ফিতে দিয়ে মেপে ৫০ মিটার দূরে বিক্ষোভ মঞ্চ, বিশ্বভারতীতে খুলল অচলাবস্থার ‘তালা’

TV9 Bangla Digital | Edited By: tista roychowdhury

Sep 03, 2021 | 5:08 PM

Visva Bharati University: কলকাতা হাইকোর্টের  নির্দেশ পাওয়ার পর থেকেই দ্রুক গতিতে বদলাতে শুরু করল বিশ্বভারতী ক্যাম্পাসের ছবিটা। অবিলম্বে খুলে নেওয়া হল মঞ্চের পাটাতন, বাঁশ, ম্যারাপ।

ফিতে দিয়ে মেপে ৫০ মিটার দূরে বিক্ষোভ মঞ্চ, বিশ্বভারতীতে খুলল অচলাবস্থার তালা
অলংকরণ: অভীক দেবনাথ

Follow Us

বীরভূম: অবশেষে অচলাবস্থা কাটতে চলেছে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের (VBU)। হাইকোর্টের নির্দেশে পড়ুয়াদের বিক্ষোভ মঞ্চ সরানো হল উপাচার্যের বাসভবন থেকে প্রায় ৫০ মিটার দূরে। ফিতে দিয়ে মেপে দেখা হল দূরত্ব। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন এসডিপিও অভিষেক রায়-সহ  শান্তিনিকেতন থানার ওসি ও অন্যান্য সরকারি আধিকারিকরা।

কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court)  নির্দেশ পাওয়ার পর থেকেই দ্রুক গতিতে বদলাতে শুরু করল বিশ্বভারতী ক্যাম্পাসের ছবিটা। অবিলম্বে খুলে নেওয়া হল মঞ্চের পাটাতন, বাঁশ, ম্যারাপ। খুলে দেওয়া হল উপাচার্যের বাসভবনের তালা। দ্রুত বিশ্ববিদ্য়ালয়ের অচলাবস্থা কাটানোর পথে পদক্ষেপ করল বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। টানা সাতদিনের অবস্থান বিক্ষোভের পর শুক্রবার বিশ্বভারতীর চত্বর অবরোধমুক্ত করার নির্দেশ দেয় আদালত। সেই নিয়ম মেনেই এদিন দ্রুত গতিতে কাজ শুরু করল বিশ্বভারতী। যতক্ষণ মঞ্চ সরানোর কাজ চলছিল, ততক্ষণ ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল শান্তিনিকেতন থানার পুলিশ।

আদালতের স্পষ্ট নির্দেশ, উপাচার্য বা আন্দোলনকারী কেউ এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে পারবেন না। নির্দেশ মানা না হলে অর্থাত্‍ আন্দোলন তোলা না হলে সোমবারের মধ্যে ফের জানাতে হবে বিচারপতিকে। বিশ্বভারতীর বিক্ষোভ নিয়ে অসন্তুষ্ট বিচারপতি রাজশেখর মান্থা। এদিন সওয়াল জবাব চলাকালীন বিচারপতির বক্তব্য, “রাজ্যের দায়িত্ব পালন দেখে আমি বেশি চিন্তিত।”  উপাচার্য বিদ্যুত্‍ চক্রবর্তীকে নিরাপত্তা দেওয়ার কথাও উল্লেখ করেন তিনি।

এদিন সওয়াল জবাব চলাকালীন বিচারপতি প্রশ্ন করেন, “এই বিক্ষোভের কারণ কী?” আন্দোলনরত পড়ুয়াদের আইনজীবী বলেন, “ উপাচার্য পালাতে চাইছেন। নিজেকে আটকে রাখলে লোকে কী করবে? পিস ফুল এজিটেশন চলছিল। কেউ ওঁকে বিরক্ত করেনি”। এরপর বিচারপতি পাল্টা বলেন, “তার মানে তো পড়াশুনা বন্ধ হতে পারে না। স্টুডেন্ট ইউনিয়ন কখনই ট্রেড ইউনিয়ন নয়। বিক্ষোভ করতে ইচ্ছে হলে উপাচার্যের বাসভবন থেকে ৫০ মিটার দূরে করতে হবে।”

আদালতের তরফে এদিন স্পষ্ট করে দেওয়া হয়, এদিনই দুপুর ৩টের মধ্যে যাতে অবরোধমুক্ত করা হয় ক্যাম্পাস। ৩ জন পুলিশ কর্মী সর্বক্ষণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মোতায়েন থাকবে। আদালত জানিয়ে দেয়, ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ অবশ্যই শোনা হবে, তবে তার আগে হঠাতে হবে অচলাবস্থা।

