বীরভূম: বিতর্কের রেশ নির্মূল হয়নি। সদ্যই বিশ্বভারতীর (Visva Bharati University) তিন পড়ুয়ার বহিষ্কারের সিদ্ধান্তের উপর স্থগিতাদেশ জারি করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। পাশাপাশি, পড়ুয়াদের আন্দোলনেও যতিচ্ছেদের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। কিন্তু সেই নির্দেশকে অমান্য় করেই অব্যাহত আন্দোলন। এর মধ্যেই নিলম্বিত অধ্যাপক সুদীপ্ত ভট্টাচার্যের সাসপেনশনের মেয়াদ আরও একমাস বৃদ্ধি করল বিশ্বভারতী (Visva Bharati University) কর্তৃপক্ষ। গত শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে অর্থনীতির অধ্যাপককে। ৬ সেপ্টেম্বর থেকেই কার্যকরী হয়েছে নিলম্বনের বর্ধিত মেয়াদ।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে অধ্য়াপক সুদীপ্ত ভট্টাচার্যকে সাসপেন্ড করে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। সেই সাসপেনশন পূর্ণ হওয়ার কথা ছিল সেপ্টেম্বরে। তার আগে ফের নতুন করে অধ্য়াপককে নিলম্বিত করায় প্রশ্নের মুখে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। পাঠভবনের অধ্যাপিকা নিয়োগ সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ্যে আনায় অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সুদীপ্ত ভট্টাচার্যকে সাসপেন্ড করে কর্তৃপক্ষ। উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর তত্ত্বাবধানে কর্মসমিতির বৈঠকে এমনই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বিশ্বভারতীর পাঠভবনের অধ্যাপিকা বধিরুপা সিংহের নিয়োগ সঠিক পদ্ধতি মেনে হয়নি। নিয়োগে একাধিক বেনিয়ম ছিল। এমনই অভিযোগ তুলে বিশ্বভারতীর আচার্য প্রধানমন্ত্রী, পরিদর্শক তথা রাষ্ট্রপতি, এবং প্রধান তথা রাজ্যপাল-সহ উপাচার্য (Vice Chancellor) বিদ্যুৎ চক্রবর্তীকে চিঠি দিয়েছিলেন অধ্যাপক সুদীপ্ত ভট্টাচার্য। তারই ফলস্বরূপ তাঁকে সাসপেন্ড করা হয় বলে অভিযোগ। সাসপেন্ড কারণ হিসাবে বলা হয়, অধ্যাপক সুদীপ্তবাবু একটি অভিযোগ প্রমাণ হওয়ার আগেই তা জনসমক্ষে এনেছেন। যার ফলে অধ্যাপিকার মানহানি হয়েছে। তাই সাসপেন্ড করা হয় অধ্য়াপক সুদীপ্ত ভট্টাচার্যকে।
সম্প্রতি, বিশ্বভারতীর তিন পড়ুয়া ফাল্গুনী পান, সোমনাথ সৌ ও রূপা চক্রবর্তীকে বহিষ্কার করার বিরুদ্ধে উত্তাল হয়ে উঠেছিল বিশ্বভারতী। জল গড়িয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট পর্যন্ত। ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে অধ্যাপক সুদীপ্ত ভট্টাচার্যও রিলে অনশনে অংশ নেন। বুধবার কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দেয়, বহিষ্কার হওয়া তিন ছাত্রছাত্রীকে পঠন-পাঠন শুরু করার অনুমতি দিতে হবে। বহিষ্কৃত পড়ুয়াদের লঘু পাপে গুরু দণ্ড দেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করে আদালত।
এমনকি তাঁদের বহিষ্কারেও স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে। বিচারপতি রাজশেখর মান্থা বলেন, ‘আমি স্বীকার করছি যে ছাত্রদের সঙ্গে যা হয়েছে, সেটা ঠিক হয়নি। কিন্তু এটাও ঠিক হচ্ছে না। আমি ছাত্রদের সাসপেনশন তুলে দিতে বলছি। কিন্তু কোনও বাইরের লোক আসবে না। ছাত্ররা আন্দোলন বন্ধ করবে। কোনও রাজনৈতিক দলের নাক গলানো চলবে না।” তিনি আরও বলেন, ‘বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত অনেক বেশি শাস্তি।’ অন্যদিকে, একইসঙ্গে বিশ্বভারতীতে চলা পড়ুয়াদের অবস্থান নিয়েও বিশেষ নির্দেশ দেয় আদালত। অবিলম্বে তাদের অবস্থান মঞ্চ সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট।
কিন্তু, সেই নির্দেশকে অমান্য় করেই অব্যাহত ছিল আন্দোলন। উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর বাসভবনের ৫০ মিটার দূরত্ব থেকে সরেনি অবস্থান মঞ্চ। যদিও বিকেলের দিকে অবস্থান তুলে নেন বিক্ষোভরত পড়ুয়ারা। ফের অধ্য়াপকের সাসপেনশনের মেয়াদ বৃদ্ধির ফলে যে ফের বিতর্ক উসকে দিলেন উপাচার্য বিদ্য়ুত্ চক্রবর্তী এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। আরও পড়ুন: পাহাড়ে লুপ্ত বিনয়পন্থী মোর্চা, আত্মপ্রকাশের পরেই কাজে নতুন দল, ঘোষণা অনীতের