বীরভূম: ভোট পরবর্তী হিংসা তদন্তে ফের ইলামবাজারের তৃণমূলের (TMC Party Office) কার্যালয়ে হানা সিবিআইয়ের (CBI)। ভোট পরবর্তী সন্ত্রাসে গোপালনগরে নিহত বিজেপি কর্মী গৌরব সরকারের মৃত্যু-মামলায় তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদ করেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। গতকালই, কার্যালয়ে এসে তৃণমূল সম্পাদককে একটি নোটিস ধরিয়েছিস সিবিআই। এদিন, ইলামবাজারের পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ রবি মুর্মুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠালেন তদন্তকারীরা। সূত্রের খবর, এই জিজ্ঞাসাবাদের তালিকায় রয়েছেন একাধিক তৃণমূল নেতৃত্ব।
সূত্রের খবর, ইলামবাজার পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ রবি মুর্মু বুধবারই সিবিআই (CBI) তলবে দুর্গাপুর রওনা দিয়েছেন। তিনি ছাড়াও আরও বেশ কিছু তৃণমূল নেতৃত্বকে ডেকে পাঠানো হয়েছে সিবিআইয়ের তরফে। পাশাপাশি, এদিনই তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে তৃণমূল ব্লক সভাপতি ফজরুল রহমানকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্তকারীরা। প্রয়োজনে আরও একাধিকবার দলীয় কার্যালয়ে আসতে পারেন তদন্তকারীরা এমনটাই ইঙ্গিত মিলেছে।
গত ২মে বিধানসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের দিন গোপালনগর গ্রামে গৌরব সরকার নামে এক বিজেপি কর্মীকে পিটিয়ে মারার অভিযোগ ওঠে। বিজেপি জেলা নেতৃত্বের অভিযোগ, নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর বিজয় মিছিল থেকেই তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীরা রাস্তার উপর গৌরব সরকারের উপর চড়াও হয়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ওই বিজেপি কর্মীর। ঘটনার তদন্তে নেমে সোমবারই দিলীপ মৃধা নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে সিবিআই। মঙ্গলবার, তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে সম্পাদককে একটি নোটিসও দেন সিবিআই কর্তারা। ধৃতকে চার দিনের সিবিআই হেফাজতে পাঠায় বোলপুর আদালত।
ইলামবাজারের তৃণমূল কংগ্রেস কার্যালয়ের সম্পাদক বাবর আলি জানান, সিবিআইয়ের ৪জন প্রতিনিধি এসে প্রায় ৩০ মিনিট কথা বলেন। কিছু ফোন নম্বর ও ঠিকানা চান তাঁরা। ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচন এবং ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনে গোপালনগর গ্রামে বুথ কমিটির সদস্যদের নাম ঠিকানা ও ফোন নম্বর-সহ ওই গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধানের নাম ও বিস্তারিত তথ্য জানতে চেয়ে নোটিস দেওয়া হয়েছে সিবিআইয়ের তরফে এমনটাই জানিয়েছে তৃণমূল নেতৃত্ব।
ঘটনায়, তৃণমূল ব্লক সভাপতি ফজরুল রহমানের অভিযোগ, এভাবে দলীয় কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের আসার নেপথ্যে রাজনৈতিক অনুষঙ্গ রয়েছে। শাসকশিবিরকে কালিমালিপ্ত করার জন্যই বিরোধীদের এই চক্রান্ত বলে উল্লেখ করেছেন তৃণমূল ব্লক সভাপতি। উল্লেখ্য, ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় ইতিমধ্যেই প্রায় চারটি চার্জশিট দাখিল করেছে সিবিআই।
বেড়েছে মামলার সংখ্যাও। আরও ৩ টি এফআইআর রুজু করেছে সিবিআই। মামলার সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩৪। নতুন ৩টি মামলার মধ্যে ১টি নদিয়া জেলা ও ২টি উত্তর২৪ পরগনার। গত শনিবারই, নদিয়ার হৃদয়পুর গ্রাম পঞ্চায়েতে নিহত বিজেপি কর্মী ধর্ম মণ্ডলের মৃত্যু মামলায় সিবিআইয়ের জালে গ্রেফতার দুই। আটক হওয়া অসীমা ঘোষ ও বিজয় ঘোষকে চাপড়া থানায় নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ভোট পরবর্তী সন্ত্রাস মামলায় প্রথম তাঁদের গ্রেফতার করা হয়।
ভোট পরবর্তী হিংসার তদন্তে মোট ৮৪ জন তদন্তকারী অফিসার বা আইও-র মধ্যে ইন্সপেক্টর, ডিএসপি পদমর্যাদার অফিসার রয়েছেন। এছাড়া ২৫ জন কর্তা রয়েছেন এই দলে। জয়েন্ট ডিরেক্টর, ডিআইজি, এসপি পদমর্যাদার এই ২৫ জন অফিসার।
প্রত্যেক জোনের টিমে ২১ জন করে তদন্তকারী অফিসার বা আইও। বেশিরভাগ ডিআইজি ও এসপি পদমর্যাদার কর্তা। রাজ্যে ১৫ টি খুন এবং ৬ টি ধর্ষণের মামলায় ২৭ অগাস্ট ১১টি এফআইআর দায়ের করেছিল সিবিআই। খুন, খুনের চেষ্টা, বেআইনি অস্ত্র রাখা, অপহরণ, অনুপ্রবেশের মতো একাধিক অভিযোগের ভিত্তিতে এফআইআরগুলি দায়ের করা হয়। গত শনিবার আরও ১০টি এফআইআর দায়ের করা হয়। ২৯ অগস্ট আরও সাতটি এফআইআর দায়ের করা হয়। পরে আরও দুদফায় চারটি ও তিনটি এফআইআর দায়ের করা হয়।
আরও পড়ুন: Visva Bharati University: সাসপেনশনের মেয়াদ বৃদ্ধি অধ্যাপকের, ফের ‘বিদ্যুত্-বিতর্ক’ বিশ্বভারতীতে?
আরও পড়ুন: Crime: সকাল থেকে বন্ধ ঘর, দরজা ভাঙতেই ঘরের মধ্যে চাপচাপ রক্ত, মিলল মা-ছেলের নিথর দেহ!