
দার্জিলিং: উত্তরবঙ্গে বিপর্যয়ের দায় আগেই ভুটানের ওপর চাপিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার ড্রেজিং না করলে এবার বাঁধের যৌক্তিকতা নিয়েই প্রশ্ন তুললেন মুখ্যমন্ত্রী। সব ড্যাম ভেঙে দেওয়ার পক্ষে সওয়াল তুললেন তিনি। দার্জিলিঙের প্রশাসনিক বৈঠক থেকে তিনি বললেন, “এই ধরনের ড্যামের প্রয়োজনীয়তা কী? আমি মেঘনাথ সাহার রিপোর্ট দেখেছি। তাঁরই বক্তব্য ছিল, ড্যামের কোনও প্রয়োজনীয়তা নেই।”
কথার রেশ ধরেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ড্যাম রাখার কারণ হল, যাদের জলের সঙ্কট, তার এলাকায় গ্রীষ্মকালে জল সরবরাহ করার জন্য। গ্রীষ্মকালে আমি যদি জল চেয়ে না পাই, আর বর্ষা হলেই তোমরা তোমাদের জল ছেড়ে দেবে আমাদের বাংলায়… ড্রেজিং না করলে ড্যামের কোনও প্রয়োজনীয়তা নেই। ভেঙে দাও ড্যাম।”
গঙ্গাসাগর এলাকায় আরও বেশি করে ম্যানগ্রোভ লাগানোর পরামর্শ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “ম্যানগ্রোভ কংক্রিটের থেকেও শক্ত। বন দফতরের তো দায়িত্ব রয়েছে। আপনারা যদি পাঁচ কোটি গাছ গঙ্গাসাগরের ওদিকটা লাগান, উত্তরবঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা বাঁচবে। আমি জলের টাকা জলে ঢালতে রাজি নই। যে স্থায়ী সমাধান হবে, সেটাই করতে হবে।”
সোমবারই নাগরাকাটায় গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী দুর্গতদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার পর ভুটানের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ভুটানের জলেই উত্তরবঙ্গে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। ওদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিত! নাগরাকাটা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সোমবার সেই গোটা এলাকা হেঁটে ঘোরেন তিনি। দুর্গতদের সঙ্গে কথা বলেন। ত্রাণসামগ্রী বিলি করার পাশাপাশি মৃতদের পরিবারের এক জন করে সদস্যের হাতে চাকরির নিয়োগপত্রও তুলে দিলেন তিনি।
বামনডাঙা থেকে মমতা বলেন, ‘‘আমরা অনেক দিন ধরে বলছি ইন্দো-ভুটান নদী কমিশন গড়া হোক এবং তার সদস্য করা হোক বাংলাকে। ভুটানের জলেই এত বড় ঘটনা ঘটেছে। আমরা চাই ওরা ক্ষতিপূরণ দিক।’’ এবার ড্যামই ভেঙে দেওয়ার পক্ষে সুর চড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী।
প্রসঙ্গত, দার্জিলিঙে প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেন দীর্ঘদিন ধরে হলদিয়া, কলকাতা পোর্ট বা ফরাক্কায় ড্রেজিং হচ্ছে না। তাতে সমস্যায় পড়ছে বাংলা। বর্ষাকালে জল ধরে রাখতে না পেরে, বাঁধ খুলে দেওয়া হচ্ছে। এদিকে, ভুটানের জলে বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গ। একদিকে কেন্দ্র টাকা দেয় না, অন্যদিকে, অন্য রাজ্যের জলে বিধ্বস্ত হয় বাংলা। সে কারণেই সোমবার ভুটানেরও ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী। সঙ্গে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন।