Gangasagar Mela 2022: কোভিড বিধি কি যথাযথ পালিত হচ্ছে? খতিয়ে দেখতে বুধেই সাগরে পা কমিটি চেয়ারম্যান সমাপ্তির

Kolkata: মঙ্গলবার, গঙ্গাসাগর মেলার শর্তসাপেক্ষ অনুমতি দিয়েছে প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব এবং বিচারপতি কেসাং ডোমা ভুটিয়ার ডিভিশন বেঞ্চ। মেলা নিয়ে প্রথম যে  অর্ডার দিয়েছিল হাইকোর্ট, তাতে বড়সড় বদল এসেছে। বদল হয়েছে গঙ্গাসাগর মেলা নজরদারির কমিটিরও।

Gangasagar Mela 2022: কোভিড বিধি কি যথাযথ পালিত হচ্ছে? খতিয়ে দেখতে বুধেই সাগরে পা কমিটি চেয়ারম্যান সমাপ্তির
গঙ্গাসাগর কমিটির চেয়ারম্যান আজই যাচ্ছেন সাগরে, নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jan 12, 2022 | 11:28 AM

কলকাতা: হাইকোর্টের সবুজ সঙ্কেত মিলেছে। কিন্তু, বিতর্ক এড়ানো যাচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে গঙ্গাসাগরে যথাযথ কোভিড বিধি পালন করা হচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখতেই বুধবারই সাগরে যাচ্ছেন গঙ্গাসাগর কমিটির চেয়ারম্যান সমাপ্তি চট্টোপাধ্যায়।

এদিকে, বুধবার সকাল থেকেই কড়া নজরদারি দেখা যায় মেলা উপলক্ষ্যে। ডাফরিন রোড স্ট্র্যান্ড রোড ক্রসিং থেকে গঙ্গাসাগর মেলার উদ্দেশে রওনা দেওয়ার আগে পুণ্যার্থীদের জোড়া টিকাকরণ হয়েছে কি না সেই শংসাপত্র  পরীক্ষা করছে পুলিশ। দায়িত্বে রয়েছেন ২ জন আইপিএস অফিসারও।

মঙ্গলবার, গঙ্গাসাগর মেলার শর্তসাপেক্ষ অনুমতি দিয়েছে প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব এবং বিচারপতি কেসাং ডোমা ভুটিয়ার ডিভিশন বেঞ্চ। মেলা নিয়ে প্রথম যে  অর্ডার দিয়েছিল হাইকোর্ট, তাতে বড়সড় বদল এসেছে। বদল হয়েছে গঙ্গাসাগর মেলা নজরদারির কমিটিরও।

পুরনো তিন সদস্যের কমিটি বাতিল করে ২ সদস্যের কমিটি গঠন করে হাইকোর্ট। কমিটির নেতৃত্বে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি সমাপ্তি চট্টোপাধ্যায়। কমিটিতে রয়েছেন লিগ্যাল সার্ভিসেস সদস্য সচিব। রাজ্যের মুখ্য সচিবকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ৭ থেকে ১০ জানুয়ারির মধ্যে আদালতের দেওয়া অন্যান্য যাবতীয় নির্দেশ কার্যকর করতে হবে।  এরপরেই বুধবার সবদিক খতিয়ে দেখতে গঙ্গাসাগরে যাচ্ছেন  চেয়ারম্যান সমাপ্তি চট্টোপাধ্যায়।

কী পরিস্থিতি গঙ্গাসাগরের? 

খুব বেশি না হলেও মঙ্গলবারের গঙ্গাসাগরের ছবিটির কথা তুলে ধরা যেতে পারে। আদালত যেখানে নির্দেশ দিয়েছে গোটা গঙ্গাসাগর দ্বীপটিকেই ‘নোটিফায়েড এরিয়া’ বলে ঘোষণা করতে সেখানে, মঙ্গলবার দেখা যায় শয়ে শয়ে পুণ্যার্থীর আগমন ঘটেছে। অনেকের মুখেই নেই মাস্ক। রাজ্য ও জেলাপ্রশাসনের তরফে বারবার যদিও বলা হচ্ছে যে কোভিড পরিস্থিতি মোকাবিলায় সবরকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তবুও প্রশ্ন থাকছেই।

প্রথমত, যদি গঙ্গাসাগর ‘নোটিফায়েড এরিয়া’ বলে ঘোষিত হয়, তাহলে এই বিপুল সংখ্যক পুণ্যার্থী যাবেন কোথায়? দ্বিতীয়ত, পুণ্যার্থীরা নানা ভাবে আসছেন তীর্থক্ষেত্রে। জলপথে, স্থলপথে, রেলপথে। সকলের পরীক্ষা করা সম্ভব কি? প্রত্যেকেই যে কোভিডের দুটি টিকা পেয়েছেন, এই শংসাপত্র  খতিয়ে দেখা কতটা সম্ভব? পাশাপাশি তীর্থক্ষেত্রে জনসমাগমই বা কী করে প্রতিরোধ করা যাবে?

