শিলিগুড়ি: একুশের বিধানসভা ভোটে তৃতীয়বারের জন্য সরকার গড়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। মাঝের এই ১০-১১ বছরে রাজ্য রাজনীতিতে বহু চমক দিয়েছে তৃণমূল। কিন্তু ছুঁতে পারেনি শিলিগুড়িকে। গোটা রাজ্যে যখন বাম দুর্গ ভেঙে ছত্রখান, তখনও সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে লাল পতাকা উড্ডীন থেকেছে সেখানে। শিলিগুড়ি পুরনিগমকে কোনওভাবেই হাতছাড়া হতে দেননি তিনি। কিন্তু ২০২২-এর পুরভোটে এ রাজ্যে বামেদের শেষ সম্বলটুকুও হাতছাড়া। শুধু হাতছাড়াই নয়, ৪৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে মাত্র চারটি ধরে রাখতে পেরেছে বামেরা। উল্লেখযোগ্য হার হয়েছে প্রাক্তন মেয়র অশোক ভট্টাচার্যের। সোমবার, যেদিন শিলিগুড়ি পুরনিগম বামেরা হারাল, ঠিক সেই বিকেলেই সেখানে পৌঁছেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতাতেই বলে গিয়েছিলেন, “শিলিগুড়িতে জয়ের খবর নিয়ে যাচ্ছি। আমি খুবই খুশি। এটা আমার কাছে বড় ব্যাপার।” চার পুরনিগমে তৃণমূলের জয়জয়কার হলেও একমাত্র শিলিগুড়ির মেয়রের নাম তিনি ঘোষণা করেছেন। গৌতম দেব শিলিগুড়ি পুরনিগমের মেয়র হচ্ছে। সেখানে পা রেখেই আগামী মেয়রের কাছে মমতার দাবি, “সব ধর্ম, কর্ম, বর্ণ নিয়ে কলকাতার মতো চকচকে শিলিগুড়ি দেখতে চাই।”
এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “একটাই মেয়র ঘোষণা করেছি আমি। তাঁকে বলছি সব ধর্ম, কর্ম, বর্ণ নিয়ে কলকাতার মতো চকচকে শিলিগুড়ি দেখতে চাই। পরিকল্পনা করুন, লক্ষ্য স্থির থাকুক। শুধু টাকা ঢাললে হবে না। আর মাথায় রাখতে হবে, মানুষের বোঝাও বাড়াব না। ট্যাক্স আমরা বাড়াই না।”
সোমবার বিকেলেই বাগডোগরা বিমানবন্দরে নামেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখান থেকে চলে যান শিলিগুড়ি নৌকাঘাট মোড়ে। পঞ্চানন বর্মার মূর্তিতে মাল্যদান করেন। সেখান থেকেই শিলিগুড়িবাসীকে ধন্যবাদ জানান তৃণমূল সুপ্রিমো। তিনি বলেন, “সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ। প্রতিটা মানুষের সমর্থন পেলাম। সকলের প্রতি আমার অভিনন্দন, কৃতজ্ঞতা। শিলিগুড়ি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেক কাজ করেছি শিলিগুড়িতে। গজলডোবা থেকে বেঙ্গল সাফারি করেছি। রাস্তার সম্প্রসারণ, ফ্লাইওভার করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হোক এখানে আমরা চাই। মালদহেও জমি দেব। বড় বিমান নামবে সেখানে।”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ইতিমধ্যেই তাঁর সরকার এখানকার মানুষের জন্য অনেক কিছু করেছে। হাসপাতাল, স্কুল-কলেজ হয়েছে। রাজবংশীদের জন্য ২০০টি স্কুল করা হয়েছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “এবাই চাই শিলিগুড়ির ট্রাফিক ঢেলে সাজুক। এমনভাবে পরিকল্পনা করুন গাড়ি যেন রাস্তায় না দাঁড়িয়ে থাকে। গরীবের দোকান না থাকলেও চলবে না। তিস্তা সিটি হচ্ছে।” এদিন শিলিগুড়িতে পা রেখেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুঝিয়ে দিলেন, অবশেষে বামেদের হাত থেকে ছিনিয়ে নেওয়া শিলিগুড়িকে আরও ঝকঝকে, আরও গতিময় করারই এবার তাঁর লক্ষ্য।