
জামালপুর: রাজ্যে পুরোদমে চলছে ভোটার তালিকা পরিমার্জনের কাজ। বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন বিএলও-রা। কিন্তু উদ্বেগ বেড়েই চলেছে রাজ্যের শিক্ষা মহলে। সিংহভাগ জায়গাতেই বিএলও-র দায়িত্ব এসে পড়েছে প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকদের কাঁধে। পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের হালাড়া প্রাথমিক বিদ্যলয়ে শিক্ষকের সংখ্যা চার। চারজনই বিএলও। সামনেই আবার বার্ষিক পরীক্ষা। কিন্তু কীভাবে শেষ হবে সিলেবাস? পঠনপাঠন শেষ হওয়ার আশঙ্কায় চিন্তা বাড়ছে পড়ুয়া থেকে অভিভাবকদের। অভিভাবকরা বলছেন অবস্থা যা তাতে গোটা স্কুলের পঠনপাঠন শিকেয় উঠেছে বললেও কম বলা হয়।
১৯৫৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এই স্কুলের অদূরেই রয়েছে জামালপুর ব্লক প্রশাসনের অফিস। বিদ্যালয়ে এখন মোট পড়ুয়া সংখ্যা ১১২ জন। চার শিক্ষকের মধ্যে রয়েছেন লক্ষ্মীকান্ত মালিক, সুজিত বাগ, অভিজিৎ মিত্র এবং সুজাতা মিশ্র মুখোপাধ্যায়। কিন্তু চারজনই এখন বাড়ি বাড়ি এনুমারেশন ফর্ম পৌঁছে দেওয়ার কাজে ব্যস্ত। এর মধ্যে সুজিত বাগের মাথায় রয়েছে স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব। স্কুলের পঠনপাঠন নিয়ে চিন্তিত তিনিও। উদ্বেগের সুরেই তিনি বলছেন, গত ৪ নভেম্বর থেকে আমি ও আমার স্কুলের বাকি তিন শিক্ষক-শিক্ষিকার স্কুলে যাওয়া একপ্রকার অসম্ভব হয়ে পড়ে। এখন স্কুল যাতে বন্ধ না হয়ে যায় তাই আমরা প্রত্যেকে একদিন করে স্কুলে গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছি। স্কুলের শতাধিক পড়ুয়ার মিড ডে মিল যাতে বন্ধ না হয় তাও দেখা হচ্ছে।
পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ব্লকের স্কুল পরিদর্শক ইটলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মহম্মদ আসিফ ফিদৌসিকে আপাতত হালাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বহাল করেছেন। তিনি এখনও কোনওরকমে স্কুলটি সামলাচ্ছেন। তবে চাপ যে আছে মানছেন তিনিও।
সহ-শিক্ষক অভিজিৎ মিত্রের গলাতেও উদ্বেগের সুর। তিনি বলছেন “আমাদের চারজনকেই বিএলও করে দেওয়ায় যথেষ্ট বিড়ম্বনায় পড়েছি। পড়ুয়াদের ঠিক মতো পড়াতে না পেরে আমাদেরও খারাপ লাগছে।” স্কুলেরই এক পড়ুয়ার মা দেবিকা পোড়েলও ভেবে পাচ্ছেন না কীভাবে সিলেবাস শেষ হবে। তিনি বলছেন, “সামনেই ডিসেম্বর। বার্ষিক পরীক্ষা রয়েছে। অন্য স্কুলের একজন শিক্ষক এখন স্কুল সামলাচ্ছেন। এভাবে কী হয়?”
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান মধুসূদন ভট্টাচার্য যদিও কমিশনের দিকেই আঙুল তুলছেন। খানিক ক্ষোভের সঙ্গেই বলছেন, “নির্বাচন কমিশন যদি রাজ্য সরকার এবং রাজ্যের শিক্ষা দফতরে সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিত তাহলে এই সমস্যা তৈরি হতোই না।”