গঙ্গাসাগরে কর্তব্যরত এক সিভিক ভলেন্টিয়ারের কথায়, “গোটা গঙ্গাসাগরে মোট ৫০ জন তীর্থযাত্রী! ভাবাই যায় না! সম্ভবই নয়। এত বড় একটা জায়গা! কীভাবে কতটা দেখা সম্ভব। তাও আমরা চেষ্টা করছি। যতটা পারব, করে যাচ্ছি।”

বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণ 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একবছরের জন্য গঙ্গাসাগর মেলা বন্ধ করা সম্ভব ছিল। কারণ চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিলেও সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। বিশেষ করে যখন রাজ্যের একাধিক স্বাস্থ্যকর্মী, নার্স, চিকিৎসকেরা আক্রান্ত। তাঁদের আরও দাবি, গঙ্গাসাগর মেলা ‘সুপারস্প্রেডার’ -এর কাজ করবে। ফলে, এরপর সংক্রমণ অপ্রতিরোধ্য হয়ে পড়বে।

উল্লেখ্য, ইতিমধ্যেই বাংলার উল্টোপথে হেঁটেছে উত্তরাখণ্ড। হরিদ্বারে মকর সংক্রান্তি উপলক্ষ্যে স্নানযাত্রা বন্ধ করা হয়েছে। কোভিড পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই এ সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছে উত্তরাখণ্ড সরকার। অন্যদিকে বাংলায়, জয়দেবের মেলাতেও কাটছাঁট করা হয়েছে। এ বছর ছোট করেই হচ্ছে কেন্দুলীর মেলা।

বিরোধীদের  বক্তব্য 

গঙ্গাসাগর মেলার বিপক্ষে বরাবরই সওয়াল করেছেন বিরোধীরা। বাম শিবির হোক বা কংগ্রেস, বিজেপি–গঙ্গাসাগর মেলার বন্ধের পক্ষেই বরাবর মত প্রকাশ করেছেন তাঁরা। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরীর মন্তব্য, “গঙ্গাসাগর মেলা করোনা মেলায় রূপান্তরিত হবে।” অন্যদিকে বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, “রাজ্যে স্কুল-কলেজ অফিস-কাছারি বন্ধ। তারপরেও মেলা হচ্ছে! বরাবরের মতোই বলব, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে পদক্ষেপ করা হোক।” একই কথা বাম নেতা সুজন চক্রবর্তীরও। তাঁর মন্তব্য, “গঙ্গাসাগর মেলা একবছর বন্ধ থাকলে কি এতটাই ভোট ব্যাঙ্কে সমস্যা হত তৃণমূলের? এক বছর মেলা বন্ধ করা যেত না!”

আদালতের পর্যবেক্ষণ

মঙ্গলবার, হাইকোর্ট স্পষ্ট করে দিয়েছে যে গোটা গঙ্গাসাগর এলাকাটাই নোটিফায়েড এরিয়া। অর্থাৎ সেখানে রাজ্য সরকারের যে বিশেষ বিধিবদ্ধ নিয়ম রয়েছে, সেটা মান্যতা দিতে হবে। আগে কেবল কপিলমুনি আশ্রম চত্বরটি ‘নোটিফায়েড’  বলে ঘোষণা করার কথা বলা হয়েছিল। এ বার গোটা দ্বীপটিকে ‘নোটিফায়েড’ ঘোষণা করার নির্দেশ দিল আদালত। সর্বোচ্চ ৫০ জন তাতে গোটা দ্বীপে জমায়েত করতে পারেন। কিন্তু, তা না হলে বন্ধ হয়ে যেতে পারে মেলা।

পাশাপাশি আদালতের তরফে আরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, গঙ্গাসাগর মেলায় আদালতের শর্ত মানা হচ্ছে কিনা, তা দেখবে দুই সদস্যের কমিটি। জোড়া টিকা ও শংসাপত্র না থাকলে কাউকেই প্রবেশাধিকার নয়। যেকোনও পুণ্যার্থীর ৭২ ঘণ্টা আগে আরটিপিসিআর রিপোর্ট নেগেটিভ আসতে হবে। হাইকোর্টের নির্দেশ কার্যকর হচ্ছে কিনা, তা দেখবেন মুখ্যসচিব।

আরও পড়ুন:  School Service Commission: সরিয়ে দেওয়া হোক SSC চেয়ারম্যানকে, রাজ্যকে পরামর্শ হাইকোর্টের