বীরভূম: কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) নির্দেশের কথা উল্লেখ করেই শুক্রবার রাতেই ৩ বহিষ্কৃত পড়ুয়াদের ক্লাসে যোগ দিতে দেওয়ার জন্য় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার নির্দেশ দিয়ে অধ্যক্ষ ও বিভাগীয় প্রধানদের চিঠি দিয়েছিলেন বিশ্বভারতীর (Visva Bharati University) প্রোক্টর শঙ্কর মজুমদার।
সেই নির্দেশমতো, শনি ও রবিবারের ছুটির পর সোমবার থেকেই অনলাইন ক্লাসে যোগ দেওয়ার কথা সোমনাথ সৌ, ফাল্গুনী পান ও রূপা চক্রবর্তীর। অভিযোগ, সোমবার ক্লাসে যোগ দেওয়ার কোনও কোনও লিঙ্ক বা কোনওরকম বিভাগীয় নির্দেশ আসেনি ওই তিন পড়ুয়ার কাছে। মঙ্গলবারও সামগ্রিক ছবিটি বদলায়নি। অভিযোগ, কর্তৃপক্ষ কেবল নোটিস দিয়েই দায়িত্ব সেরেছে। ফলে, ওই তিন পড়ুয়া কোনও ক্লাস করতে পারছেন না। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের তরফে অবশ্য এ বিষয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
মঙ্গলবার, ফের আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন বহিষ্কৃত পড়ুয়া সোমনাথ সৌ। ছাত্রদের পক্ষ থেকে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে আদালত অবমাননার অভিযোগ তুলে মামলা দায়ের করা হতে পারে বলেই খবর সূত্রের। ছাত্রদের প্রতিনিধি হিসেবেই এদিন আদালতে গিয়েছেন সোমনাথ।
ইতিমধ্যেই, ই-মেল করে অর্থনীতির বিভাগীয় প্রধানের কাছে দুটি দাবি জানিয়েছেন সোমনাথ। প্রথমত, বহিষ্কারের কারণে তাঁর পরীক্ষা দিতে না-পারার বিষয়টিকে একটি ‘বিশেষ ঘটনা’ হিসেবে দেখে আগামী ৭ দিনের মধ্য়ে সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষার ব্যবস্থা করে ১০ দিনের মধ্যে পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হোক।
দ্বিতীয়ত, বহিষ্কারের কারণে স্নাতকোত্তরের পড়াশোনা শেষ করতে না-পারায় সোমনাথ ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে স্নাতকোত্তরে তাঁরা আবেদন করতে পারেননি। তাই পরীক্ষা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চলতি শিক্ষাবর্ষে তাঁকে স্নাতকোত্তরে ভর্তি নেওয়ার ব্যবস্থা যাতে করা হয়, সে প্রসঙ্গে মেইল করেছেন তিনি। সেই ইমেলের কপি পাঠানো হয়েছে বিশ্বভারতীর উপাচার্য, প্রোক্টর, অধ্যক্ষ-সহ সকল আধিকারিককে। কিন্তু, তারপরেও কর্তৃপক্ষের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি বলে অভিযোগ।
গত ২৭ অগস্ট বিশ্বভারতীতে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে তিন ছাত্রকে বরখাস্ত করার প্রতিবাদে আন্দোলন শুরু করেন ছাত্র ছাত্রীদের একাংশ। যা ক্রমেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিয়ে যেতে থাকে রবি-তীর্থের পরিস্থিতি। ফাল্গুনী পান, সোমনাথ সৌ এবং রূপা চক্রবর্তীকে তিন বছরের জন্য বরখাস্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
পাশাপাশি, পদার্থ বিজ্ঞানের দুই অধ্যাপক পীযুষকান্তি ঘোষ ও অরণি চক্রবর্তীকে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে সাসপেন্ড করে বিশ্বভারতী। আচমকা এই সাসপেনশন ও পড়ুয়াদের বরখাস্তের নোটিসে কার্যত ক্ষোভে ফেটে পড়েন পড়ুয়া ও অধ্যাপকদের একাংশ। সেই ইস্যুই গড়ায় আদালত অবধি। সেই মামলার শুনানিতে আন্দোলন তুলে নেওয়ার কথা বলেন বিচারপতি রাজশেখর মান্থা। দু’সপ্তাহের জন্য মামলায় স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়।
শুনানিতে ছাত্রদের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, “শাস্তি হিসেবে তিন বছরের জন্য সাসপেন্ড করা হয় পড়ুয়াদের। ভারতীয় দণ্ডবিধি অনুযায়ী, ছাত্ররা ভুল করলে ক্ষমা চাইবে ক্লাসে যাবে। এটা কী ধরনের আচরণ?” বিচারপতি রাজশেখর মান্থা বলেন, ‘আমি স্বীকার করছি যে ছাত্রদের সঙ্গে যা হয়েছে, সেটা ঠিক হয়নি। কিন্তু এটাও ঠিক হচ্ছে না। আমি ছাত্রদের সাসপেনশন তুলে দিতে বলছি। কিন্তু কোনও বাইরের লোক আসবে না। ছাত্ররা আন্দোলন বন্ধ করবে। কোনও রাজনৈতিক দলের নাক গলানো চলবে না।’ বিচারপতি আরও বলেন, ‘বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত অনেক বেশি শাস্তি।’ তবে বিচারপতি সাফ জানিয়ে দেন, ভিতরে বা বাইরে সব আন্দোলন বন্ধ করতে হবে। আদালতের নির্দেশ মেনেই যদিও পরে অবস্থান-বিক্ষোভ তুলে নেন আন্দোলনকারীরা।
আরও পড়ুন: বাথরুমে ঝাঁটার আড়াল থেকে ক্যামেরার উঁকি! ডাক্তারি পরীক্ষা করাতে গিয়ে পিলে চমকে গেল মহিলার
আরও পড়ুন: COVID19 Vaccination: ‘আপনারা বিজেপি করেন, ভ্যাকসিন দেব না’, টিকাকরণেও ‘আমরা-ওরা’!