অনড়-ভারতী! ‘অসুস্থ’ উপাচার্যের বাড়ির ‘দুয়ারে’ এসেও ফিরে গেলেন চিকিত্সকেরা
VBU: পড়ুয়াদের অভিযোগ, ৬দিন টানা গৃহবন্দি থাকার পর উপাচার্য বিদ্যুত্ চক্রবর্তী বৃহস্পতিবার বিকেলে জানান তিনি অসুস্থ। সেই মোতাবেক বিশ্বভারতীর আয়ত্তাধীন হাসপাতালের মেডিক্যাল টিমকে বাড়িতে আসতে বলেন উপাচার্য।
বীরভূম: অচলাবস্থা বহাল বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে (VBU)। ‘অসুস্থ’ হয়ে পড়ার পরেও উপাচার্যকে দেখতে আসা চিকিত্সকদের বিশেষ টিমকে ফেরালেন বিক্ষোভরত পড়ুয়ারা। বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটা নাগাদ উপাচার্যের বাসভবনের সামনে একটি অ্যাম্বুলেন্সে একজন চিকিত্সক ও বেশ কিছু নার্স আসেন। অভিযোগ, পড়ুয়ারা সেই মেডিক্যাল টিমকে ঢুকতে বাধা দেওয়ায় কার্যত ফেরার পথ ধরেন তাঁরা।
পড়ুয়াদের অভিযোগ, ৬দিন টানা গৃহবন্দি থাকার পর উপাচার্য বিদ্যুত্ চক্রবর্তী বৃহস্পতিবার বিকেলে জানান তিনি অসুস্থ। সেই মোতাবেক বিশ্বভারতীর আয়ত্তাধীন হাসপাতালের মেডিক্যাল টিমকে বাড়িতে আসতে বলেন উপাচার্য। চিকিত্সকেরা সেখানে আসলে, বিক্ষোভরত পড়ুয়াদের তরফে বলা হয়, উপাচার্যের অসুস্থতার গুরুত্ব বুঝতেই সাক্ষী স্বরূপ ছাত্রছাত্রীদের তরফে একজন প্রতিনিধি ওই মেডিক্যাল টিমের সঙ্গে ভেতরে যাবেন। তাঁদের আশঙ্কা ছিল, উপাচার্যের বাসভবনে মেডিক্যাল টিম চলে গেলে হয়ত বা কোনও পদক্ষেপ করতে পারেন খোদ বিদ্যুত্বাবু, তাতে পড়ুয়াদের আন্দোলন বিফলে যাওয়ার আশঙ্কাই বেশি। কিন্তু, অভিযোগ, উপাচার্য পড়ুয়াদের দাবি মানতে রাজি হননি। ফলে, গেটের সামনে থেকেই ফিরে যান চিকিত্সকেরা।
পরে, বোলপুরের এসডিপিও অভিষেক রায় ঘটনাস্থলে সরকারি চিকিত্সক ও নার্সদের নিয়ে এলে উপাচার্যের নিরাপত্তারক্ষীরা জানিয়ে দেন বিদ্যুত্বাবু দেখা করতে পারবেন না। এমনকী, এসডিপিও নিয়োজিত চিকিত্সকের ওই টিমকে ফিরে যাওয়ার নির্দেশও দেন তিনি। বিক্ষোভরত পড়ুয়া সোমনাথ সৌ যদিও বলেন, “উপাচার্য অসুস্থ হয়ে পড়ায় আমরা নিজেরাই সরকারি চিকিত্সক ও নার্সদের একটি টিমকে ডেকে পাঠিয়েছিলাম চিকিত্সার জন্য। কিন্তু চিকিত্সা পরিষেবা নিতে রাজি হননি উপাচার্য।”
উল্লেখ্য়, গতকালই সরাসরি রাজ্য সরকারের বিরোধিতা করে পুলিশ প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার বিরুদ্ধে রিট পিটিশন জমা দিয়েছে বিশ্বভারতী (VBU) কর্তৃপক্ষ। কী উল্লেখ করা হয়েছে সেই পিটিশনে? বলা হয়েছে, পুলিশ ও আধিকারিক নিয়োগ করে পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক করার নির্দেশ জারি করুক আদালত। পাশাপাশি, সেন্ট্রাল অফিসের সামনের গেটে পড়ুয়াদের তালা ঝোলানো, গেট