‘দিলীপ ঘোষের মন্তব্যই সন্ত্রাসের কারণ’, খেদ বিজেপির সাংগঠনিক জেলা সভাপতির, সমর্থন ঘাসফুলের

আরামবাগের সাংগঠনিক বিজেপি জেলা সভাপতি গণেশ চক্রবর্তীর দাবি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের 'উস্কানিমূলক'মন্তব্য়ের জেরেই ফের তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষ মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে।

'দিলীপ ঘোষের মন্তব্যই সন্ত্রাসের কারণ', খেদ বিজেপির সাংগঠনিক জেলা সভাপতির, সমর্থন ঘাসফুলের
নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Updated on: Jun 06, 2021 | 6:46 PM

হুগলি: নির্বাচনে (West Bengal Assembly Election 2021) বঙ্গ বিজেপির ভরাডুবির পরে সংগঠন মজবুত করতে জেলায় জেলায় দলীয় কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক সারছেন বঙ্গ বিজেপির (BJP) শীর্ষ নেতৃত্বরা। কেন নির্বাচনে হার হল তা খতিয়ে দেখতে দলেক অন্দরেই নজর দিয়েছে বঙ্গ বিজেপি। এরমধ্যেই ভোট পরবর্তী সন্ত্রাসের জেরে ঘরছাড়া অনেক বিজেপি কর্মী। তাদেরকেও ঘরে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে দল। শনিবার, আরামবাগে দলীয় বৈঠকে যোগ দেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh)। তিনি বৈঠক থেকে বেরনোর পর কর্মীরা অভিযোগ জানাতে এলে ক্ষুব্ধ হন দিলীপ। কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, “আপনারা বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিন।” এরপরেই রবিবার সকালে তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে তারকেশ্বরের দত্ত পুকুর এলাকা। আর এই সংঘর্ষের পিছনে দিলীপ ঘোষের ‘উস্কানিমূলক’ মন্তব্যই কারণ বলে মনে করছেন জেলা বিজেপি নেতৃত্বের একাংশ।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, রবিবার সকালে, বিজেপি (BJP) কর্মী বিশ্বজিৎ কর্মকারের বাড়ির পাঁচিল নিয়ে প্রতিবেশী স্কুল শিক্ষক কাঞ্চন চক্রবর্তীর সঙ্গে বচসা শুরু হয়। পরিস্থিতি ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠলে উভয় পক্ষে হাতাহাতিও হয়। গেরুয়া শিবিরের অভিযোগ, সেইসময় তৃণমূলের কর্মী সমর্থকেরা বিশ্বজিৎবাবু ও তাঁর মা-বাবাকে বেধড়ক মারধোর করে। পাল্টা, তৃণমূলের বুথ সভাপতি পলাশ লোহার অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, দুই প্রতিবেশীর মধ্যে অশান্তি থামাতে গেলে উল্টে তৃণমূল কর্মীদের মারধর করে বিজেপি কর্মীরা। এর জেরে আহতও হন দুই তৃণমূল কর্মী। আর এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই ফের সামনে আসে তৃণমূল-বিজেপি সংঘাত।

আরামবাগের সাংগঠনিক বিজেপি জেলা সভাপতি গণেশ চক্রবর্তীর দাবি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের ‘উস্কানিমূলক’মন্তব্য়ের জেরেই ফের তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষ মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। এদিন তিনি বলেন, “মাত্র একমাস হল নতুন সরকার এসেছে। ভোটের পর সব শান্ত হয়ে গিয়েছিল। আমাদের কর্মীরা বাড়ি ফিরতেও শুরু করেছিল। কিন্তু একমাসের মধ্যেই ফের অশান্তি শুরু হল।” বিজেপি নেতার আশঙ্কা, দিনে দিনে এই অশান্তি আরও বাড়বে। আর এই অশান্তির পেছনে তিনি দিলীপ ঘোষকেই দায়ী করছেন। বিজেপি নেতা গণেশবাবু বলেন, “আমাদের রাজ্য সভাপতি শনিবার বৈঠক করতে আসেন। দলের কর্মীরা তাঁর কাছে অভিযোগ জানাতে গেলে তিনি বলেন, ‘বিজেপি ছেড়ে তৃণমূল করুন’। একজন সাধারণ কর্মীকে বলছেন, ‘তেল বেড়েছে তোমার, তেল কেড়ে নেব।’ এটা কি রাজ্য সভাপতির মুখের কথা হওয়া উচিত! আমরা কি রাজ্য় সভাপতির থেকে এমন মন্তব্য আশা করি! দিলীপবাবুর এই সব মন্তব্য়ের জন্যই সন্ত্রাস বাড়ছে। এই কথার পর তৃণমূল কি ছেড়ে দেবে! সব শান্ত হয়ে গিয়েছিল। শুধুমাত্র দিলীপ বাবুর মন্তব্যের জন্যই আবার ঝামেলা শুরু হল।”

বিজেপি নেতার এই মন্তব্যকে সমর্থন জানিয়েছেন, হুগলির তৃণমূল (TMC) জেলা সভাপতি দিলীপ যাদব। তৃণমূল নেতা এ প্রসঙ্গে বলেন, “গণেশবাবু যা বলেছেন ঠিক বলেছেন। জেলায় কোনও অশান্তি ছিল না। নেই। কিন্তু রাজ্য সভাপতি এই অশান্তি তৈরি করার চেষ্টা করছেন। মিথ্য়ে কথা বলে বিজেপি কর্মীদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি করছেন। তাই তাঁকে ঘিরে ধরে কর্মীরা বিক্ষোভ দেখিয়েছে। ওঁ চাইছেন জেলায় যেন অশান্তি হয়। জেলার অশান্তির নাম আসলে দিলীপ ঘোষ। তিনি না থাকলে কোনও অশান্তি হবে না।”

উল্লেখ্য়, গত ৪জুন চূঁচূড়ায় বৈঠক করতে এসে কর্মীদের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন বিজেপি রাজ্য় সভাপতি। সেদিন দিলীপবাবু বলেছিলেন, “বিজেপি করলে মার খেতে হবে। আমিও খেয়েছি। মার না খেতে পারলে দল ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিন।” কর্মীদের উদ্দেশে এ ধরনের বাক্যবাণ মেনে নিতে পারেনি জেলা বিজেপি নেতৃত্ব। সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় যদিও বলেন, “নির্বাচনে পরাজয়ের পর কর্মীদের মন ভেঙে গিয়েছে। মান-অভিমানের থেকে এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। দলের সমস্যা দলেই মিটিয়ে নেওয়া হবে।”

আরও পড়ুন: ‘চেঁচাবে না, তোমার চেঁচানি শুনতে আসিনি, পার্টি ছেড়ে দাও’, মেজাজ হারিয়ে বিক্ষুব্ধ কর্মীকে ‘তৃণমূল’ করার নিদান দিলীপের