কোচবিহার: খুব বেশিদিন আগের ঘটনা নয়। খুব বেশি হলে সপ্তাহ দু’য়েক হয়েছে। রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী উত্তরবঙ্গের তৃণমূল নেতা রবীন্দ্রনাথ ঘোষ (Rabindranath Ghosh) ফেসবুকে উগরে দিয়েছিলেন নিজের ‘অভিমান’। যা নিয়ে তুমুল জল্পনা শুরু হয় উত্তরের রাজনীতিতে। এরই মধ্যে শনিবার কোচবিহারের দিনহাটার ভোটের দিন ঘরেই বসে থাকতে দেখা গেল তৃণমূলের রবীন্দ্রনাথকে।
গোষ্ঠীকোন্দলের অভিযোগ বার বার মাথায় নিতে হয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঘোষকে। গত বিধানসভা ভোটে নিজের কেন্দ্র নাটাবাড়িতে সে কারণেই রবীন্দ্রনাথকে বিজেপির মিহির গোস্বামীর কাছে হারতে হয়েছে বলেও জেলার একাংশের দাবি। যে রবীন্দ্রনাথের হাতে তৃণমূল সুপ্রিমো এক সময় উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের ভার সঁপেছিলেন, তাঁকে অনায়াসে হারিয়ে দেন মিহির গোস্বামী।
কোচবিহার দক্ষিণ থেকে লড়ে আসা মিহিরকে নাটাবাড়ির মুখ করেছিল বিজেপি। সেখানেও জয় ছিনিয়ে নেন তিনি। এরপরই জেলা তৃণমূলের একাংশ দাবি করে, তাদের দলের অন্দরের দলাদলির কারণেই এই হার রবীন্দ্রনাথের। হারের পরও বিতর্ক তাঁকে নিয়ে থামেনি।
সেই রবীন্দ্রনাথ ঘোষ দিনহাটায় উপনির্বাচনের প্রচারে ব্রাত্য ছিলেন। কিছুদিন আগে তিনি ফেসবুকে লিখেছিলেন, “জীবনে সঠিক কাজ করলেও মিলতে পারে অপমান ও অবহেলা , তাতে খারাপ লাগে ….।” এবার উপনির্বাচনের দিনে একাকী নিজের বাড়িতে টিভিতে ভোট দেখে সময় কাটালেন তিনি। রাজ্যের সহ সভাপতিকে জেলার নেতাদের কাছে ব্রাত্য হয়েই থাকতে হল।
এর আগে বিধানসভা হোক বা লোকসভা, ভোটের সময় কোচবিহারের নতুন পল্লিতে রবীন্দ্রনাথ ঘোষের বাড়ি ছিল শাসকদলের ভরকেন্দ্র। এখান থেকেই দলীয় কর্মীদের কাছে নানান নির্দেশ যেত। জেলার যে কোনও প্রান্তে নির্বাচনে দলীয় কর্মীদের ভূমিকা ঠিক করতে প্রতি মুহূর্তে এই বাড়িতে ফোন আসত।
এই প্রথম ভোটে দেখা গেল অন্য ছবি। একাকী জনশূন্য বাড়িতে টিভিতে ভোট পর্ব দেখে সময় কাটছে রবীন্দ্রনাথ ঘোষের। কোচবিহারে কান পাতলে শোনা যায় গোষ্ঠী কোন্দলের জেরেই বিরোধী শিবিরের নেতাদের সুপারিশে কোচবিহারের নির্বাচনী পর্ব চলাকালীন তাঁকে শান্তিপুরে পাঠিয়ে দিয়েছিল দল।
প্রাক্তন মন্ত্রীর মন দিনহাটায় পড়ে থাকলেও তাঁকে সশরীরে শান্তিপুরে ভোট প্রচারে থাকতে হয়েছে। ভোটের আগের দিন শুক্রবার কোচবিহারে ফিরেছেন তিনি। শনিবার সকাল থেকে উপনির্বাচন ঘিরে সরগরম রাজনীতি। কিন্তু নতুন পল্লির এই বাড়িতে দলের নেতাকর্মীদের দেখা মেলেনি। তাঁদের কাছেও যেন ব্রাত্য হয়ে গিয়েছেন প্রাক্তন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ।
দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের ভয়ে এ নিয়ে অবশ্য সে ভাবে মুখ খোলেননি রবীন্দ্রনাথ। শুধু বলেন, “টিভিতে ভোট দেখছি। উপনির্বাচনে আমরাই জিতব। দলের নেতা কর্মীদের তো বলার কিছু নেই। আমি দলের রাজ্য সহ-সভাপতি। দল যখন যেমন নির্দেশ দেয় সে ভাবেই চলি। নির্দেশ দিয়েছিল বলেই শান্তিপুরে গিয়েছিলাম। দিনহাটায় নির্বাচনী প্রচারে যেতে পারিনি ঠিকই। কিন্তু মনোনয়ন দাখিলের সময় আমি ছিলাম। আমার বিশ্বাস আমার দলের প্রার্থী এই ভোটে জয়লাভ করবেন।”