টপকে উপাচার্যের বাসভবনে প্রবেশের চেষ্টা-সহ একাধিক অভিযোগ জানানো হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় (VBU) কর্তৃপক্ষের তরফে। ৩৮ পাতার সেই পিটিশনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, বিক্ষোভের ঘটনায় পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনও সাহায্য় পাওয়া যায়নি। এমনকি, পুলিশ সুপারকে ফোন করেও কোনও লাভ হয়নি বলেই অভিযোগ। তাই পূর্বের স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ফিরুক বিশ্বভারতী।
সম্প্রতি, পড়ুয়াদের ঘেরাওয়ের জেরে রোজকার খাবারটুকুও জুটছে না বলে অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী তথা বিশ্ববিদ্য়ালয়ের আচার্য নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লেখেন উপাচার্য বিদ্য়ুত্ চক্রবর্তী। ক্রমেই জটিল হচ্ছে বিশ্বভারতীর পরিস্থিতি। পড়ুয়া বিক্ষোভের জেরে বাড়তি নিরাপত্তা চেয়ে পুলিশ প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের (VBU) উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। পুলিশের কাছে চিঠি মারফত বাড়তি নিরাপত্তা চেয়েছেন উপাচার্য। এই চিঠির কথা স্বীকার করেছেন জেলার পুলিশ সুপার নগেন্দ্র ত্রিপাঠী। এদিকে উপাচার্য যখন বাড়তি নিরাপত্তা চাইছেন, তখন শ্লীলতাহানির অভিযোগে থানায় এফআইআর করেন দুই ছাত্রীও!
তিন পড়ুয়াকে বরখাস্ত করার প্রতিবাদে ও তার কারণ জানতে চেয়ে আন্দোলনে নেমেছেন ছাত্রছাত্রীরা। উপাচার্যের বাড়ির বাইরে আন্দোলনে অনড় তাঁরা। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে একাধিক। শিক্ষকমহলের একাংশের প্রশ্ন, কেন এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করছেন না উপাচার্য? প্রশাসনিক প্রধান হিসাবে উপাচার্য এই দায় কি এড়িয়ে যেতে পারেন, সে প্রশ্নও উঠছে।
শুক্রবার, বিশ্বভারতীর মূল সেন্ট্রাল অফিস ঘেরাও ব্যাপক বিক্ষোভ দেখান পড়ুয়ারা। সেই বিক্ষোভ তুলতে গেলে কার্যত হাতাহাতি বাধে বিশ্বভারতী নিরাপত্তাকর্মী ও ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে। বিশ্বভারতী নিরাপত্তারক্ষীরা প্রথমে ছাত্রদের গায়ে হাত তোলেন বলে অভিযোগ। বিশ্বভারতীর উপাচার্যের বিদুৎ চক্রবর্তী-র সিএস বা আপ্ত সহায়কের গাড়ি দাঁড় করিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলতে চান পড়ুয়ারা। তখন তিনি পড়ুয়াদের গাড়ি চাপা দিতে উদ্যত হন বলে বিস্ফোরক অভিযোগ আন্দোলনরত পড়ুয়াদের। এর পর উপাচার্যের বাড়ি ঘেরাও করে বিক্ষোভ শুরু করে করেন পড়ুয়ারা। আরও পড়ুন: গাড়ির চালকের সঙ্গে ‘সম্পর্ক’, আদালতে আত্মসমর্পণ বিজেপি বিধায়ক চন্দনার