Jhalda Municipality: স্বামী হারানোর যন্ত্রণা বুকে নিয়ে লড়াই, অদম্য জেদেই ‘আলোকিত’ পূর্ণিমা

ঝালদা পুরসভার চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করলেন পূর্ণিমা কান্দু। তাঁর লড়াইয়ের কাহিনির শুরুটা ঠিক কোথায়?

Jhalda Municipality: স্বামী হারানোর যন্ত্রণা বুকে নিয়ে লড়াই, অদম্য জেদেই 'আলোকিত' পূর্ণিমা
ঝালদা পুরসভার দায়িত্ব নিলেন পূর্ণিমা কান্দু।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jan 22, 2023 | 11:47 AM

পুরুলিয়া: লড়াইটা কি গত বছরের ১৩ মার্চ শুরু হয়েছে? নাকি ২০১৫ সালে? নাকি তারও আগে? যখন স্বামীকে রাজনীতির ময়দানে লড়ে যেতে দেখেছেন। নিজে সংসার, সন্তানদের সামলেছেন। তবে স্বামীর প্রতি পদক্ষেপের সাক্ষী থেকেছেন। তারপর একসময় স্বামীর হাত ধরে রাজনীতিতে প্রবেশ। হেরে যাওয়া। আবার ঘুরে দাঁড়ানো। স্বামীর সঙ্গে নিজেরও জয়। সেই জয় উদযাপনের আগেই দুষ্কৃতীদের গুলিতে স্বামীর মৃত্যু। নতুন লড়াই। আর আজ ঝালদা পুরসভার চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ। পূর্ণিমা কান্দুর লড়াইয়ের কাহিনির শুরুটা ঠিক কোথায়?

শুরুর সেই দিনগুলো…

ঝালদা শহরেরই কন্যা পূর্ণিমা বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হন তপন কান্দুর সঙ্গে। ২০০০ সালে সক্রিয় রাজনীতিতে প্রবেশ করেন তপন। ফরওয়ার্ড ব্লকের টিকিটে পৌরসভা নির্বাচনেও দাঁড়িয়ে পড়েন। ঝালদার ২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জেতেন। সেই লড়াই পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছিলেন পূর্ণিমা। এরপর ২০১৫ সালে ঝালদা পুরনির্বাচনে সরাসরি লড়াইয়ের ময়দানে নামেন। রাজনীতির ময়দানের নামার পিছনে কারণও হয়েছে। ২ নম্বর ওয়ার্ডটি মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত হওয়ায় স্বামীর জায়গায় প্রার্থী হন তিনি। রাজনীতির কারবারিরা বলছেন, নিজের জেতা আসনে স্ত্রীকে দাঁড় করিয়েছিলেন তপন কান্দুই। আর তিনি প্রার্থী হয়েছিলেন ১২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে। দু’জনেই ফরওয়ার্ড ব্লকের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তপনবাবু জয়ী হলেও ১৩ ভোটে তখনকার কংগ্রেস প্রার্থী বাবী কান্দুর কাছে হেরে যান পূর্ণিমা। বাবী সম্পর্কে পূর্ণিমার জা হন।

লড়াইয়ের ময়দান ছাড়েননি…

হেরেছেন। কিন্তু, রাজনীতির ময়দান ছাড়েননি পূর্ণিমা। আবার নতুন উদ্যমে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। সাত বছর ধরে স্বামীর কাজ দেখেছেন। এর মধ্যেই হয় পট পরিবর্তন। ফরওয়ার্ড ব্লক ছেড়ে সদলবলে কংগ্রেসে যোগ দেন তপন কান্দু। ২০২২ সালে হাত ছাপেই ২ এবং ১২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে নির্বাচনে লড়াই করেন পূর্ণিমা ও তাঁর স্বামী। এই লড়াইয়ে অনেকটাই প্রস্তুত হয়ে ময়দানে নেমেছিলেন পূর্ণিমা। স্বামীর দৃষ্টান্ত অনুসরণ করেই বাড়ি বাড়ি প্রচার শুরু করেন। ২৮৫ ভোটে পরাজিত করেন নিকটতম তৃণমূল প্রার্থী রাগিণী সাউকে। পুরুলিয়া জেলার মধ্যে কংগ্রেসের টিকিতে একই সঙ্গে স্বামী-স্ত্রীর জয় একটা দৃষ্টান্ত হয়ে যায়।

জয়ের হাসি স্থায়ী হল না বেশিদিন…

২০১৫ সালে যা হয়নি। ২০২২ সালে হয়েছে। পুরসভায় একসঙ্গে পা রাখবেন তাঁরা। কান্দু পরিবারের এই খুশি বেশিদিন স্থায়ী হল না। গত বছরের ১৩ মার্চ দুষ্কৃতীদের গুলিতে নিহত হন তপন। স্বামী হারানোর শোক। কিন্তু, লড়াই ছাড়লেন না। এবারের লড়াই যেন আরও কঠিন। স্বামীর হত্যাকারীদের শাস্তির দাবি। পথে নামলেন। সিবিআইয়ের দাবিতে পৌঁছে যান হাইকোর্ট। অবশেষে শুরু হয় সিবিআই তদন্ত। কোনও রাখঢাক না রেখে সন্দেহভাজনদের নামও বলে দেন তিনি। যার মধ্যে ছিলেন তাঁর ভাসুর এবং ভাসুরপো। এই খুনের সঙ্গে তৃণমূলের সরাসরি যোগ রয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।

ঝালদা পুরসভা নিয়েও লড়াই জারি…

সিবিআই তদন্ত শুরু হওয়ার পরও থেমে থাকেননি পূর্ণিমা। ঝালদা পুরসভার মসনদ থেকে তৃণমূলকে হঠাতে জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাতোর সঙ্গে কোমর বেঁধে নামেন। যে দুই নির্দলের সমর্থনে তৃণমূল ঝালদার ক্ষমতা দখল করেছিল, তাঁরা শিবির বদলে ফেলেন। অবশেষে কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে ঝালদা পুরসভায় পুরপ্রধান হন শীলা চট্টোপাধ্যায় । উপপুরপ্রধান হন পূর্ণিমা।

তারপরও টানাপোড়েন চলেছে। হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছে জল। অবশেষে আজ পুরপ্রধানের দায়িত্ব নিলেন পূর্ণিমা। আর দায়িত্ব নিয়েই জানিয়ে দিলেন, এবার তাঁর লড়াই ঝালদার সব মানুষের স্বার্থে। তাদের সুষ্ঠু পুর পরিষেবা প্রদান এবং পানীয় জলের সুব্যবস্থা করতে চান। স্বামীর লড়াইয়ের কথাও স্মরণ করলেন। বললেন, তাঁর স্বামী মানুষের পাশে সবসময় থাকতেন। তিনিও সেই পথেই চলবেন।

কী বলছেন বাবী কান্দু?

২০১৫ সালে তাঁর কাছেই হেরেছিলেন পূর্ণিমা। আর আজ ঝালদার নতুন চেয়ারম্যানকে নিয়ে যখন চারদিকে উচ্ছ্বাস, তখন নিজের বাড়িতে নীরব বাবী। তপন কান্দু হত্যা মামলায় এখন তাঁর স্বামী এবং পুত্র জেলে। পূর্ণিমার দায়িত্বগ্রহণ নিয়ে সংবাদ মাধ্যমের কাছে কিছু বলতে চাননি তিনি।

লড়াইয়ের শুরুর সময় যাই হোক, পূর্ণিমা আজ নিজের লড়াইয়ে আলোকিত। ঝালদায় আজ তাই ‘পূর্ণিমা’।