বীরভূম: গঙ্গাসাগর মেলা কমিটি থেকে বাদ পড়তেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এ বার, পাল্টা অধিকারী পুত্রকে ‘নেংটি ইঁদুর’ বলে কটাক্ষ বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের (Anubrata Mondal)। তাঁর দাবি, শুভেন্দু (Suvendu Adhikari) চুরি করে জিতেছেন।
সাগরমেলার নয়া কমিটি গঠনের পরই রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করে শুভেন্দু বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার বিজেপি-কে ভয় পায়, বিরোধী দলনেতাকে ভয় পায়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিঙ্গল পয়েন্ট অ্যাজেন্ডা হল বিরোধী দলনেতাকে আটকাও।’’ অধিকারী পুত্রের এই মন্তব্য়কে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে অনুব্রত বলেন, ‘‘শুভেন্দু অধিকারী হল নেংটি ইঁদুর একটা। জানেন তো, নেংটি ইঁদুর বাড়িতে ঘোরাফেরা করে। বাড়ির কোনও জিনিসে চাপা পড়ে যায়। নেংটি ইঁদুরের কোনও দাম নেই। চুরি করে ভোটে জিতেছে, আবার বড় বড় বাতেলা!’’
এখানেই শেষ নয়, বিজেপিকে ‘ভেড়ার দল’ বলে উল্লেখ করেন অনুব্রত। তৃণমূল নেতার কথায়, “বিজেপি একটা ভেড়ার দল। এদের প্রসঙ্গে কিছু বলার নেই।” পাশাপাশি আরও বলেন, প্রচারে বেরিয়ে বেরিয়ে করোনা ছড়াচ্ছে বিজেপি। এদিনই, সরাসরি কিছু না বললেও আভাসে-ইঙ্গিতে অনুব্রত জানিয়ে দিয়েছন, দুবরাজপুরের বিজেপি বিধায়কও খুব শিগগিরই তৃণমূলে যোগ দেবেন। যদিও, এ নিয়ে সরাসরি কোনও মন্তব্য করেননি তৃণমূল জেলা সভাপতি।
অনুব্রতর এই মন্তব্যকে গায়ে মাখতে নারাজ পদ্ম শিবির। বীরভূম জেলা বিজেপি-র সভাপতি ধ্রুব সাহা বলেন, ‘‘হনুমান আর কাঠবেড়ালি মিলে রামরাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিল। তাই নেংটি ইঁদুরের কত ক্ষমতা, সময় এলেই বুঝতে পারবে। চিন্তার কিছু নেই। আর ওরা নিজেরাই ছাগলের দল, তাই ভেড়ার দল বলছে। এমন মানুষের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে এর বেশি কিছু প্রতিক্রিয়া দেওয়া যায় না।’’
তবে, এই প্রথম নয়, বিভিন্ন সময়েই নানা ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে বিতর্কিত নানা মন্তব্য করে শিরোনামে এসেছেন অনুব্রত। সেই দিক থেকে এই প্রথম নয়, বহুবার বিজেপির বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন অনুব্রত। এ বার, সরাসরি রাজ্যের বিরোধী দলনেতার বিরুদ্ধে মন্তব্যে ফের সংঘাতের সম্ভাবনা বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
উল্লেখ্য, কিছুদিন আগেই গঙ্গাসাগর মেলা অনুষ্ঠিত হবে কি না তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। কোভিদ পরিস্থিতিতে কীভাবে মেলা হবে তা নিয়ে ওঠে প্রশ্ন। সেই পরিস্থিতিতে মেলা কমিটি সম্পূর্ণ ভেঙে নতুন করে কমিটি তৈরি করা হয়। হাইকোর্টের নির্দেশে তালিকা থেকে বাদ যান শুভেন্দু অধিকারী। বদলে, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি সমাপ্তি চট্টোপাধ্যায়কে নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। কমিটিতে রয়েছেন লিগ্যাল সার্ভিসেস সদস্য সচিব। গঙ্গাসাগর মেলার নজরদারি কমিটিতে শুভেন্দু অধিকারীর নাম থাকা নিয়ে প্রথম থেকেই একটা চাপানউতোর তৈরি হয়েছিল।
মামলাকারীরা অনেকেই বলেছিলেন যে, শুভেন্দু অধিকারী বিরোধী দলনেতা। সেক্ষেত্রে এই মেলা ঘিরে টানাপোড়েনে লাগতে পারে রাজনৈতিক রঙও। ‘রাজনৈতিক ব্যক্তিমুক্ত’ কমিটি গঠনের পক্ষে সওয়াল করেছিলেন আইনজীবীদের একাংশ। পাশাপাশি আরও একটি বিষয় উল্লেখ্য, পুরনো কমিটিতে রাখা হয়েছিল রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানকে। ওই পদে নিয়োগ এখনও আটকে রয়েছে। এরপরই নতুন কমিটির পক্ষে রায় দেয় হাইকোর্ট। তাতে বাদ যান শুভেন্দু।