রোগীর মৃত্যুকে ঘিরে চিকিৎসককে ‘বেধড়ক মার’, নিরাপত্তার দাবীতে কর্মবিরতি স্বাস্থ্যকর্মীদের
চিকিৎসক স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রতিবাদের জেরে এদিন সকাল থেকেই অচল পাণ্ডুয়া গ্রামীণ হাসপাতাল। ফলে সমস্যায় পড়ছেন রোগীরাও। যদিও এই ঘটনায় মুখ খুলতে নারাজ পাণ্ডুয়া থানা।
হুগলি: করোনাকালে ‘সম্মুখ সারির যোদ্ধা’ (Front Line warriors) বলেই পরিচিত তাঁরা। কিন্তু সেই প্রথম সারির কর্মীরাই ভুগছেন নিরাপত্তাহীনতায়। এক রোগীর মৃত্যুকে ঘিরে চিকিৎসককে ব্যাপক মারধরের অভিযোগ উঠল পাণ্ডুয়া গ্রামীণ হাসপাতালে। এর প্রতিবাদেই কর্মবিরতি ঘোষণা করলেন হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্য়কর্মীরা।
হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের তরফে জানা গিয়েছে, সোমবার, শেখ ইসমাইল নামে এক ব্যক্তি বুকে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। তাঁর চিকিৎসাও যথাযথভাবে করা হয়। কিন্তু, ওষুধ দেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্য়েই মারা যান ওই ব্যক্তি। এরপরেই রোগীর আত্মীয়রা কর্তব্যরত চিকিৎসক শিবশঙ্কর রায়ের উপর চড়াও হয়ে তাঁকে বেধড়ক মারধর (Beaten blue) করেন বলে অভিযোগ। গুরুতর আহত ওই চিকিৎসককে অন্য হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য অন্য হাসপাতালে পাঠাতে হয়। অভিযোগ, এই ঘটনায় প্রশাসন কোনওরকম সাহায্য করেনি। এমনকী ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও দোষীদের গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এই ঘটনার প্রতিবাদে, মঙ্গলবার সকাল থেকে কালো ব্যাজ পরে কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। শুধুমাত্র জরুরি পরিষেবা ছাড়া বাকি সব বিভাগের পরিষেবাই বন্ধ করা হয়েছে।
পাণ্ডুয়া হাসপাতালের এক চিকিৎসক (Doctor) শঙ্কর নারায়ণ সরকার বলেন, “আমাদের ডাক্তারকে মারধর করা হল। কিন্তু পুলিশ এল না। আমরা গিয়ে এফআইআর করাতে অভিযোগ জমা নিল। ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেল কাউকে ধরা গেল না! জেলা স্বাস্থ্য় আধিকারিক থেকে শুরু করে প্রশাসনিক কর্তাদের খবর দিয়েও কোনও লাভ হল না। কেউ কোনও পদক্ষেপই করল না। প্রশাসনকে কখনওই আমরা পাশে পাই না। এই করোনা পরিস্থিতিতে আমরা এইভাবে দিনের পর দিন পরিষেবা দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু, আমাদের কথা চিন্তা করার জন্য প্রশাসন ব্যস্ত নয়। আমাদের এক চিকিৎসক গুরুতর আহত। তার দায় কে নেবে!”
জয়দেব মুখোপাধ্যায় নামে হাসপাতালের স্বাস্থ্য়কর্মী (Health Worker) বলেন, “পাশবিক ভাবে চিকিৎসক শিবশঙ্কর রায়কে মারা হয়েছে। যখন তখন রোগীর আত্মীয়রা এসে হামলা করছেন, মারধর করছেন। আমরা সকলে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব কে নেবে! প্রশাসন কোনও পদক্ষেপ করছে না দেখেই আমরা এই কর্মবিরতির ডাক দিয়েছি। শুধু মাত্র জরুরি বিভাগ চালু রয়েছে। আমরা চাই, অবিলম্বে এখানে একটি পুলিশ চৌকি তৈরি হোক। নয়ত, আমাদের পক্ষে কাজ করাই কঠিন হবে।”
চিকিৎসক স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রতিবাদের জেরে এদিন সকাল থেকেই অচল পাণ্ডুয়া গ্রামীণ হাসপাতাল। ফলে সমস্যায় পড়ছেন রোগীরাও। যদিও এই ঘটনায় মুখ খুলতে নারাজ পাণ্ডুয়া থানা। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এখনও চিকিৎসকের উপর হামালার বা এ ধরনের কোনও অভিযোগ কানে আসেনি। তবে , এই ঘটনা ঘটে থাকলে দ্রুত তা তদন্ত করে দেখা হবে।
আরও পড়ুন: ‘তৃণমূলের নামে মিথ্যা অপবাদ ও কুৎসা প্রচারের জন্য দুঃখিত’, মাইকিং করে ‘ভুল স্বীকার’ বিজেপি কর্মীদের!