তবে আদালতের রায় প্রসঙ্গে বীরভূম জেলা পুলিশ সুপার নগেন্দ্র নাথ ত্রিপাঠী বলেন, “আমরা এখনও লিখিত কোন অর্ডার পাইনি। তবে নিউজ চ্যানেলে দেখে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। আমরা লোকাল থানা এবং বোলপুর এসডিপিও কে বলেছি হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে কাজ করতে।”

হাইকোর্টের রায় নিয়ে বীরভূম লোকসভার তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায় বলেন, “হাইকোর্টের রায়কে মান্যতা দিতে হবে।” পাশাপাশি তিনি এও বলেন, “উপাচার্যের বিরুদ্ধে ছাত্রদের যে অভিযোগ আছে তার নিশ্চয়ই কোন যথার্থতা আছে।  আমার মনে হয় উপাচার্যকে কথা বলে বিষয়টিকে সমাধান করা উচিত। আর বিজেপি সর্বদা তৃণমূলের উপর এই সমস্ত দোষ আরোপ করে আগে বিজেপির স্বীকার করা উচিত কেন তারা রাজ্যপাল কে ব্লক সভাপতি এবং উপাচার্যকে রাজ্য সম্পাদক হিসেবে ব্যবহার করছেন।”

প্রসঙ্গত, সরাসরি রাজ্য সরকারের বিরোধিতা করে পুলিশ প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার বিরুদ্ধে রিট পিটিশন জমা দিয়েছিল বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। কী উল্লেখ করা হয়েছে সেই পিটিশনে? বলা হয়, পুলিশ ও আধিকারিক নিয়োগ করে পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক করার নির্দেশ জারি করুক আদালত। পাশাপাশি, সেন্ট্রাল অফিসের সামনের গেটে পড়ুয়াদের তালা ঝোলানো, গেট টপকে উপাচার্যের বাসভবনে প্রবেশের চেষ্টা-সহ একাধিক অভিযোগ জানানো হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় (VBU) কর্তৃপক্ষের তরফে। ৩৮ পাতার সেই পিটিশনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, বিক্ষোভের ঘটনায় পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনও সাহায্য় পাওয়া যায়নি। এমনকি, পুলিশ সুপারকে ফোন করেও কোনও লাভ হয়নি বলেই অভিযোগ। তাই পূর্বের স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ফিরুক বিশ্বভারতী।

সম্প্রতি, পড়ুয়াদের ঘেরাওয়ের জেরে রোজকার খাবারটুকুও জুটছে না বলে অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী তথা বিশ্ববিদ্য়ালয়ের আচার্য নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লেখেন উপাচার্য বিদ্য়ুত্‍ চক্রবর্তী। ক্রমেই জটিল হচ্ছে বিশ্বভারতীর পরিস্থিতি। পড়ুয়া বিক্ষোভের জেরে বাড়তি নিরাপত্তা চেয়ে পুলিশ প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের (VBU) উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। পুলিশের কাছে চিঠি মারফত বাড়তি নিরাপত্তা চেয়েছেন উপাচার্য। এই চিঠির কথা স্বীকার করেছেন জেলার পুলিশ সুপার নগেন্দ্র ত্রিপাঠী। এদিকে উপাচার্য যখন বাড়তি নিরাপত্তা চাইছেন, তখন শ্লীলতাহানির অভিযোগে থানায় এফআইআর করেন দুই ছাত্রীও!

তিন পড়ুয়াকে বরখাস্ত করার প্রতিবাদে ও তার কারণ জানতে চেয়ে আন্দোলনে নেমেছেন ছাত্রছাত্রীরা। উপাচার্যের বাড়ির বাইরে আন্দোলনে অনড় তাঁরা। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে একাধিক। শিক্ষকমহলের একাংশের প্রশ্ন, কেন এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করছেন না উপাচার্য? প্রশাসনিক প্রধান হিসাবে উপাচার্য এই দায় কি এড়িয়ে যেতে পারেন, সে প্রশ্নও উঠছে। আরও পড়ুন: অনড়-ভারতী! ‘অসুস্থ’ উপাচার্যের বাড়ির ‘দুয়ারে’ এসেও ফিরে গেলেন চিকিত্‍সকেরা

Next Article