দক্ষিণ দিনাজপুর: উত্তর দিনাজপুরের পর এবার দক্ষিণ দিনাজপুরে শুট আউট। হরিরামপুরে এক ব্যবসায়ীকে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি চালনোর অভিযোগ ওঠে। ঘটনাকে ঘিরে উত্তেজনা হরিরামপুরের বৈরহাট্টা রায়নগর মোড় এলাকায়। গুলিবিদ্ধ ব্যবসায়ীর নাম কমল রাজবংশী। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তিনি হাসপাতালে চিকিত্সাধীন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গুলিবিদ্ধ ব্যবসায়ীর বাবা ঝাড়খণ্ডের এক ব্যক্তির সঙ্গে রসুনের ব্যবসা করতেন। কিন্তু ইদানীং সেই ব্যবসায় মন্দা যায়। ব্যবসায়িক লেনদেন সংক্রান্ত বিষয়ে মন্দা শুরু হয়। তখনই বাঁধে গোল। জানা যাচ্ছে, কমলের কাছ থেকে বেশ কিছু টাকা পেতেন ঝাড়খণ্ডের ওই ব্যক্তি। তা নিয়ে কমলের ওপর চাপ বাড়াতে থাকেন তিনি। এর আগেও নানাভাবে তাঁকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ।
পাশাপাশি ওই ব্যক্তির গাড়িও চালাতেন কমল। তিনি ব্যবসায়ীকে জানিয়েছিলেন, এখন গাড়ি চালাতে পারছেন না। গাড়ি চালিয়ে টাকা রোজগার করলেই ধার শোধ করে দেবেন।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে নটা নাগাদ কমল ও তাঁর জামাই ফিরছিলেন। সেই সময় আচমকাই এক ব্যক্তি তাঁদের সামনে আসে। ওই ব্যক্তি নিজেকে পরিচয় দেন, তাঁকে ঝাড়খণ্ডের ‘মালিক’ পাঠিয়েছেন। তাঁর কাছ থেকে টাকা ফেরত চান তিনি। কয়েক দিনের মধ্যেই টাকা ফেরত দিয়ে দেবেন বলে আশ্বাস দেন কমল। কিন্তু তারা তা শোনেনি। এই নিয়ে বচসা চলতে থাকে।
অভিযোগ, বচসা চলাকালীন আচমকাই পকেট থেকে বন্দুক বার করে চিবুকে ঠেকিয়ে ট্রিগার চেপে দেয় ওই ব্যক্তি। রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন কমল। তাঁকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে গঙ্গারামপুর সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে রাতে তাঁকে রেফার করা হয় কলকাতায়।
সেখানে তাঁর অবস্থায় অবনতি হওয়ায় তাঁকে মালদায় স্থানান্তরিত করা হয়। গুলিবিদ্ধ ব্যবসায়ীর জামাই বলেন, “আমি সঙ্গেই ছিলা্ম। ওদেরকে বুঝিয়েছিলাম টাকা ফেরত দিয়ে দেব কিছুদিনের মধ্যেই। কিন্তু ওরা কথা শুনল না। ব্যবসায়ীক কারণে কিছু টাকা ধারবাকি ছিল। বোঝাচ্ছিলাম আমরা। কিন্তু ও খেলা হবে বলেই চিবুকে গুলি চালিয়ে দিল।”
ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। ঘটনার পর থেকে পলাতক নুরুল ইসলাম। তার খোঁজে তল্লাশি চলছে। পুলিশ জানিয়েছে, একটি গুলি চালনার ঘটনা ঘটেছে। সম্পূর্ণটাই ব্যবসায়ীক লেনদেন সংক্রান্ত ঝামেলার জেরে হয়েছে বলেই প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে। অভিযুক্তের খোঁজ চলছে। এর পিছনে অন্য কোনও কারণ রয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত সোমবার ভরসন্ধ্যায় উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জের সুকান্ত মোড়ে গুলি চলে। দেবী স্যান্ন্যাল নামে এক মহিলার মৃত্যু হয়। নিজের দাদা সুজয়কৃষ্ণকে বাঁচাতে গিয়েই গুলি লাগে তাঁর। ঘটনায় আহত হয়েছেন রূপা অধিকারী ও সুজয় কৃষ্ণ মজুমদার নামে আরও দু’জন। তাঁদের আপাতত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ঘটনার নেপথ্যে উঠে আসে সম্পর্কের টানাপোড়েনের তত্ত্ব। অভিযুক্তের তালিকায় নাম রয়েছে দুই বিএসএফ কর্মীর। গুলিবিদ্ধ হন এক পুলিশ কর্মী। শান্তিপ্রিয় জায়গা হিসেবেই সব সময় পরিচিত রায়গঞ্জ শহর। কিন্তু পুজোর আগেই ঘটে যাওয়া এই ঘটনা যে বাসিন্দাদের অস্বস্তি কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
আরও পড়ুন: WB Flood Situation: এক টানা বৃষ্টি! পুজোতে ভাসবে বাংলার এই জেলাগুলি