‘চেঁচাবে না, তোমার চেঁচানি শুনতে আসিনি, পার্টি ছেড়ে দাও’, মেজাজ হারিয়ে বিক্ষুব্ধ কর্মীকে ‘তৃণমূল’ করার নিদান দিলীপের

বৈঠক সেরে বেরনোর অনতিপরেই দিলীপ ঘোষকে ঘিরে ধরেন বিক্ষোভকারীরা। কিছুজন জানান, দল ব্যবস্থা না নেওয়ায় তাঁরা মার খাচ্ছেন। কিছু কর্মীর দাবি, তাঁরা পদ নয়, সম্মান চান। রাজ্য সভাপতি হয়ে দিলীপবাবু যেন সেই বিষয়ে যথাযথ চিন্তা করেন। কিন্তু ক্রমশ পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ায় সাময়িকভাবে মেজাজ হারান দিলীপ ঘোষ।

'চেঁচাবে না, তোমার চেঁচানি শুনতে আসিনি, পার্টি ছেড়ে দাও', মেজাজ হারিয়ে বিক্ষুব্ধ কর্মীকে 'তৃণমূল' করার নিদান দিলীপের
নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Updated on: Jun 04, 2021 | 11:49 PM

হুগলি: একুশের নির্বাচনে সবুজ ঝড় বাংলা জুড়ে। কিন্তু ভোটপর্ব মিটলেও জারি রাজনৈতিক সন্ত্রাস। শাসকশ্রেণির শোষণ ও  অত্যাচারে প্রাণ ওষ্ঠাগত এমনটাই অভিযোগ বিরোধী পদ্ম শিবিরের (BJP)। শুক্রবার, হুগলি সাংগঠনিক জেলা কার্যালয়ে দলীয় বৈঠক করতে আসেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। বৈঠক থেকে বেরনোর পরেই বিজেপির কর্মীর রাজ্য সভাপতিকে ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে সাময়িকভাবে মেজাজ হারিয়ে কর্মীদের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghsoh)। পাশাপাশি, হুগলির সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়ের (Locket Chatterjee) দাবি, তৃণমূলের মদতপুষ্ট হয়েই কিছু দলীয় কর্মী এই কাজ করেছে।

এদিন, বিজেপির দলীয় কার্যালয়ে বৈঠক শুরুর পর থেকেই ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন জেলার কর্মী-সমর্থকেরা। তাঁদের দাবি, ভুল প্রার্থী নির্বাচনের জন্যেই জেতা আসন খোয়াতে হয়েছে দলকে। পাশাপাশি, ভোট পরবর্তী হিংসার জেরে মার খাচ্ছেন দলের কর্মীরা। ঘরছাড়া শতাধিক। এই পরিস্থিতিতে জেলা বিজেপি নেতৃত্ব কোনও পদক্ষেপ করেনি বলে অভিযোগ। জেলা বিজেপি সভাপতি গৌতম চট্টোপাধ্যায়, ও রাজ্য সম্পাদক দীপাঞ্জন গুহকে পদ থেকে সরানোর দাবি করেন বিজেপি কর্মীরা। বৈঠক সেরে বেরনোর সময়ে রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকে (Dilip Ghsoh)  ঘিরে ধরেও বিক্ষোভ চালিয়ে যান আন্দোলনকারী কর্মীরা।

বিক্ষুব্ধ বিজেপি কর্মী দেবপ্রসাদ চক্রবর্তী বলেন, “বাংলায় এত বড় হার বিজেপির হতো না। শুধুমাত্র ভুল প্রার্থী নির্বাচনের জেরে জেতা আসন হেরে যেতে হয়েছে। জেলা সভাপতি গৌতম চট্টোপাধ্য়ায় একজন জোচ্চোর, চিটিংবাজ। আর তুষার মজুমদার ধনিয়াখালির প্রার্থী নিজেকে ডাক্তার বলে। ওঁর কোনও ডাক্তারি সার্টিফিকেট নেই। সবটাই মিথ্যে বলে। যারা দিনের বেলা বিজেপির সঙ্গে থেকে রাতের বেলা তৃণমূলের ঘরে গিয়ে টাকাপয়সার ভাগ-বাটোয়ারা করে তাদের প্রার্থী করা হয়েছে। বালিখাদানের বালি চোর, সিন্ডিকেটের দালাল এরা সব। আমরা অবিলম্বে জেলা সভাপতি গৌতম চট্টোপাধ্যায় ও দীপাঞ্জন গুহর অপসারণ চাই। আমরা প্রথম দিন থেকে পার্টির কাছে দায়বদ্ধ। তৃণমূলের মতো জোচ্চোর চিটিংবাজদের আমরা চাই না। আমাদের কর্মীরা পড়ে পড়ে মার খাচ্ছে। কতজন ঘর ছাড়া। ঘরে ফিরতে পারেনি। কতজন তো প্রাণের ভয়ে কার্যালয়েই পড়ে আছে। এদের সকলের দায়িত্ব পার্টিকে নিতে হবে। এর আগে অনেকবার লিখিত দিয়েছি, কাজ হয়নি। আজ তাই বাধ্য হয়ে এই চরম সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা।”

