হুগলি: স্রেফ একটা লাইন। আর কয়েক ঘণ্টার ফারাক। প্রাক্তন নেত্রী আর নেতার মধ্যে ঘুচে গেল সৌজন্যের রাজনীতি, যা রাজীব-অধ্যায়ে এতদিন দেখছিল বাংলা। আলিপুরদুয়ারের সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী বক্তৃতা রাখতে গিয়ে আজই বলেছেন, “অভিযোগ পেয়েছি বন সহায়ক পদে অনেক কারসাজি হয়েছে। তদন্ত হবে।” দল ছাড়ার দিনও যিনি কেঁদেছিলেন, মুখ্যমন্ত্রীকে ‘মাতৃসম’ বলেছিলেন, সেই রাজীবই এদিন হয়ে উঠলেন ‘মায়ের’ বিরুদ্ধেই বিস্ফোরক। বললেন, “আমি মুখ খুললে বটগাছ নড়ে যাবে।”
এর আগে কোনও দিনও নেত্রীর বিরুদ্ধে কিচ্ছুটি বলতে তাঁকে শোনা যায়নি। দলের বিরুদ্ধে তুলেছিলেন স্থাবকতার অভিযোগ। বুধবার গুড়াপের সভা থেকে তিনি বললেন। কার্যত বিস্ফোরক তথ্য ফাঁস করলেন। বন সহায়ক দফতর প্রসঙ্গেই বললেন, “অর্থ দফতরের অনুমোদন নিয়ে বন দফতরের নিয়োগ। বন সহায়ক দফতরের প্যানেল প্রকাশ করুন। বলি, প্যানেল বাতিল করুন। তাহলেই দুধ কা দুধ, পানি কা পানি হয়ে যাবে।” তারপরই বললেন,”আমি মুখ খুললে বট গাছ নড়ে যাবে। সমুদ্র উথাল পাতাল হয়ে যাবে।” এখানে বটগাছ কে, তা পরিস্কার রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কাছেও।
রাজীব বললেন, “শেষ আড়াই তিন বছরে কী কী কারণে অসন্তোষ তৈরি হল জানেন? আমি দল ছাড়ার তিন দিন আগে পর্যন্তও আমাকে ফোন করেছেন। বিভিন্ন নেতাকে দিয়ে আমাকে ফোন করেছেন। আমাকে বলা হয়েছিল, রাজীবকে ছাড়া যাবে না।” তাঁর কটাক্ষ, “মন্ত্রিত্ব ছাড়া পর্যন্ত মনে ছিল না কারসাজির কথা। কেন তখনই আমাকে দল থেকে তাড়ানো হয়নি।” তিনি পাল্টা প্রশ্ন তোলেন, “কীভাবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ হয় জানেন আপনারা?”
রাজীবের তৃণমূল-বিয়োগের কয়েকদিনের মধ্যেই তাঁরই নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজীব দল ছাড়লেও নেত্র্রীর প্রতি সৌজন্য বজায় রেখেছিলেন। সাম্প্রতিক অতীতে তৃণমূল-ত্যাগীদের কাউকেই নেত্রীর বিরুদ্ধে এভাবে ক্ষোভ উগরাতে দেখা যায়নি। রাজীবের সঙ্গেই বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন রুদ্রনীল, বৈশালী, রথীন চক্রবর্তীরা। তাঁরা দলের বিরুদ্ধেই ক্ষোভের কথা প্রকাশ্যে এনেছেন।
আরও পড়ুন: বন দফতরের নিয়োগে কারসাজির অভিযোগ তুলে মমতা বললেন, ‘তদন্ত হবে’
কিন্তু সরাসরি নিজেরই প্রাক্তন মন্ত্রীকে বিঁধতে ‘দুর্নীতি বাণ’ ব্যবহার করতে দেখা গেল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। পাল্টা শুনতে হল তাঁকেও। রাজীব বললেন, “আমি ভাবছিলাম এত কিছু বলব না। কিন্তু আপনি পেন্ডুলাম খুলেছেন, শুনতে তো হবেই।” রাজনীতির কুশীলবরা বলছেন, মমতা-রাজীবের সৌজন্য দেখানোর রাজনীতি ইতি বোধহয় ঘটল আজকের দুই সভাতেই।