শিলিগুড়ি: ২২ বছর তিনি ভাত খাননি, রুটিও বাদ দিয়েছিলেন খাবারের তালিকা থেকে। খেতেন মুড়ি-চিঁড়ের মতো শুকনো খাবার। কিন্তু করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের জেরে ২২ বছর পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় ফিরিয়ে এনেছেন ভাত। নিজেই জানিয়েছিলেন একসময় এ কথা। আর রবিবার শিলিগুড়ি (Siliguri)-তে বিজয়া সম্মিলনী অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee) জানালেন গত ২০ বছর তাঁর জ্বর (Fever) হয়নি।
এদিন মমতার কথায়, “আগের বারেও বিজয়া সম্মেলনী করেছিলাম ঠান্ডা লেগেছে আমার। চারশো ষাটটা পুজো ওপেন করেছি। জলে ভিজে পুজা ওপেন করতে গিয়েই ঠান্ডা লেগে কথা বলতে পারছিলাম না। এখনও পুরো ঠিক হইনি। গত কুড়ি বছর আমার জ্বর হয়নি। তাই বেশী কথা বলার স্কোপ নেই। গলাও চোকড আছে।”
বয়স সত্তরের কাছাকাছি মুখ্য়মন্ত্রী এখনও ট্রেড মিলে হাঁটেন। আর কোনও মিছিলে তাঁর সঙ্গে হেঁটে যেতে রীতিমতো বেগ পেতে হয় কমবয়সী রাজনৈতিক সর্তীর্থদেরও। তবে এদিন মুখ্যমন্ত্রীর গলাটাও ধরা লাগল। নিজেই জানালেন তাঁর অসুস্থতার কথা। তবে তার পরেও স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে বিজয়ায় সবাইকে শুভেচ্ছা জানালেন বাঘাযতীন পার্কের সভা থেকে। একই ভাবে কটাক্ষ ছুড়ে দিয়ে গেলেন বিজেপি-কে। আবার ভ্যাকসিন থেকে ত্রিপুরা প্রসঙ্গেও বিজেপিকে আক্রমণ শানালেন মুখ্যমন্ত্রী।
মমতার কথায়, “আমিও জীবনে বারো তেরো বছর থেকে রাজনীতি শুরু করি। এত ছোট থেকে কেউ রাজনীতি করেছে কিনা জানি না। একমাত্র আমি ক্ষত নিয়ে বেঁচে আছি। আমায় জীবন্ত লাশ বলতে পারেন। বহু হোঁচট খেয়েছি। নিজের অভিজ্ঞতা বই-তে লিখেছি। আমার বহু বইতে লেখা আছে, কোন সময়ে কী করলে আপনি সফলতার পথে এগোবেন।”
ত্রিপুরা প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, “এটা শ্মশানের শান্তি নয়, বাংলা ত্রিপুরা নয়, গেলেই মাথায় মারো? সন্তোষ মোহন দেবের মেয়েকেও মারছে। ট্রিটমেন্ট হচ্ছে না ভাবতে পারেন?” উল্লেখ্য, সুস্মিতা দেবের ওপর আক্রমণের অভিযোগ উঠেছে বিজেপির বিরুদ্ধে। তিনি নিজে এ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবকে নিশানা করেন।
এদিকে ভোট পরবর্তী হিংসার অভিযোগে যখন বিজেপি তৃণমূলকে আক্রমণ শানাচ্ছে, মমতার মন্তব্য, ‘নির্বাচনের পর এখানে কটা হিংসা দেখেছেন? বিজেপি হুক্কাহুয়া করে ঘুরছে আর হিংসা বলছে। ত্রিপুরায় তাকান, একটা মিছিল করতে দেয় না! চ্যারিটি বিগিন অ্যাট হোম।”
ভ্যাকসিন নিয়ে মোদী সরকারকে বিঁধেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সদ্যই দেশে ১০০ কোটির টিকাকরণে নজির গড়েছে ভারত। তবে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, বাংলাকে ভ্যাকসিন নিয়েও বঞ্চনা করা হচ্ছে। বলেন, “শিলিগুড়িতে, কলকাতায় আমরা টিকা দিচ্ছি। বাংলায় টিকা দিচ্ছি। কাজটা করে ঢাক বাজান। সাত কোটি টিকা দিয়েছি। দরকার ১৪ কোটি। আমায় দেওয়া হয়নি। বাকিটা লোককে জানতে হবে। সত্যিটা কী জানা দরকার। ১৪ কোটি দরকার, পেলাম সাত কোটি। তার মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজের মধ্যে আবার ১৮ প্লাস ডবল ডোজ পেয়েছি কত? দেশে ঢেঁড়া পেটাচ্ছে একশো কোটির? দুটো ডোজ না হলে সম্পূর্ণ টিকা হয় না। আমি একশো শতাংশ করে দেব।”
তিনি আরও বলেন, “মহারাষ্ট্র বেশি পেয়েছে টিকা। বাংলা বাংলা ছাগলের তিন নাম্বার ছানা! আমার জনসংখ্যা বেশি। কেন টিকা পাব না? ভ্যাকসিন কিনে বিনা পয়সায় দিয়েছি। এদিকে একটা করে সার্টিফিকেট দিচ্ছে (কেন্দ্রীয় সরকার)। যত মারা গেল, তাঁদের ডেথ সার্টিফিকেটে মোদীর ছবি দেবে তো?”
আরও পড়ুন: ‘গাজাতে বোমা পড়লে মিছিল আর বাংলাদেশ নিয়ে চুপ!’ মমতাকে ফের আক্রমণ শুভেন্দুর