Balurgat: ময়নাতদন্তের জন্য নেই স্থায়ী চিকিৎসক, করুণ দশা বালুরঘাট জেলা হাসপাতালের পুলিশ মর্গে
Balurghat: পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে বিশাল পুলিশ বাহিনী আসে ঘটনাস্থলে। আসে বালুরঘাট থানার আইসি শান্তিনাথ পাঁজা সহ কমব্যাট ফোর্স৷ বিক্ষোভের চাপে অবশেষে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দ্বারা মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে ময়নাতদন্তের সিন্ধান্ত নেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আগামীকাল অর্থাৎ শুক্রবার হবে ময়নাতদন্ত।
বালুরঘাট: বুধবার রাতে বালুরঘাটের আত্রেয়ী নদীতে কুশ সরকার(২৩) নামে এক যুবক তলিয়ে মারা যায়। বৃহস্পতিবার সকালে দেহ উদ্ধার করে ডুবুরিরা। এদিকে ওই মৃত্যুর ঘটনায় পরিবারের তরফে খুনের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে বালুরঘাট থানায় (Balurghat Police Station)। পরিবারের অভিযোগ, তাকে কেউ বা কারা খুন করে নদীতে ফেলে দিয়েছে। গোটা ঘটনার তদন্ত চালাচ্ছে পুলিশ। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকেল হলেও বালুরঘাট জেলা হাসপাতালে ময়নাতদন্তের হয়নি। যা নিয়েই এদিন বিকেলে বিক্ষোভ চলে। জানা যাচ্ছে, এদিন সকালে দেহ ময়নাতদন্তের জন্য বালুরঘাট জেলা হাসপাতালে পৌঁছায়। কিন্তু সারা দিন কেটে যাওয়ার পর বিকেলে জানানো হয়, হাসপাতালে হবে না ময়নাতদন্ত। দেহ মালদায় রেফার করতে হবে। কারণ বালুরঘাট জেলা হাসপাতালের মর্গে নেই কোন স্থায়ী চিকিৎসক। যার ফলে এক-এক দিন এক-এক চিকিৎসক ময়নাতদন্ত করতে আসেন।
আর এখানেই তৈরি হয়েছে সমস্যা। সাধারণ মৃত্যুর ক্ষেত্রে পার পেলেও জটিল বা খুনের মামলা হলে চিকিৎসকরা নিচ্ছেন না বাড়তি ঝুঁকি। যার ফলে বাধ্য হয়েই মালদায় রেফার করা হচ্ছে মৃতদেহ। বৃহস্পতিবার বিকেলে খুনের অভিযোগে মৃত্যুর এমন একটি মৃতদেহ রেফারের প্রতিবাদে উত্তেজনা ছড়াল বালুরঘাট জেলা হাসপাতালে। চিকিৎসককে ঘিরে বিক্ষোভ দেখাল ক্ষুব্ধ মৃতের পরিবারের সদস্য ও পরিজনরা। পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে বিশাল পুলিশ বাহিনী আসে ঘটনাস্থলে। আসে বালুরঘাট থানার আইসি শান্তিনাথ পাঁজা সহ কমব্যাট ফোর্স৷ বিক্ষোভের চাপে অবশেষে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দ্বারা মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে ময়নাতদন্তের সিন্ধান্ত নেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আগামীকাল অর্থাৎ শুক্রবার হবে ময়নাতদন্ত।
বালুরঘাট জেলা হাসপাতালে পুলিশ মর্গ রয়েছে। সেই মর্গে প্রতিদিন জেলার প্রায় তিনটি মৃতদেহ গড়ে ময়নাতদন্ত করা হয়। কিন্তু অভিযোগ, জটিল বা অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় মৃতদেহ এলেই তাদের এই হাসপাতাল থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতাল সূত্রে খবর ওই বিশেষজ্ঞ ফরেন্সিক বিভাগের চিকিৎসক নেই। যার ফলে এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। কিন্তু অনেকের দাবি, সাধারণ অস্বাভাবিক মামলার ময়নাতদন্ত হলেও খুনের মামলায় কেন ময়নাতদন্ত হবে না? খুনের মামলায় দায় এড়াতেই কার্যত চিকিৎসকরা মৃতদেহ ফেরাচ্ছেন বলে অভিযোগ অনেকের। যা নিয়ে মাঝেমধ্যেই হাসপাতালে বিক্ষোভ দেখায় মৃতের পরিবারের সদস্যরা।
এদিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে বালুরঘাট থানার আইসি শান্তিনাথ পাঁজার নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী আসে। এরপর স্বাভাবিক হয় পরিস্থিতি। এদিকে মৃতের পরিবারের তরফে বালুরঘাট থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগ পেতেই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। তবে কীভাবে ওই যুবক আত্রেয়ী নদীতে তলিয়ে গেল তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। এ বিষয়ে মৃত যুবকের দাদা লব সরকার বলেন, ‘আজকে ভোরবেলায় আমার ভাইকে আত্রেয়ী নদী থেকে উদ্ধার করে মর্গে আনা হয়েছে। বিকেল হলেও এখনও ময়নাতদন্ত হল না। এক চিকিৎসক বাকি মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করলেও আমার ভাইয়ের মৃতদেহ ময়নাতদন্ত করেনি। সে নাকি শিশুদের চিকিৎসক। যার ফলে আমাদের মালদায় রেফার করা হচ্ছে। আমরা এখানেই ময়নাতদন্ত করতে চাই।’
বালুরঘাট পুরসভার চেয়ারম্যান অনোজ সরকার বলেন, ‘আজকে আমাদের ওয়ার্ডে এই সমস্যা হয়েছে। বিষয়টি আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জানিয়েছি। যাতে সমস্যা মেটানো হয়। পুলিশ জানিয়েছেন আগামীকাল মৃতদেহ ময়নাতদন্ত হবে। এবং ময়নাতদন্তের জন্য বোর্ড গঠন করা হয়েছে। ‘
এ বিষয়ে বালুরঘাট জেলা হাসপাতালের সুপার কৃষ্ণেন্দু বিকাশ বাগ বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য বিশেষজ্ঞ ফরেন্সিক বিভাগের চিকিৎসক নেই। তাই বাধ্য হয়ে অন্য বিভাগের চিকিৎসকদের ময়নাতদন্ত করতে পাঠানো হচ্ছে। আজকে অস্বাভাবিক মৃত্যুর দেহ থাকায় ওই চিকিৎসক ময়নাতদন্ত করতে পারেনি। শুক্রবার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে ময়নাতদন্ত করা হবে। ‘
অন্যদিকে জেলা পুলিশ সুপার রাহুল দে বলেন, আজ সকালে দেহ উদ্ধার হয়েছে। এনিয়ে বালুরঘাট থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি মর্গের বিষয়টি রোগী কল্যাণ সমিতিতে লিখিত আকারে জানাবেন। যাতে এই সমস্যার সমাধান হয়।