বৈঠক সেরে বেরনোর অনতিপরেই দিলীপ ঘোষকে (Dilip Ghsoh) ঘিরে ধরেন বিক্ষোভকারীরা। কিছুজন জানান, দল ব্যবস্থা না নেওয়ায় তাঁরা মার খাচ্ছেন। কিছু কর্মীর দাবি, তাঁরা পদ নয়, সম্মান চান। রাজ্য সভাপতি হয়ে দিলীপবাবু যেন সেই বিষয়ে যথাযথ চিন্তা করেন। কিন্তু ক্রমশ পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ায় সাময়িকভাবে মেজাজ হারান দিলীপ ঘোষ। এক কর্মীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, “ভদ্রভাবে কথা বলো। তোমার চেঁচানি শুনতে এখানে আসিনি। চেঁচাবে না। পার্টির জন্য মার খেয়েছ তো কী হয়েছে! আমি দশবার মার খেয়েছি। তুমি কতবার মার খেয়েছ! বিজেপি করবে আর মার খেতে পারবে না! তাহলে পার্টি ছেড়ে দাও, তৃণমূল করো।” পরে, অবশ্য় সামলে নিয়ে তিনি বলেন, “আপনাদের সকলের কথা শুনেছি। মাথায় রাখছি। আমি সবসময় আপনাদের পাশে আছি। এখন এভাবে বিক্ষোভ দেখিয়ে পরিবেশ উত্তপ্ত করবেন না।”

কার্যত বিধানসভা নির্বাচনে ভরাডুবির পর থেকেই সরব হয়েছে রাজ্য বিজেপি। হারের কারণ হিসেবে, বিজেপির আদি-নব্য দ্বন্দ্ব, কেন্দ্রীয় বিজেপির অত্যধিক আধিপত্য, অপরিণামদর্শিতা ও হঠকারিতাকেই দায়ী করেছেন রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের একাংশ। শুধু তাই নয়, তৃণমূল ছেড়ে আসা দলবদলু নেতাদের উপর গেরুয়া শিবিরের অগাধ বিশ্বাসকেও হারের কারণ বলে মনে করেছে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব। ভোটের পর তাই, বিজেপির একমাত্র নজর তৃণমূলস্তরীয় কর্মীদের উপর। সেখানে ভাঙন ধরলে কার্যত বঙ্গে বিজেপির ভাঙন রোখা যাবে না বলেই মনে করেছেন দলের শীর্ষ নেতৃত্বরা। তাই ভোট মিটতেই আক্রান্ত বিজেপি কর্মীদের পাশে গিয়ে দাঁড়ানো ও তাঁদের আশ্বাস দেওয়াতেই জোর দিয়েছে পদ্ম শিবির। কিন্তু, শুক্রবারের ঘটনায় কার্যত বিপদের সিঁদুরে মেঘ দেখছেন দিলীপ ঘোষ-সহ রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের একাংশ। যদিও, এই ঘটনায় সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্য়ায় বলেন, “ভোটে হারা-জেতা থাকেই। আমরা অনেক আশা নিয়ে লড়াই শুরু করেছিলাম। এতবড় পরাজয় হবে ভাবিনি। উত্তরবঙ্গে আমরা ভাল ফল করেছি বটে, কিন্তু আমাদের আরও ভাল করতে হবে। পরাজয়ের ধাক্কাটা অনেকেই মেনে নিতে পারেননি। তাই মান-অভিমান হয়েছে। শীঘ্রই সেই সব মিটে যাবে।” পাশাপাশি, হগলির সাংসদ আরও বলেন, “আমরা খবর পেয়েছি তৃণমূলের মদতপুষ্ট কিছু ব্যক্তি এই কাজ করাচ্ছেন। তাঁদের জন্যই আমাদের ভাল কর্মীরা অভিমান করছেন। যে বা যাঁরা এই কাজ করছেন তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হবে না। শোকজ করা হবে। দলের সমস্যা দলের তরফেই মেটানো হবে।”

বিজেপির এই আন্তঃবিক্ষোভ সামনে আসতেই পাল্টা তোপ দেগেছে শাসক শিবির। জেলা তৃণমূল সভাপতি দিলীপ যাদব বলেন, “বিজেপি এতই শৃঙ্খলাপরায়ণ দল যে নিজেদের ঘরের ঝামেলা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। আসলে এরা একটা বিশৃঙ্খল দল। এরা এই নিয়ে দেশ চালাবেন, রাজ্য চালাবেন! মানুষের কাছে এই সত্যিটা উঠে আসা খুব দরকার। তবে, এদের নিয়ে যত কম কথা বলা যায়, ততই ভাল।”

আরও পড়ুন: ‘আমাকে প্রাণে মেরে দিত’, চোখের জলে ভাসছেন তৃণমূল নেতা, গোষ্ঠী সংঘর্ষে উত্তপ্ত মেজিয়া