থানান্তরিত করা হয়নি? এই বিষয়ে কোনও উত্তরই দিচ্ছেন না চিকিৎসকরা।
২১ মার্চ ঘটনাটি ঘটেছিল, ২২ মার্চ সকালে রামপুরহাট হাসপাতালের চিকিৎসকরা লিখেই দিয়েছিলেন, শরীরের ৬৫ শতাংশ পুড়ে গিয়েছে নাজেমা বিবির। তলপেট থেকে বুক পর্যন্ত পুড়ে গিয়েছে তাঁর। তাঁকে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল এসএসকেএমের বার্ন ইউনিটে। যে হাসপাতালে বার্ন ইউনিট রয়েছে, সেখানে চিকিৎসা না হলে মৃত্যু পর্যন্তও হতে পারে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন। কেন নাজিমা বিবিকে নিয়ে যাওয়া হল না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
প্রশ্ন এক. এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা কি ছিল না? যেখানে মন্ত্রীরা হেলিকপ্টারে গিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করছেন, সেখানে কি একটা এয়ারঅ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করা যেত না?
প্রশ্ন দুই. ঘটনার পরও নাজিমা বিবিকে ভেন্টিলেশন সাপোর্টে রাখা হয়নি। তখনও তাঁকে জেনারেল ওয়ার্ডে রাখা হয়েছিল। ২১ মার্চ ঘটনাটি ঘটেছে, ২২ মার্চর সন্ধ্যার পর তাঁকে সিসিইউতে রাখা হয়েছিল। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই যে দীর্ঘ সময় গেল, তার মধ্যেও তো কলকাতায় নিয়ে চলে আসা যেত।
তাহলে কি এর মধ্যেও কোনও ষড়যন্ত্র রয়েছে? তা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে। তিনি এই ঘটনার একেবারে মূল প্রত্যক্ষদর্শীদের মধ্যে একজন ছিলেন নাজিমা বিবি। সিবিআই কথা বলার আগেই মৃত্যু হল তাঁর।