বীরভূম: নিজের রেকর্ড নিজেই ভেঙে জয়ের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। ভবানীপুরে ৫৮ হাজার ৩৮৯ ভোটের ব্যবধানে নিজের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির প্রার্থী প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়ালকে বিরাট মার্জিনে পরাজিত করেন তিনি। এই জয়ের পর থেকেই তৃণমূল শিবিরে শুরু হয়েছে বিজয় উৎসব। এ বার মমতার জয় নিয়ে মুখ খুললেন বীরভূূমের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল (Anubrata Mondal)। সরাসরি পদ্ম শিবিরকে ‘ছাগল বিড়ালের দল’ বলে কটাক্ষ ‘কেষ্টর’।
এদিন, অনুব্রত সাংবাদিক বৈঠক করে বলেন, “ভবানীপুরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জিতবেন না তো অন্য কেউ জিতবেন? বিজেপি একটা ছাগল-বিড়ালের দল। এখানে বলাবলির কিছু নেই। আমি বলেছিলাম ৬০ থেকে ৭০ হাজার ভোটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জিতবেন। বিজেপিকে জিজ্ঞেস করা উচিত, তারা কী করবে! তারা ঘরে ঢুকে বসে থাকবে, না ছাগলের মতো চরে চরে বেড়াবে।”
এখানেই থামেননি দিদির স্নেহধন্য ‘কেষ্ট’। আরও একধাপ সুর চড়িয়ে তিনি বলেন, “লোকে দেখেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী করেছে আর বিজেপি কী করেছে! একটা ছাগল-বিড়ালের দলের সঙ্গে কি দিদির তুলনা হয়! নন্দীগ্রামে কেস চলছে। সেখানে আবার গণনা হলে দেখা যাবে সেখানেও মমতা ৫০ থেকে ৬০ হাজার ভোটে জিতবেন। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।”
তবে, কেবল অনুব্রত নন, নন্দীগ্রাম নির্বাচনে কারচুপির প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছেন খোদ তৃণমূল সুপ্রিমো। ভোটগণনার সর্বশেষ ফলাফল প্রকাশের পর মমতা বলেন, “কেন জিতিনি তার কারণ আছে। সাব জুডিস বিষয়। কিছু বলছি না। তবে ভবানীপুর যে উৎসাহ দিল তার জন্য আমি চিরঋণী থাকলাম।”
সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তৃণমূল নেত্রী আরও বলেন, “ভবানীপুরে ১ লক্ষ ১৫ হাজার মাত্র ভোট পড়েছে। এটা চিরকালের ধারা, কম ভোট পড়ে। ‘১১ সালে ৪৪ শতাংশ ভোট পড়েছিল, সেবার জিতেছিলাম। ১৬ সালে সম্ভবত ২৫-২৬ শোভনদেব ২৮ হাজার ভোটে জিতেছিলেন। এবার অ্যাবাউট ৬০ হাজাার ভোটে জিতেছি। কোনও ওয়ার্ডে মানুষ আমাদের হারায়নি। এটাই চ্যালেঞ্জ। মাথার রাখতে হবে।”
উল্লেখ্য, নন্দীগ্রামে অধুনা বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেছিলেন মমতা। এককালীন সতীর্থ যখন প্রতিপক্ষ তখন কার্যত, নন্দীগ্রাম হয়ে ওঠে একুশের নির্বাচনের ‘ব্যাটলগ্রাউন্ড’। গোটা দেশের পাখির নজর ছিল নন্দীগ্রামে। প্রথমদিকে এগিয়ে থাকলেও পরে পিছিয়ে যান মমতা। জয়লাভ করেন শুভেন্দু। নন্দীগ্রামের নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে এই অভিযোগ আগেই করেছিল তৃণমূল। নন্দীগ্রামের সেই ‘চক্রান্তের’ জবাব দিল ভবানীপুর এমনই বার্তা দেন তৃণমূল নেত্রী।
যদিও, ভবানীপুরের বিজেপি প্রার্থী প্রিয়াঙ্কা টিবরেয়াল বলেন, “ভোটের দিন কী ভাবে রিগিং করতে হয় সেটা আপনাদের মাধ্যমেই দেখেছি। তাই ওঁদের রিগিং করে জেতার জন্য, ছাপ্পা ভোট মেরে জেতার জন্য শুভেচ্ছা জানাই।” কোথায় কোথায় রিগিং হয়েছে? প্রশ্ন করায় প্রিয়াঙ্কা বলেন, “সবকটা ওয়ার্ডে ছাপ্পা ভোট পড়েছে।” এখানেই থেমে না থেকে তিনি আরও বলেন, “দিদিকে অভিনন্দন, ওঁর সংগঠন খুব ভাল করে রিগিংয়ের কাজ করেছে। কিন্তু একটা বাচ্চা মেয়েকে হারাতে যেভাবে মন্ত্রিসভাকে নামিয়ে দিয়েছিলেন, তার জন্য আমি খুব খুশি।”
নন্দীগ্রামে ফল-বিতর্কের পরে সতর্ক কমিশন। ভবানীপুরের গণনা নিয়ে বাড়তি সতর্কতা। রিটার্নিং অফিসার ছাড়া কাউকে ফোন দেওয়া হয়নি। সব দিকে খতিয়ে দেখে তবেই ফল ওয়েবসাইটে। নন্দীগ্রামে মুখ্যমন্ত্রীর জেতার খবর ছড়িয়ে পড়ে সংবাদমাধ্যমে। পরে ফল বদলে যায়। এই ঘটনা যাতে আর না হয় তাই আগে থেকেই সূত্রের খবর দিল্লি থেকেই নির্দেশ কমিশনের কলকাতার অফিসে।
আরও পড়ুন: Suvendu Adhikari: ‘নিজের চেয়ার বাঁচাতে ৫০ লক্ষ মানুষকে ডুবিয়েছেন দিদিমণি’, বিস্ফোরক শুভেন্দু
আরও পড়ুন: CM Mamata Banerjee: বাতিল জেলাশাসকের সঙ্গে বৈঠক, আকাশপথেই বন্যা কবলিত বাঁকুড়া দর্শন মুখ্যমন্ত্রীর